পটুয়াখালীর বাউফলে ঋণ দেওয়ার নামে প্রায় দুই শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা পল্লী উন্নয়ন সংস্থা (পিইউএস) নামের একটি এনজিও। চলতি মাসের ১৯ জানুয়ারি পৌর শহরে একটি ভাড়া বাসায় কার্যক্রম শুরু করার সাত দিনের মাথায় লাপাত্তা হয়ে যায় কথিত এই এনজিও সংস্থার কর্মীরা।

বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে গ্রাহকরা ঋণের টাকা নিতে ওই অফিসের সামনে এসে জড়ো হচ্ছেন, যদিও অফিসটি তালাবদ্ধ।

ভুক্তভোগীরা জানান, সম্প্রতি পৌর শহরের টি অ্যান্ড টি সড়কে আবুল হোসেন হাজীর ভবনে  অফিস ভাড়া নেয় পল্লী উন্নয়ন সংস্থা নামের এনজিও। গত ১৯ জানুয়ারি থেকে ওই ভবনে  এনজিওর অফিস চালু করা হয়। মাঠপর্যায়ে গ্রাহক সংগ্রহ করার জন্য স্থানীয় এক নারী মাঠকর্মীও নিয়োগ দেয় তারা। পরে সহজ কিস্তি ও স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেয় কয়েক লাখ টাকা। গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) ঋণ বিতরণ করার সময় দেয় এনজিও সংশ্লিষ্টরা। তবে ওই দিন ঋণ নিতে এসে অফিস তালাবদ্ধ দেখতে পান গ্রাহকরা। এরপর থেকে অফিস তালাবদ্ধ রয়েছে। লাপাত্তা হয়ে গেছেন এক নারীসহ ওই দুই ব্যক্তি।

সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সরেজমিনে পৌর শহরের টি অ্যান্ড টি সড়কে আবুল হোসেন হাজীর ভবনে গিয়ে দেখা যায় ভবনের দ্বিতীয় তলায় পল্লী উন্নয়ন সংস্থা নামে সাইনবোর্ড টানানো রয়েছে। তালাবদ্ধ অফিস কক্ষের সামনে একাধিক ভুক্তভোগী দাঁড়িয়ে আছেন।

মো. আকাশ হাওলাদার নামের এক ভুক্তভোগী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি চায়ের দোকান করি। দোকানের সামনে এনজিও অফিস। তারা আমার দোকানে এসে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। আমি ব্যবসার জন্য এক লাখ টাকার ঋণ নিতে চাই। ঋণ পেতে তারা আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা জামানত হিসেবে নেন। গত বৃহস্পতিবার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন থেকেই দেখি অফিসে তালা।

রুজিনা নামের আরেক ভুক্তভোগী ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বামীর জন্য রিকশা কিনতে ৪০ হাজার টাকা লোন নিতে চার হাজার টাকা জমা দিয়েছি। রোববার লোন দেওয়ার কথা। কিন্তু এসে দেখি অফিস বন্ধ। তাদের ফোনও বন্ধ। আমার মতো প্রায় দুই শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে ঋণ দেওয়ার কথা বলে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওই এনজিওর কর্মীরা।

এনজিও অফিসের ভবনের মালিক আবুল হোসেন হাজীর সঙ্গেও প্রতারণা করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ১৯ জানুয়ারি আমার বাসায় এনজিও অফিস ভাড়া নিতে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার মো. শাহিন নামের এক ব্যক্তি যোগাযোগ করেন। চার হাজার টাকায় ভাড়া চূড়ান্ত করা হয়। ওই দিনই তারা বাসায় উঠেন। পহেলা ফেব্রুয়ারি প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে চুক্তিপত্র করার কথা  ছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাস আসার আগেই নিখোঁজ হয়ে যান ওই শাহিন।

মাঠ থেকে গ্রাহক সংগ্রহ করার জন্য মাসিক বেতনে পৌর শহরের দাশপাড়া গ্রামের বাবুল হাওলাদারের মেয়ে মোসা. রুবিনা বেগমকে মাঠকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেয় কথিত পল্লী উন্নয়ন সংস্থাটি। এ ছাড়া কয়েকজন দালালও গ্রাহক সংগ্রহে মাঠপর্যায়ে কাজ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এনজিও প্রধান শাহিন ও তার সহযোগী হিসেবে পটুয়াখালী শহরের বাসিন্দা পরিচয় দেওয়া পারভীন গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেন। দাশপাড়া ইউনিয়নের খেজুরবাড়িয়া, পৌর শহরের ৯নং ওয়ার্ড, দাশপাড়ার কাঁঠালবাড়িয়া, কালাইয়া ও বড় ডালিমাসহ ৬ স্থানে অস্থায়ী কেন্দ্র বানিয়ে প্রায় দুই শতাধিক গ্রাহক সংগ্রহ করেন তারা। সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। ঋণ নিতে দুই শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন প্রায় পাঁচ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাঠকর্মী মোসা. রুবিনা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাকে ১২ হাজার টাকা মাসিক বেতনে নিয়োগ দেন। আমি আমার এলাকার কিছু মানুষের কাছে ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব দিই। সদস্য ফরমের জন্য ১০০ টাকা করে নিয়েছি। আর ঋণ নেওয়ার জন্য টাকা নিয়েছেন এনজিও প্রধান শাহিন ও তার সহযোগী পারভীন।

শাহিন ও পারভীনের বক্তব্য জানতে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা বন্ধ থাকায় কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বশির গাজী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমজেইউ