সিলেটের আলোচিত কিশোরী হাফেজাকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও জরিমানা দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) কিশোরী হাফেজা হত্যাকাণ্ডের ১৫ বছর পর মামলার রায়ে চার আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মিয়াজী শহিদুল আলম। 

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার সুবহানের ছেলে মো. খোকন (৩৬), আব্দুস সালামের ছেলে মো. ফয়সল (৪১), মো. মঈন উদ্দিনের ছেলে মো. আনাই মিয়া (৩৭) এবং একই গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে মো. আনোয়ার হোসেন (৪১)। ঘটনার সময় তাদের খোকনের বয়স ছিল ২০, ফয়সল (২৫), আনাই (২১) ও আনোয়ারের বয়স ২৫ বছর ছিল।

এদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন গ্রেপ্তাতারের পর আদালতে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। রায় ঘোষণাকালে তিনি পলাতক থাকলেও অন্য তিন আসামি হাজতে রয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ১ এপ্রিল ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ৪টি গরু চরাতে মাঠে যান আবুল কাশেমের মেয়ে হাফেজা খাতুন। এরপর বাড়িতে তার ছোট ভাই ও চারটি গরু বাড়ি ফিরলেও হাফেজা বাড়ি ফিরেননি। এরপর স্বজনরা তাকে রাতে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাননি। ঘটনার পরদিন সকাল সাড়ে ১০টায় বাঁশ বাগানের টিলার ওপর একটি গর্তের মধ্যে হাফেজার মৃতদেহ দেখতে পেয়ে পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে ঘটনাটি কোতোয়ালি থানায় জানানো হলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। এই ঘটনার পর নিহতের বাবা বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলাটি তদন্তাকালে চার কর্মকর্তার কেউই মামলার ক্লু উদঘাটন করতে না পেরে ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র দাখিল করলে আদালত সেটি আমলে না নিয়ে পুনরায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্তের দায়িত্ব দেন। এরপর সহকারী পুলিশ সুপার ওহিদুল ইসলাম আসামি আনোয়ারসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। ওই ঘটনায় আনোয়ার আদালতে কিশোরীকে ধর্ষণ ও হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। 

আদালত সূত্র আরও জানায়, ওই সময় আসামিরা হাফেজার বড় বোনকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। তার পরিবার সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় অভিযুক্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে হাফেজাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। মামলায় আসামির জবানবন্দি ও ১৫ সাক্ষির সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতের বিচারক দীর্ঘ ১৫ বছর পর চাঞ্চল্যকর মামলার এ রায় ঘোষণা করেন।

মাসুদ আহমদ রনি/এমএএস