চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় অবৈধভাবে মাটি কাটার অভিযোগে অভিযান চালান উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কার্যালয় ঘেরাও করেছেন ট্রাক্টর চালকেরা।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে উপজেলার ট্রাক্টরচালকেরা একজোট হয়ে ট্রাক্টর নিয়ে ইউএনও অফিস ঘেরাও করেন। এসময় তারা ট্রাক্টর ভাঙচুরের প্রতিবাদ জানান। পরে ইউএনওর সঙ্গে সাক্ষাত শেষে তারা চলে যান।

এর আগে গত সোমবার (২৯ জানুয়ারি) আলমডাঙ্গা উপজেলার কেদারনগর মাঠে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগে অভিযান চালান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা নাহিদ। এসময় তিনি মোবাইল কোর্ট বসিয়ে দুই ট্রাক্টরচালককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। তবে ট্রাক্টরচালকদের অভিযোগ ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারকের নির্দেশে তাদের চারটি ট্রাক্টরের হেডলাইটসহ একটি ভেকু এক্সাভেটর ভাঙচুর করা হয়।

ইউএনও অফিসের সামনে অবস্থান নেওয়া ভুক্তভোগী ট্রাক্টর মালিক রঞ্জু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনার দিন আমার চালক মাটি বহন করছিল। এসময় এসিল্যান্ড ম্যাডামের আসা দেখে আমার চালকসহ সেখানে সবাই ভয়ে পালিয়ে যান। ম্যাডাম একজনকে দিয়ে আমাকে ফোন করলে আমি জানাই, আমি কোনো অবৈধ কাজ করছি না। এক জায়গা থেকে মাটি বহন করে অন্য জায়গায় দিচ্ছি। এর ১৫ মিনিট পর শুনতে পারি আমাদের গাড়ি ভাঙচুর করছে। একটা গাড়ি মাঠে চাষ করছিল সেটাও ভেঙে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ট্রাক্টরটা ভর্তুকির। ১৮ লাখ টাকা গাড়িটার মূল্য। নগদ সাত লাখ টাকা জমা দিয়ে গাড়িটা নিয়েছি। সরকার আমাকে এই সুযোগটা দিয়েছে। গাড়িটা চালিয়েই তো টাকাটা দিতে হবে। এখন গাড়িটা ভাঙচুর করল, আমরা কিভাবে সরকারকে টাকা পরিশোধ করব?

ট্রাক্টরচালক শাহাবুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সাধারণ শ্রমিক, ট্রাক্টরে মাটি টেনে খাই। ঘটনার দিন আমরা যখন কর্মসংস্থানে কর্মের জন্য গেছি ওইদিন আমাদের না বলে অতর্কিতভাবে এসিল্যান্ড ম্যাডামসহ আমাদেরকে তাড়া করলে আমরা জানের ভয়ে পালিয়ে যায়। যিনি মাটি কাটছিলেন তিনিও আমাদের বলছে, আপনাদের এখানে থাকার প্রয়োজন নেই, দূরে গিয়ে দাঁড়ান। যেটা সমাধান হয় সেটা আমরা করব। কিন্তু এর মাঝখানে ম্যাডামের নির্দেশে তারই অফিসের সেলিম নামে একজনকে দিয়ে গাড়িগুলো ভাঙা হয়। সেখানে চারটি ট্রাক্টর ও একটি ভেকু এক্সাভেটর ভাঙচুর করা হয়েছে।

আপনারা ইউএনও অফিসে কেন আসলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের গাড়িগুলো যে ভাঙছে আমরা তো কর্ম করে খাই। এখন গাড়িগুলো যদি বন্ধ করে দেয় তাহলে ইউএনও ম্যাডাম আমাদের একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিক। আমরা সেটা করে খাব। আমরা এই গাড়ি আর চালাব না। আর যদি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে দেন তাহলে ম্যাডাম আমাদের আশ্বস্ত করুক। কাজ করে খাওয়াটা তো আর অপরাধ না। যদি অপরাধ হয় তাহলে আমরা অপরাধ করছি।

আলমডাঙ্গা উপজেলা ভূমি অফিসের সার্টিফিকেট পেশকার মো. আনিছুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত পরশু অবৈধভাবে মাটি কাটার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুজনকে ১৫ হাজার করে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে সেখানে কোনো গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে জানতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজওয়ানা নাহিদের নাম্বারে একাধিক কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্নিগ্ধা দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোনো ঘেরাও না। ওনারা আসছিলেন, আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য। অবৈধভাবে মাটি কাটার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। ওইখানে ওনাদের গাড়িগুলো আটকিয়ে জরিমানা করা হয়। এসব বিষয়ে ওনারা কথা বলতে এসে ছিলেন।

গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ তো আসলে যে কেউই করতেই পারে। আমি যখন একটি গাড়ি আটকাবো, ড্রাইভার যখন গাড়ি ফেলে চলে যাবে, মোবাইল কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট ৩-৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করবে? তখন ড্রাইভারকে যদি আমার আনতে হয়, স্বাভাবিকভাবে আমাকে একটু ভয় দেখাতে হবে তাকে। ভয় দেখানোর জন্য হয়ত একটা-দুইটা গাড়ির হেট লাইট ভাঙা হয়েছে, এটা এমন আহামরি কিছু না, যে অভিযোগ করার মতো। ওনারা আসছিলেন, তারা গরিব মানুষ, তাদের যাতে জরিমানা করা না হয়। তারা তো সরাসরি মাটি কাটার সাথে জড়িত থাকে না। আমার পক্ষ থেকে তাদের যা বলে দেয়ার, তা বলে দেয়া হয়েছে।’

ট্রাক্টরচালকদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তাদেরকে বলেছি, যখন মোবাইল কোর্ট আসবে, তখন তাদের গাড়ির সাথে থাকতে হবে। গাড়ি ফেলে রেখে চলে গেলে, সেক্ষেত্রে আমরা গাড়ি সিস করে নিয়ে আসব বা আইনগত যে ব্যবস্থা আছে সেটা নিতে হবে। আইন তো মানবিক দিক বিবেচনা করে না। আমরা তাদের বলেছি গাড়ি আটকানো হলেও আপনার গাড়ির সাথেই থাকবেন। আপনাদের বক্তব্য বলবেন, সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।’

আফজালুল হক/আরকে