সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ভাগনের হাতে খুন হওয়া বিকাশ ও তার স্ত্রী-কন্যার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাদের গ্রামের বাড়ি তাড়াশ পৌরসভার শোলাপাড়া অনিবার্ণ মহাশ্মশানে তাদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। 

স্থানীয় কয়েক হাজার মানুষ তাদের শেষবার দেখতে ও শেষকৃত্যে অংশ নিতে বিকাশের গ্রামের বাড়িতে ও শ্মশানে ছুটে যান। ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের পর মরদেহ শ্মশানে নেওয়া হলে তাদের মরদেহে মুখাগ্নি করেন (চিতায় আগুন দেন) নিহত বিকাশের ভাতিজা অঙ্কণ সরকার।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার গোস্বামী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মরদেহ আসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তাদের শেষবারের মতো একবার দেখতে ও শেষকৃত্যে অংশ নিতে ছুটে যান। এলাকার মানুষ ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে সবাই ছুটে আসেন তাদের শেষ বিদায় দিতে।

তিনি বলেন, এর আগে বুধবার বিকেলে মরদেহগুলো এসে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজন ও সাধারণ মানুষদের কান্না ও আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাদের শেষকৃত্য (চিতায় আগুন দেওয়া) শুরু হয়ে রাত প্রায় সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলে।

নিহত বিকাশের বড়ভাই তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রকাশ সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা যে কী অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি এটা বলার মতো না। তাদের মরদেহ এসে পৌঁছালে প্রথমে গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। এরপর ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করে নেওয়া হয় শ্মশানে। সেখানকার রীতিনীতি পালন করে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। এসময় তাদের মুখাগ্নি করে আমার ছেলে অঙ্কণ সরকার। সে-ই যাবতীয় ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করবে। 

তাড়াশ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নূরে আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে শহীদ এম মুনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে নিহতদের মরদেহ আসলে বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও থানা পুলিশের মাধ্যমে মরদেহগুলো তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর সন্ধ্যায় চালা মাগুরা মহাশ্মশানে (শোলাপাড়া অনিবার্ণ মহাশ্মশান) তাদের মরদেহের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। 

প্রসঙ্গত,  গত সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ৩টার দিকে তাড়াশ পৌর শহরের বারোয়ারি বটতলা এলাকার কালিচরণ সরকারের ছেলে বিকাশ সরকার, তার স্ত্রী স্বর্ণা রানি সরকার (৪০) ও মেয়ে তাড়াশ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী পারমিতা সরকার তুষির (১৫) গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মন্ডল জানান, ব্যবসায়িক লেনদেনের জেরে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে মামার বাসায় যান ভাগনে রাজীব। এরপর একে একে মামাতো বোন, মামি ও মামাকে হত্যা করেন তিনি। গ্রেপ্তারের পরে পুলিশের কাছে হত্যার পরিকল্পনা ও হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন রাজীব। 

নিহত বিকাশ সরকার হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তাড়াশ উপজেলা শাখার কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। বিকাশেরা দুই ভাই ও পাঁচ বোন। বিকাশ সবার ছোট ছিলেন। তাদের পরিবারের এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুরো তাড়াশ জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। 

শুভ কুমার ঘোষ/আরকে