নওগাঁ নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্ন শেষ হয়েছে। গত বছরের আগস্টে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে শুরু হওয়া এই ইন্টার্ন শেষ হয় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি।

ইন্টার্নশিপের সময়ে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৬ হাজার টাকা ভাতা পাওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসেবে নওগাঁ নার্সিং ইনস্টিটিউটের ৭৫ জন শিক্ষার্থীর গত ৬ মাসে ভাতা পাওয়ার কথা প্রায় ২২ লাখ টাকা। তবে ইন্টার্ন শেষ হওয়ার পরেও এখনও শিক্ষার্থীদের পাওনা পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ।

অবশ্য এ ভাতা আদায়ের দাবিতে গত বছরের অক্টোবর মাসে সারাদেশে একযোগে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল ইন্টার্নরত ডিপ্লোমা নার্সরা। নওগাঁ জেলায় এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে ডিপ্লোমা ইন্টার্ন নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন। পালন করেছে সপ্তাহব্যাপী কর্মবিরতীও।

ওই মাসে ঢাকায় গিয়ে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর ঘেরাও কর্মসূচি পালনসহ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনেও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সংগঠনটি। এরপর রোগীদের ভোগান্তি বিবেচনায় সাময়িক আশ্বাস দিয়ে প্রত্যেককে ইন্টার্নরত হাসপাতালে পাঠায় কর্তৃপক্ষ। তবে কেউ কথা রাখেনি। শেষ পর্যন্ত আন্দোলন করেও নিজেদের নায্য ইন্টার্ন ভাতা আদায়ে প্রায় ব্যর্থ হতে হয়েছে ডিপ্লোমা নার্সদের। বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে হতাশায় সময় পার করছেন নওগাঁ নার্সিং ইনস্টিটিউটের ৭৫ জন শিক্ষার্থী।

সদ্য ইন্টার্ন শেষ হওয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী নাফিসা তাবাসসুম অবনী বলেন, ইন্টার্ন চলাকালীন হাসপাতালে কমর্রত অন্য নার্সদের মতোই আমাদেরকেও দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করতে হতো। দীর্ঘ এ শ্রমের বিনিময়ে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৬ হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার কথা। লকবুকে স্পষ্টভাবে এটি উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও সেই ভাতা থেকে আমাদের অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ইন্টার্ন শেষ হলেও এখনও সেই টাকা আমরা পাইনি।

ইসতিয়াক আহম্মেদ, সিফাত হোসেন, তানজিলা, হ্যাপী খাতুন, রিনা আক্তারসহ নার্সিং ইনস্টিটিউটের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে যারা পড়তে আসেন তাদের অনেকেই নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে আসা। ইন্টার্ন করা অবস্থায় এখানে থাকা-খাওয়া মিলিয়ে প্রতি মাসে অন্তত ৭-৯ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সেই তুলনায় লকবুকে নির্ধারিত ইন্টার্ন ভাতা খুবই সামান্য। এরপরেও সেই ভাতা পরিশোধে উদাসীন কর্তৃপক্ষ। নায্য দাবি আদায়ে আমাদের রাজপথে নামতে হয়েছিল। নার্সিংয়ের ইতিহাসে এটা খুবই দুঃখজনক একটি অধ্যায়। ইন্টার্ন শেষ হয়েছে। তাই দ্রুত ভাতা পরিশোধ না করলে শিগগিরই নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে।

ডিপ্লোমা ইন্টার্ন নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের নওগাঁ নার্সিং ইনস্টিটিউট শাখার সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত অক্টোবর মাসের কর্মবিরতিতে অনেক রোগী দুর্ভোগে পড়েছিলেন। তাদের কথা চিন্তা করে রাজপথ থেকে আমরা আবারও হাসপাতালে ফিরেছিলাম। সংশ্লিষ্টরা ভাতা দ্রুত পরিশোধের আশ্বাসও দিয়েছিল। তবে সেই আশ্বাস ছিল শুধু মুখেই। ইন্টার্ন শেষ হওয়ার পরেও ভাতা না পাওয়ায় এখন আমরা অনেকেই হতাশায় ভুগছি। এর সঠিক সমাধান না হলে আগামীতে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইন্টার্ন নার্সদের কর্মবিরতির পর সরকারের আশ্বাসে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। এরপরই নার্সেস অধিদপ্তর ইন্টার্ন নার্সদের তালিকা সংগ্রহ করে। যেহেতু ইন্টার্ন নার্সদের দাবি যৌক্তিক, তাই সরকার অবশ্যই সেটি বিবেচনায় নেবে বলে আমি মনে করি।

আরমান হোসেন রুমন/টিএম