সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত পরীক্ষা। এক ঘণ্টা সময়ের পরীক্ষার সময় প্রায় শেষের দিকে। এসময়ই হঠাৎ করে এক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ভেসে আসে শব্দ। মনে হচ্ছে- মোবাইলে কেউ শব্দ বাড়িয়ে কথা বলছে।

কয়েকজন পরীক্ষার্থী সেটি লক্ষ্য করে অভিযোগ দেন কক্ষ পরিদর্শকের কাছে। পরে ওই পরীক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় অফিস কক্ষে। তল্লাশি করা হয় শরীর। পাওয়া যায় ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস। আটক করা হয় তাকে।

এমন ভাবে কৌশলে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জয়পুরহাট সরকারি কলেজের একাডেমিক ভবন কেন্দ্রে আটক হয়েছেন মোছা. সানজিদা বেগম নামের এক পরীক্ষার্থী। শুধু সানজিদাই নয়, ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহারসহ অসুদপায় অবলম্বন করে পরীক্ষা দিতে আসা আরও দুজন পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।

শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে পরীক্ষা চলাকালীন সময় তাদের আটক করা হয়। তারা হলেন- জেলার আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর এলাকার মোছা. সানজিদা বেগম, পাঁচবিবি উপজেলার বাঁশখুর গ্রামের মাহমুদুল হাসান ও একই উপজেলার তাজপুর গ্রামের মোস্তাকিম হোসাইন। তাদের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা আইনে একটি মামলা দায়ের হয়েছে।

সংশিষ্টরা জানান, জেলার সদর উপজেলার ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১২টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৮ হাজার ২২৩ জন। এর মধ্যে জয়পুরহাট সরকারি কলেজের একাডেমিক ভবন কেন্দ্র ছিল মহিলাদের। ওই কেন্দ্রে পরীক্ষার শেষ সময়ের দিকে পরীক্ষার্থী মোছা. সানজিদা বেগমের কাছে থাকা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসসহ তাকে আটক করা হয়।

এছাড়া খঞ্জনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে মাহমুদুল হাসান নামের এক পরীক্ষার্থী ও জয়পুরহাট সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসায় মোস্তাকিম হোসাইন নামের আরেক পরীক্ষার্থীও একই অসুদপায় অবলম্বন করেন। আটক ওই তিনজনকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্র সচিবদের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটরা।

জয়পুরহাট সরকারি কলেজের একাডেমিক ভবন কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্লাহ্ আল মামুন। তিনি বলেন, একটি কক্ষে হঠাৎ করে এক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে শব্দ ভেসে আসে। মনে হচ্ছে মোবাইলে কেউ শব্দ বাড়িয়ে কথা বলছে। কয়েকজন পরীক্ষার্থী সেটি লক্ষ্য করে কক্ষ পরিদর্শককে জানান। তিনি ওই পরীক্ষার্থীকে নারী পুলিশ দিয়ে ধরে অফিস কক্ষে নিয়ে যায়। পরে নারী পুলিশ তার দেহ তল্লাশি করে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস পায়।

খঞ্জনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট উজ্জ্বল বাইন বলেন, মাহমুদুল হাসান নামের ওই পরীক্ষার্থীর কাছে মোবাইল ছিল। পরীক্ষার শেষ সময়ের দিকে সেটি লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া ওই পরীক্ষার্থী তার দুই পয়ের হাঁটুতে অ্যাঙ্কলেট ছিল। তার ভেতরে নকল ছিল।

জয়পুরহাট সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ্-আল-মাহবুব বলেন, পরীক্ষার শেষ সময়ের দিকে পরীক্ষার্থীরা কক্ষ পরিদর্শককে মোস্তাকিমের কাছে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের বিষয়ে জানিয়ে দেন। কক্ষ পরিদর্শক গিয়ে তার পকেটে একটি ব্যাটারির মতো ডিভাইস পান। এরপর আমাকে ও কেন্দ্র সচিবকে অবগত করলে তাকে অফিস কক্ষে নেওয়া হয়। আসার পথে ওই শিক্ষার্থীর কানে থাকা ইয়ারফোন ফেলে দেন। সেটি খুঁজে পাওয়া যায়। অফিস কক্ষে এনে তাকে তল্লাশি করলে বুকে লাগানো একটি কার্ড পাওয়া যায়। এছাড়া আরও কিছু ডিভাইস পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোফাজ্জল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহারসহ অসুদপায় অবলম্বন করে পরীক্ষা দিতে আসা তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে জয়পুরহাট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’

জয়পুরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, আটক তিনজনের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা আইনে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার বাদি হয়েছেন সদর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর শাহাদুর রহমান চৌধুরী। আগামীকাল তাদের আদালতে পাঠানো হবে।

চম্পক কুমার/টিএম