নারায়ণগঞ্জ শহরের হকার সমস্যা ও যানজট নিরসনে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত এই গোলটেবিল বৈঠকে শহরের দীর্ঘদিনের এই সমস্যা নিরসনে একমত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। 

তাদের পাশাপাশি সমস্যা নিরসনে অচিরেই পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হক, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আমির খসরু। 

নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব ভবনের ৭ম তলায় আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্যে শুরুতেই মেয়র আইভী বলেন, আমরা এখানে যারা উপস্থিত হয়েছি, তারা সবাই মিলে কাজ করলে জেলায় কোনো সমস্যা থাকবে না। শহরের যত্রতত্র হকার থাকতে পারবে না, এটা আজকে আমার বড় দুই ভাই (সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান) আজকে আমাকে কথা দিয়ে যেতে হবে। নারায়ণগঞ্জ শহর বাসের নগরীতে পরিণত হয়েছে। মৌমিতা পরিবহনের বাসগুলো প্রচণ্ড দাপটের সাথে রাস্তা দখল করে বসে থাকে। ট্রাফিক পুলিশের কাজই হলো যানজট নিরসন করা৷ এটা তো তারা মেয়র বা এমপিদের প্রতি চাপিয়ে দিতে পারে না। 

তিনি বলেন, আমি বারবার ট্রাফিক পুলিশকে অবৈধ স্ট্যান্ডের তালিকা দিই, কিন্তু সেগুলো উচ্ছেদ হয় না। ৬০০ হকারকে পুনর্বাসন করেছি আমরা। দীর্ঘদিন ধরে আমরা এসব নিয়ে কথা বলছি। সেই ৬০০ হকার দোকান বিক্রি করে এখন রাস্তায়। পুরো শহর হকারদের দখলে। আমি কোনো অজুহাত শুনতে চাই না। এসপি বললেন, তিনি যানজটের ভয়ে নিতাইগঞ্জে সরকারি বরাদ্দের বাসায় থাকেন না। তাহলে আমরা যারা নারায়ণগঞ্জে বসবাস করি, তারা কী করব। সিটি কর্পোরেশনের কী করতে হবে আপনারা আমাকে জানান। প্রশাসন মেয়রের কথা শোনে না সারা বাংলাদেশেই। তারা এমপিদের কথা শোনেন। 

সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেন, প্রশাসনকে প্রশাসনের মতো করেই চলতে হবে। হকারদের উঠিয়ে দিলে এরা কোথায় যাবে, কোথায় ঘুমাবে এই চিন্তা প্রশাসনের করলে হবে না। কোনো না কোনোভাবে তাদের রিজিকের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আমাদের মধ্যে স্বজনপ্রীতিটা বেশি আছে। কঠোর থেকে কঠোরতম হতে হবে। গত ১০ বছরের চেষ্টার পরে আমরা একত্রিত হতে পেরেছি। আজকে এখান থেকে বসেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব কী কী করতে হবে। প্রশাসনকে বলতে চাই, স্ট্যান্ডগুলোকে খালি করেন, এরপর নোটিশ দেন যে ফুটপাতে কোনো দোকান থাকবে না। শহরে কয়টি বাস আছে, টেম্পুগুলো কার, স্ট্যান্ড কে চালায়, সেই হিসেব আমাকে দিন। মেয়র চাচ্ছেন রাস্তাগুলো আগে খালি করা হোক। ইনশাআল্লাহ নারায়ণগঞ্জের মানুষ অত্যন্ত শান্তিতে থাকবে, কথা দিচ্ছি৷ রোজার আগেই রাস্তাঘাট খালি হয়ে যাবে। এখানে শামীম ওসমান সাহেব আছেন। উনার শক্তি আছে, কর্মী বাহিনী আছে, উনি চাইলেই সম্ভব। আমরাও তাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করব৷ 

বৈঠকের শেষ পর্যায়ে এসে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, এই নারায়ণগঞ্জ আমাদের, বাংলাদেশ আমাদের। আমরা সব জায়গা নিয়েই কথা বলব। ভালো কাজ আমরা সবাই মিলে করব। পুরো শহর হকার মুক্ত করুন। কবে করবেন জানান। মেয়র আবেদন করলে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট দেবে। স্পষ্টভাবে বলতে চাই, হকার উচ্ছেদ ও যানজট নিরসনে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর প্রতি আমার শতভাগ সমর্থন থাকবে।

যানজটের কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিএনজি ও অটোরিকশা চলছে। কিন্তু এই অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জের কারণে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নষ্ট হয়। এরা কিন্তু বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছে না। তারা বিল না দিয়ে চলছে, গাড়ি চালাচ্ছে। ওরা দয়ায় চলছে না, কেউ না কেউ টাকা খাচ্ছে তাদের কাছ থেকে। বিআরটিএ’র পারমিশন ছাড়া কোনো গাড়ি চলতে দেওয়া উচিত না। বিআরটিএ প্রয়োজনের অতিরিক্ত গাড়ির পারমিশন দেবে না। আর সেক্ষেত্রে আমাদের নারায়ণগঞ্জের পরিবহন ব্যবসায়ীদের আগে মূল্যায়ন করা উচিত। সিএনজি ও অটোরিকশার পারমিশন সিটি কর্পোরেশন দিলে কাল এর অযুহাতে সারাদেশে সবাই পারমিশন দেবে। এটা কেন সিটি করপোরেশন দেবে? এটা আপনাদের কাজ। স্ট্যান্ড কোথায় হবে, দরকার থাকলে নির্দিষ্ট জায়গায় বসবে। এরা কিন্তু ফ্রি বসে না। তারা কাউকে না কাউকে টাকা দেয়।

সমস্যার সমাধান করতে হলে সবাইকে কাজ করতে হবে জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, আমার তরফ থেকে কোনো বাধা আসবে না, আপনারা নিশ্চিত থাকেন। তবে নিয়মটা সবার জন্য হতে হবে। মীর জুমলা সড়ক বন্ধ। হাইস্কুলের সড়কটা খালি থাকলে সেটা মীর জুমলা সড়ক হয়ে বাসস্ট্যান্ডে চলে যাবে। ছোট একটা সড়কে ১৬ বার ট্রেন চললে পুলিশ কেন ফেরেশতাদের জন্যেও যানজট কমানো সম্ভব না। আমরা রেল মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বলতে পারি ট্রেন চাষাঢ়ায় থামুক। শুধু ইঞ্জিন ঘুরিয়ে নিয়ে আসুন। এতে বেশি সময় লাগবে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-পুরাতন সড়ক থেকে ফ্লাইওভার দিয়ে এখানে টাচ করিয়ে দিতে পারি। তাহলে সড়কে গাড়ি চলছে এটা টেরই পাবেন না। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরোনো রোডটা (পাগলা-পোস্তগোলা সড়ক) আমার এলাকায়। এই রাস্তা একশত বিশ ফিট চওড়া হবে।এটা দেশের প্রথম আরসিসি রাস্তা হবে। খুব দ্রুত এটার কাজ হবে। সিদ্ধিরগঞ্জে একটা সমস্যা ইপিজেড ছুটি হলে রাস্তাটা অকেজো হয়ে যায়। ফুটওভার হলে সেই রাস্তার সমস্যাটা সমাধান হয়ে যাবে। আমি আর আইভী একটা কাগজে সই করে পাঠালেও এটা (সমাধান) হয়ে যাবে।

জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হক বলেন, আগামীকাল থেকেই শহরে হকার উচ্ছেদ ও অবৈধ যান, স্ট্যান্ড উচ্ছেদে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। সরকার অনেক শক্তিশালী, এটি সবাইকে মনে রাখতে হবে। এখানে যে সমস্যাগুলো উঠে এসেছে, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এগুলোর সাথে আমি পরিচিত। প্রেস ক্লাবকে ধন্যবাদ এ রকম সুন্দর একটি আয়োজনের জন্য। 

বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দীপু, সহসভাপতি বিল্লাল হোসেন রবিন, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন, সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুস সালাম, আবু সাউদ মাসুদ, প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান সাদিক, সদস্য আফজাল হোসেন পন্টি, ডিবিসি নিউজের জেলা প্রতিনিধি রাজু আহমেদ, নাগরিক টিভির প্রতিনিধি কামাল হোসেনসহ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরবৃন্দ, বিভিন্ন থানার অফিসার ইনচার্জ ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

শিপন সিকদার/আরএআর