বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) রাজশাহী অফিসে দালাল ছাড়া যেন কাজই হয় না। স্বাভাবিক নিয়মে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন করলে মাসের পর মাস ঘুরতে হয়। কয়েক বছরেও মেলে না ড্রাইভিং লাইসেন্স। ফলে বিভিন্ন মাধ্যম (দালাল) ধরতে হয় লাইসেন্স প্রত্যাশীদের। গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা। সরেজমিনে বিআরটিএর রাজশাহী অফিস ঘুরে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

গত সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বিআরটিএতে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রত্যাশীদের পরীক্ষার দিন ছিল। ফলে সকাল থেকে ভিড় ছিল বিআরটিএতে। এদিন লাইসেন্স ছাড়াও অন্যান্য সেবা নিতে আসেন গ্রাহকরা। সকাল সাড়ে ১০টায় বিআরটিএর ১২টি কাউন্টারের মধ্যে ৭ নম্বর এবং ১১ নম্বর কাউন্টারে ছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বাকি কাউন্টারগুলোতে সেবাপ্রতাশীরা থাকলেও ছিলেন না কেউ। তবে বিআরটিএ অফিসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অন্তত ১০টি কম্পিউটারের দোকান। খোদ বিআরটিএর প্রাচীরের পাশেই এমন দোকান বসানো হয়েছে। এসব দোকানে লার্নারসহ পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের যাবতীয় কাজ করা হয়।

লাইসেন্সের কিছু কাগজপত্র নিয়ে কাউন্টারে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় যাত্রীবাহী বাসচালক আব্দুল মান্নানকে। তিনি এসেছেন মেয়দোত্তীর্ণ লাইসেন্স নবায়ন (রিনিউ) করতে। আব্দুল মান্নানের দাবি- এক বছর দুই বছর নয়, দীর্ঘ পাঁচ বছর ঘুরেও লাইসেন্স রিনিউ করতে পারেননি তিনি। যত বার বিআরটিএতে আসেন, ততবার মেয়াদ বাড়িয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। সেই মেয়াদ বাড়ানোর কাগজ দিয়ে বাস চালান। 

নগরীর বিনোদপুরের ধরমপুর এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব বাসচালক আব্দুল মান্নান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেয়াদ শেষের পরে পাঁচ বছরেও ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করা যায়নি। যদি নবায়ন হয়ে ঠিকঠাক সময়ে লাইসেন্স পেতাম তাহলে ওই লাইসেন্স এতদিনে মেয়াদ শেষ হয়ে আবার নবায়ন করতে দিতে হতো। লকডাউনেরও অনেক আগে আবেদন করেছিলাম। আগে এক বছর পর পর ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা লাগতো, সমস্যা হতো না। এখন ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা লাগে। তাও নবায়ন করতে অনেক সমস্যা।  
 
রাজশাহীর চারঘাট-বাঘা রুটের এই বাসচালক বলেন, আমাদের টার্মিনালে একজন লোক আছে। তাকে দিয়ে করাই। তাকে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা বেশি দিলে কাজ হয়ে যায়। বিআরটিএ অফিসে যা যা করার দরকার সব করে দেয় সে। নিজের কাজ বন্ধ করে একদিন বিআরটিএ অফিসে আসলে ১ হাজার টাকার বেশি লোকসান হয়। আবার ভোগান্তি আছে। তাই তাকে দিয়ে লাইসেন্স করাই। নবায়ন করতে দেওয়া ৫ বছর হয়ে গেছে। এর মধ্যে মামলা দেয়নি। তবে অন্তঃরুটে গেলে সমস্যা হয়।

তিনি বলেন, এখন তো লাইসেন্স করা প্রচুর ঝামেলা। আগে তো এতো ঝামেলা ছিল না। প্রথমে যখন লাইসেন্স করি, আমি বিআরটিএতে আসিনি। শুধু আড়াই হাজার টাকা দিয়েছি। লাইসেন্স হয়ে গেছে। এখন দুনিয়ার ঝামেলা, বহুত ঝামেলা। চোখের, অঙ্গুলের ছাপ দাও, রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করো। বহুত ঝামেলা, তখন এসব কিছু ছিল না। রিনিউ করতেও আসতাম না কোনো দিন। টাকা দিয়ে পাঠিয়ে দিতাম। রিনিউ হয়ে যেত।

লাইসেন্স প্রত্যাশী ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, লাইসেন্সের শুরুর ধাপ লার্নার। লার্নারে সরকারি ফি ৫১৬ টাকা। কিন্তু বিআরটিএর সামনে গড়ে ওঠা দোকানগুলোতে অনলাইনে লার্নার করতে দিতে হয় ৭০০ টাকা। আর অপেশাদার ও লাইট লাইসেন্সের সরকারি ফি ৪ হাজার ৬৩০ টাকা। লার্নারে দেওয়া তারিখ অনুযায়ী ফিঙ্গার দিতে হয়। সেই দিনই পরীক্ষা। পরীক্ষার আগেই দালাল বা কোনো মাধ্যমে পাকাপুক্ত যোগাযোগ থাকলে পাস। তার আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে দুইভাবে বসে লাইসেন্স প্রত্যাশীরা। যে সমস্ত লাইসেন্স প্রত্যাশী দালাল বা অন্য কোনো মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন তারা বসেন ব্রেঞ্চের ডানে। সরাসরি পরীক্ষায় যাওয়া লাইসেন্স প্রত্যাশীদের বসানো হয় ব্রেঞ্চের বামে।

শুধু তাই নয়, পরীক্ষা চলাকালে বিশেষ সুবিধার অংশ হিসেবে তাদের উত্তর বলেও দেওয়া হয়। ২০ মিনেটে ২০ নম্বরের পরীক্ষা শেষে ২ ঘণ্টা পরে আসে ফলাফল। এই ফলাফল অনলাইনে নয়, বলা হয় সরাসরি। তবে যারা অকৃতকার্য হয়েছেন শুধু তাদের নাম বলা হয় ফলাফলে। ডিজিটাল যুগে এমনভাবে ফল প্রকাশে কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশও করেন। তবে লাইসেন্স করতে হবেই, তাই প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলে না। 

পাস-ফেলের পালা শেষে লাগে চিকিৎসকের প্রত্যায়ন। এমন প্রত্যায়নের কাগজ পাওয়া যায় বিআরটিএর সামনের দোকানগুলোতে। সেখানে কাগজগুলো পূরণ করে নিয়ে যেতে হয় পাশের ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে মাত্র ২০০ টাকায় মেলে চিকিৎসকের প্রত্যায়নপত্র। হাসপাতালের কাউন্টারে ২০০ টাকা জমা দিলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান হাসপাতালের কর্মচারীরা। সেখানে চিকিৎসক কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই লাইসেন্স প্রত্যাশীকে জিজ্ঞাসা করেন- ‘আপনি চশমা ব্যবহার করেন?’ লাইসেন্স প্রত্যাশী না বললে তিনি সিল ও স্বাক্ষর দিয়ে প্রত্যায়নপত্র দিয়ে দেন। হয়ে গেলে চিকিৎসকের প্রত্যায়নপত্র। রাজশাহী বিআরটিএতে অধিকাংশ চিকিৎসকের প্রত্যায়নপত্র এই হাসপাতালের বলে ভুক্তভোগীরা জানান। 

বিষয়টি জানতে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফোন করা হলে আব্দুল মোমিন নামে এক ব্যক্তি রিসিভ করে বলেন, হাসপাতালের পরিচালক নেই। পরিচালকের মুঠোফোন নম্বর চাইলে তিনি বলেন, নম্বর দেওয়া নিষেধ আছে।  

রাজশাহী বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু হয়েছে ২ হাজার ৫৪টি। অপেশাদার ২০ হাজার ৪৯২টি। বিভিন্ন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ১৮ হাজার ৬৪৮টি। ২০২৩ সালে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু হয়েছে ৩ হাজার ৩৭৩টি। অপেশাদার ১২ হাজার ৮৩৮টি। বিভিন্ন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ৯ হাজার ৩৪৬টি।

রাজশাহী বিআরটিএতে বন্ধুর জন্য লাইসেন্স করাতে এসেছেন রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি এলাকার রবিউল ইসলাম রবি। তিনি পেশায় চিকিৎসক। সেখানে নগরীর ছোটবোনগ্রামের একজন লাইসেন্স প্রত্যাশীও ছিলেন। তাদের লাইসেন্স সংক্রান্ত পরীক্ষা ছিল সোমবার (২৯ জানুয়ারি)। পরীক্ষা শেষে বিআরটিএ অফিসের প্রধান ফটকের সামনে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন তারা।

কার পরীক্ষা কেমন হলো এমন কথোপকথনের একপর্যায়ে রবি বলেন, আপনারা ফেল হবেন না। তবে দুপুর একটা পর্যন্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে লাইসেন্সের জন্য। চিন্তার কোনো কারণ নেই। পরীক্ষার্থীদের দুই ভাগে ভাগ করেছে। যারা টাকা দিয়েছে তারা সবাই ডানে। আর যারা টাকা দেয়নি তারা বাসের সিরিয়ালে বসছে। তবে টাকা না দিলে ১০ বারের কেউ পাস করতে পারবে না। 

রবি বলেন, ভেতরে একজন পরিচিত লোক আছে। তাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছি। তার বাড়িতে তিন-চারবার গিয়েছেন বলে জানান তিনি।

চাঁপাই ট্রাভেলস নামে যাত্রীবাহী বাসের চালক মিজানুর রহমান বলেন, দালালের মাধ্যমে লাইসেন্স করছি। ১০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। নিজের সময় নাই। আর দালাল ছাড়া তো কোনো কাজই হয় না। আমি নিজে যদি আসি, তাহলে আমার মতো লোককে এলাউ করবে না। ওদের চলাফেরা রয়েছে। সমস্যা হবে না। তারা এক-দুই হাজার খাবে। আমরা বাসচালক সময় দিতে পারব না। আজকে (২৯ জানুয়ারি) এসেছি। আর আগে কাগজপত্র দিয়েছি। ওই (দালাল) কম্পিলিট করে দেবে। লার্নার দিয়েছে। সেই দিন এসেছি। আর আরেক দিন মেডিকেলে (রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) ডোপ টেস্ট করতে গেলাম। সেখানে তারা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কাগজ দিয়েছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো বলেন, কিছু হয়তো সুযোগ-সুবিধা চায় বা নেয়। অন্য জটিলতার মধ্যে সার্ভারের জটিলতা। একটা কোম্পানি কাজ শেষ না করে চলে যায়। সেই সময় কিছু মানুষের লাইসেন্স নিয়ে এক ধরনের সমস্যা রয়েছে। 

বিআরটিএতে লাইসেন্স করানোর বিষয়ে তিনি বলেন,  শ্রমিকরা তো সেইভাবে লেখাপড়া জানে না। তারা ঠিকঠাক বুঝে না। সারাদিন কাজ করবে না লাইসেন্সের পেছনে ছুটবে। তাই শ্রমিক ইউনিয়নের একজন এই কাজগুলো করে দেয়।

তবে লাইসেন্স করে দিতে বেশি আগ্রহী মোটরসাইকেল বিক্রির শোরুমগুলোও। তাদের গ্রহকের লাইসেন্স করে দিতে সুসম্পর্ক রয়েছে বিআরটিএর কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে। পবার নওহাটার মোটরসাইকেল শোরুম ‘লাকি মোটরস’। তারাও গ্রহকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও যানবাহনের লাইসেন্স করে থাকেন। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বিআরটিএতে কথা হয় মো. রানার সঙ্গে। 

লাকি মোটরস থেকে মোটরসাইকেল কেনা গ্রাহকদের যানবাহন ও চালকের লাইসেন্সের বিষয়টি দেখভাল করেন এই রানা। পরিচয় গোপন করে কথা হয় তার সঙ্গে। রানা বলেন, নিজে নিজে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে গেলে ঝামেলা হয়। আপনার তো লাইসেন্সের বিষয়ে জানা নেই। নিজে নিজে লাইসেন্স করলে দুই-একশ টাকা কম লাগে। কিন্তু ঘুরতে হবে বেশি। আসতে হবে সময় মতো। মোটরসাইকেল শোরুমে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে হলে অষ্টম শ্রেণি পাসের সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিতে হবে। এক ঘণ্টার মধ্যে লার্নার বের করে দেব। পরীক্ষার দিনে শুধু এসে পরীক্ষা দেবেন।

টাকা-পয়সার বিষয়ে তিনি বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ব্যাংকে জমা দিতে হবে ৪ হাজার ৬১০ টাকা। আর লার্নারের ৫২৫ টাকা। এছাড়া শোরুমের কিছু খরচ আছে, বিআরটিএর কিছু খরচ আছে। শোরুমে সব মিলে ১০ হাজার টাকা লাগবে। আগে পরীক্ষা নিত। পরে ফিঙ্গার দিতে হতো। কিন্তু এখন আগে ফিঙ্গার পরে পরীক্ষা। এছাড়া লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা একইদিনে হয়। আমরা অনলাইন থেকে প্রেমেন্ট দিয়ে দেব। কার্ড আপনার বাসায় পৌঁছে যাবে। আর ফেল হলে টাকা ফেরত। আমরা যদি কোনো কারণে পাস করাতে না পারি তাহলে টাকা ফেরত।

বিষয়টি নিয়ে পবার নওহাটার লাকি মোটরসের বিক্রেতা মো. নান্নু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা শুধু গাড়ি (মোটরসাইকেল) বিক্রি করি। তবে কেউ গাড়ির কাগজ ও লাইসেন্সের জন্য বললে কাগজপত্র রেডি করে দেই। 

এসবের পরও রাকিবুল ও সাইফুল নামে দুইজনকে পাওয়া গেছে, যারা কাউকে কোনো টাকা না দিয়ে লাইসেন্স করছেন বিআরটিএ থেকে। তারা বলেন, যতদিন ঘুরতে হয় ঘুরব। তবুও কাউকে অতিরিক্ত টাকা দেব না। লার্নার শেষে ফিঙ্গার দিয়ে লিখিত পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন। পরে মোটরসাইকেল চালিয়ে সেখানেও পাস করেছেন তারা।

ড্রাইভিং লাসেন্সের বিষয়ে রাকিবুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক দিন আগে লার্নার করেছিলাম। কিন্তু সেটা তারা বাদ দিয়ে দিয়েছে। ওই ডকুমেন্ট নাকি অন্য কোনো কোম্পানির কাছে ছিল। তারা পালিয়ে গেছে। এমন সমস্যা শুধু আমার নয়, অনেকের বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তাই নতুন করে আবার লার্নার করে লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দিয়েছি। অনলাইন লাইসেন্সের কপি পেয়েছি। 

সম্প্রতি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ভোগান্তি ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এক ভুক্তভোগি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২২ জানুয়ারি রাজশাহী বিআরটিএতে হানা দেয় দুদক। বিষয়টি নিয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, দুদকে অভিযোগ গেছে যে এখানে ঘুষ না দিলে ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়া হয়। কিছু ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনের নথিপত্রও জব্দ করা হয়েছে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স করার বিষয়ে কয়েকজন দালালের সঙ্গে কথা হলে তারা গ্রাহক বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে তাদের মধ্যে দুই জনের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে কল করা হলে একজন এড়িয়ে গেলেও অপরজন বলেন, ‘আমি ব্যস্ত আছি। এখন আর কাজ করছি না। আপনি বিআরটিএতে আসেন কথা বলব।’  

অপরদিকে শুধু উপস্থিত হয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স পান রাজশাহী মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (এমটিটিসি) শিক্ষার্থীরা। যদিও বা তাদের গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন এমটিটিসির একজন শিক্ষক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ২০২২ সালের এমটিটিসির সাবেক শিক্ষার্থী জানান, তাকে প্রথমে লার্নারের জন্য দিতে হয়েছে ৫০০ টাকা। এরপরে ডাক্তারের পরীক্ষার কাগজের জন্য দিতে হয়েছে ২৫০ টাকা। আর বিআরটিএর লাইসেন্সের জন্য তাকে দিতে হয়েছে ৩ হাজার টাকা। আলাদাভাবে ব্যাংক ড্রাপটের জন্য আরও ২ হাজার ৭৭০ টাকা, ডোপ টেস্ট ও আই টেস্টের জন্য ১ হাজার টাকা।

এই শিক্ষার্থী বলেন, প্রথমে এমটিটিসিতে টাকা জমা না দেওয়ার কারণে সে পাস করতে পারেনি। একদিন পর টাকা জমা দিলে সে পাস করেছে। এমন ঘটনার শিকার তিনি ও অন্য শিফটের এক শিক্ষার্থী। তিনি এও বলেন, তাদের শুধু বিআরটিএতে গিয়ে উপস্থিত হয়ে চলে আসতে হয়।

এ বিষয়ে এমটিটিসির ইনস্ট্রাক্টর আরিফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা লাইসেন্স করিয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা-পয়সা নেই না। তবে শিক্ষার্থীদের লাইসেন্সের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া জানতে চাইলে আমরা তাদের বলে দেই।

রাজশাহী বিআরটিএর সহকারী পরিচালক শাহজামান হক  ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিআরটিএতে আমি দুই দিন হলে আসলাম। বিষয়গুলো দেখার চেষ্টা করব। এই ধরনের অভিযোগ যেন আর না আসে সেভাবে আমরা কাজ করার চেষ্টা করব।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোনো অভিযোগ থাকলে দেন। আমরা ব্যবস্থা নেব।

আরএআর