সর্বজনের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ড. মুহাম্মদ শামসুল হক ভূঁইয়া। রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ফরিদগঞ্জ উপজেলার পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।

এর আগে মুহাম্মদ শামসুল হক ভূঁইয়া গত শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ওই দিন ঢাকার ইস্কাটন গার্ডেন জামে মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রোববার সকাল ১০টায় চাঁদপুরে বাবুরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে, বেলা ১১টায় চাঁদপুর হাসান আলী হাই স্কুল মাঠে,  ফরিদগঞ্জে দুপুর ২টায় আবিদুর রেজা পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে, বিকেল ৩টায় গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজ মাঠে ও সর্বশেষ বাদ আসর কাউনিয়া শহীদ হাবিবুল্ল্যা উচ্চ বিদ্যালয় জানাজা শেষে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
 
এদিকে মুহাম্মদ শামসুল হক ভূঁইয়াকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। জানাজায় চাঁদপুর জেলা ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। জানাজা শেষে পর্যায়ক্রমে জেলা আওয়ামী লীগ, স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মুহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়ার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

চাঁদপুর শহরের হাসান আলী হাই স্কুল মাঠে জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মুহাম্মদ শামসুল হক ভূঁইয়ার ছোট ছেলে এসানুল হক সজল বলেন, আমার বাবার সাথে আপনার দীর্ঘদিন ধরে ছিলেন। তাকে চেনেন। বাবা আমাদের থেকে আপনাদের বেশি সময় দিতেন। বাবা যদি কোনো ভুল করে থাকেন তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ তাকে যেন জান্নাতবাসী করেন। সকলে দোয়া করবেন।

জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহমুদ আনোয়ার বাবুল বলেন, তার সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে আমাদের মতপার্থক্য ছিল। কিন্তু তার সাথে সৌহার্দ্য, ভালোবাসা এবং একে অপরের প্রতি যে টান সেটা অটুট ছিল। আমি চাঁদপুর জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তার রুহের মাগফেরাত  কমনা করছি এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। 

তিনি আরও বলেন, আজকে এই জানাজায় জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি ঢাকায় একটি কাজে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেন নি। তিনিও গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, সকলকেই একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। শামসুল হক ভূঁইয়া অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সকল দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা আশা করতে পারি আল্লাহ পাক উনাকে বেহেস্ত নসিব করবেন। আমি চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানাই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড. মুহাম্মদ শামসুল হক ভূঁইয়া ১৯৪৮ সালের ১ জুলাই চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার রুপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের কাউনিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পড়াশোনা শেষে তিনি প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি ২০০৫ সালে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোনীত হয়ে এক যুগ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু সমাজকল্যাণ পরিষদের প্রতিষ্ঠিাতা ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চাঁদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে চাঁদপুর-৩ এবং চাঁদপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে আলোচিত হন শামসুল হক ভূঁইয়া।

আনোয়ারুল হক/আরএআর