গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে মাটির নিচে খনন করে মধ্যযুগীয় রাজপ্রাসাদের সন্ধান মিলেছে। খননে বেরিয়ে আসছে ইটের তৈরি প্রাচীন অবকাঠামোসহ নানা ধরনের প্রত্নতত্ত্ব‌ নিদর্শন। এই উপজেলার ঐতিহাসিক বিরাট রাজার এলাকায় ঢিবি খনন করে এসব প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় অবকাঠামোর সন্ধান পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আট সদস্যের একটি দল বিরাট রাজার ঢিবিতে প্রথমবারের মতো খননকাজ পরিচালনা করে। খনন কাজ শুরু করার অল্প দিনের মধ্যেই বেরিয়ে আসে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো। খনন কাজে নিয়োজিতদের ধারণা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো প্রাচীন ও মধ্যযুগের।

সরেজমিনে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজা বিরাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন যাবৎ সংরক্ষিত ৫০ মিটার প্রস্থ, ৩৫ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৪ মিটার উচ্চতার একটি ঢিবিতে খনন কাজ চালাচ্ছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত ৮ সদস্যের একটি দল। খনন কাজ করছেন ২০ জন দক্ষ শ্রমিক। খননে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে প্রাচীন যুগের বিভিন্ন অবকাঠামোর নিদর্শন।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক এবং খননকারী দলের প্রধান ড. নাহিদ সুলতানা বলেন, খননের পর ধারণার চেয়ে বড় আকারের অবকাঠামো পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এখানে পোড়ামাটির ভগ্নাংশ, পোড়ামাটির ফলক, অলংকৃত ইট (সাধারণত ধর্মীয় উপাসনালয়ের সাজসজ্জায় ব্যবহৃত), ভিত্তিপ্রস্তর পিলার পাওয়া গেছে যা ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। তবে নিদর্শনগুলো ঠিক কোন সময়ের এবং কারা এখানে বাস করতেন বা কাদের রাজ্য ছিল এসব জানতে বড় আকারে খনন কাজ সম্পন্ন করতে হবে। তা না হলে সম্ভব না।

নাহিদ সুলতানা আরও বলেন, প্রত্নতত্ত্ব স্থলটি ইতোমধ্যে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। তবে বড় পরিসরে খনন কাজ শেষে জায়গাটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং সেইসঙ্গে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

স্থানীয়ভাবে জনশ্রুতি আছে, এখানে প্রাচীন একটি দুর্গ নগরী ছিল। এর নিরাপত্তার জন্য ছিল সুউচ্চ প্রাচীর এবং প্রাচীরের বাইরে প্রশস্ত ও সুগভীর পরিখা। তবে খননকারী দল এখন পর্যন্ত প্রাচীন দুর্গ নগরীর কোনো চিহ্ন খুঁজে পায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, মূল অবকাঠামোর সঙ্গে আরও দুই-তিনটি মন্দিরের সংযোগ সড়ক ছিল, যা ধ্বংসপ্রাপ্ত।

উল্লেখ্য, আনুষ্ঠানিক খননকাজের পূর্বে এখানে ১৯৭৮ সালে পাওয়া যায় সংস্কৃত অক্ষরে খোদাই করে ‘নম: নম: বিরাট’ লেখা ৯ ইঞ্চি দীর্ঘ মহামূল্যবান একটি শিলালিপি। যা বগুড়ার মহাস্থান যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া এখানে পাওয়া কৃষ্ণ রঙের শিলা পাথরের তৈরি হস্তি মস্তক রাজশাহী যাদুঘরে ও সিংহদ্বারের একটি পাথরের পিলার মহাস্থান যাদুঘরে রয়েছে।

আরকে