নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১৮৭০ সালে ১১০ একর জমির ওপর নির্মিত হয় দেশের প্রাচীন ও বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এ রেল কারখানার ২৮টি উপ-কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করে থাকেন। রেলের ছোট বড় যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ লাইনের বগি মেরামতসহ সব কাজ করা হয় এই কারখানায়। পাশাপাশি রেলওয়ের স্টিম রিলিফ ও ট্রেন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্যারেজ ও ওয়াগন মেরামতের কাজও হয়ে আসছে এ কারখানায়।

গত ৫ জানুয়ারি যশোরের বেনাপোল থেকে রাজধানীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেনাপোল এক্সপ্রেসের চারটি কোচ। পরে এগুলো মেরামতের জন্য নিয়ে আসা হয় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায়। বর্তমানে কোচগুলো মেরামতের প্রাথমিক কাজ শুরু করা হয়েছে।

এদিকে প্রয়োজনের মাত্র ২৫ শতাংশ জনবল দিয়ে চলছে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। নষ্ট ও চলাচল অযোগ্য বগিগুলোকে সচল করে তুলছেন কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা। চরম কর্মব্যস্ততায় সময় কাটছে তাদের। এর পাশাপাশি বেনাপোল এক্সপ্রেসের ক্ষতিগ্রস্ত কোচগুলো পরিষ্কারের কাজ করছেন তারা।

জুয়েল রানা নামে কারখানার এক শ্রমিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া বগিগুলো আমাদের কারখানায় আসার পর আমরা সংস্কারের জন্য পরিষ্কার করা শুরু করেছি। কিন্তু আমাদের এখানে পর্যাপ্ত জনবলের অভাব। আমরা অভারটাইম করে স্যারদের নির্দেশনায় এ কাজগুলো করতেছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা আমাদের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

মহসিন আলী নামে আরেক শ্রমিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা অতিরিক্ত সময় দিয়ে চেষ্টা করছি যাতে গাড়িটি দ্রুত মেরামত করে লাইনে পাঠানো যায়।

কর্তৃপক্ষ বলছে, চারটি কোচ মেরামত করতে ব্যয় হবে তিন থেকে চার কোটি টাকা। ঈদের আগে এ চারটি কোচ মেরামত করা সম্ভব হবে কিনা তা জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তবে আশ্বাস কাচাঁমাল পেলে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে সচল করা যাবে বগিগুলো।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোমিনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কাজ হাতে নিয়েছি। একটা ধারণা নিয়েছি কিভাবে দ্রুত কোচগুলো মেরামত করা যায়। একেকটা কোচের অনেক দাম, চারটি কোচের দাম ২০ থেকে ২৪ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত চারটি কোচ তিন থেকে চার কোটি টাকার ভেতর মেরামত করে দিতে পারব। 

তিনি আরও বলেন, কোচগুলো মেরামত করতে অনেকগুলো ম্যাটেরিয়াল লাগবে। যেমন ভেতরের সিট, ইন্টেরিও ডেকোরেশন, ফ্যান লাইট কোনো কিছুই নেই। এই মালামালগুলো পেলে আশা করছি দুই তিন মাসের মধ্যে কোচগুলো মেরামত করতে পারব। এজন্য আমাদের অতিরিক্ত শ্রম দিতে হবে। তবে এই ঈদের আগে হবে কিনা বলতে পারব না। ঈদে অতিরিক্ত যাত্রীর কথা ভেবে আমরা এর মধ্যে প্রায় ১৪০টি কোচ হাতে নিয়েছি। ওগুলো তো করবই পাশাপাশি এসব কোচের কাজও করব।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) সাদেকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, যে চারটি কোচ রেলওয়ে কারখানায় আনা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে তিনটি আগুনে সম্পূর্ণরূপে পুড়ে গেছে। সাধারণত দুর্ঘটনায় কম ক্ষতিগ্রস্ত বগিগুলো মেরামত করতে ৪৫ দিন, আর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কোচ মেরামতে তিন মাস পর্যন্ত সময় লাগে। কিন্তু এ কোচগুলোর ক্ষতির পরিমাণ এত বেশি যে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। মেরামত করার জন্য এর কাঁচামাল আমদানি করতে হবে।

প্রসঙ্গত, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর প্রায় চার বছর পর পুরাতন কোচ পরিবর্তন করে চীন থেকে আমদানি করা অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত ১২টি বগি যুক্ত করা হয় ট্রেনটিতে। একেকটি কোচ আমদানি করতে ব্যয় করা হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা। নাশকতায় ওই ট্রেনের একসঙ্গে চারটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে রেলটি।

শরিফুল ইসলাম/আরকে