মাঠে মাটির স্তুপ, ১১ মাস খেলাধুলা বন্ধ ফরিদপুরের ২ স্কুলে
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার গাজনা ইউনিয়নের মথুরাপুর উচ্চবিদ্যালয় ও মথুরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি মাঠে স্কুলের একটি ভবন নির্মাণ কাজের জন্য এগারো মাস আগে পিলার নির্মাণের সময় তোলা হয়েছিলো মাটি। সেই মাটি স্তুপ করে রাখা হয় স্কুলের সামনে খেলাধুলার মাঠে।
এর মাঝে বন্ধ হয়ে যায় ভবন নির্মাণ কাজ। তারপর আর সরানো হয়নি সেই মাটি। ফলে গত এগারো মাস ধরে খেলাধুলার জন্য মাঠটি ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছেনা। কবে এই মাঠটিতে আবার ফিরবে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার পরিবেশ তাও অজানা সবার কাছে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার মধুখালী সদর থেকে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি আঞ্চলিক সড়কের পাশে ১৯৬৬ সালে মথুরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। একই ক্যাম্পাসে মথুরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ছিল ১৮৫২ সাল থেকে। এই দুটি বিদ্যালয় একই ক্যাম্পাসে অবস্থিত হওয়ায় একই খেলার মাঠ দুই স্কুলের শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করত। মথুরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে রয়েছে প্রায় সাড়ে চারশো শিক্ষার্থী ও মথুরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আড়াইশোসহ মোট ৭০০ শিক্ষার্থী রয়েছে স্কুল দুটিতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে,স্কুল মাঠের পূর্বপাশে উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন। পশ্চিম পাশে প্রাইমারি স্কুলের পুরাতন দোতলা ভবনসহ নবনির্মিত আরও একটি একতলা ভবন অবস্থিত। পশ্চিম দিকে মথুরাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের স্থান সংকুলান না হওয়ায় মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে দেড় বছর আগে শুরু হয় একটি ভবন নির্মাণ কাজ। ভবনের পিলার নির্মাণের জন্য মাটি খুড়ে রাখার পরে ৭ মাস কেটে যায় পিলার ঢালাইয়ে।তারপর শুধুমাত্র রডের পিলারগুলো কিছু অংশ ঢালাই দিয়ে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
তারপর কেটে গেছে ১১ মাস। ভবন নির্মাণ কাজ আর এগোয়নি। মাটির উপরে পিলারের উন্মুক্ত রডে জং ধরেছে। গর্ত খুড়ে তুলে রাখা অবশিষ্ট বালি ও মাটি সেইভাবেই ১১ মাস ধরে পড়ে আছে মাঠের মধ্যে। এর ফলে এখন স্কুল মাঠে ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা বন্ধ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী(১৩) বলে,আমরা ভয়ে কাউকে বিষয়টা বলতে পারিনা। স্যারদেরকে জানিয়েছি।স্যা ররাও চেষ্টা করেছেন অনেক এটি সমাধানের জন্য। মাঠটিতে আমরা ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে, টিফিনের সময়, আবার স্কুল ছুটির পরেও অনেক সময় খেলাধুলা করতাম। তবে গত প্রায় এক বছর ধরে তা পারছি না। আমরা দাবি জানাই মাঠটি সমান করে যেন আমাদের খেলার উপযোগী পরিবেশ খুব দ্রুত বানিয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আলেমান বিশ্বাস(৪৬) বলেন,বছরখানেক আগে মাঠটি যখন ভাল ছিল তখন স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয় তরুণ-যুবকরা খেলাধুলা করত। বর্তমানে এমনিতেই মাদক আর মোবাইল আসক্তির কড়াল গ্রাসে আমাদের যুব সমাজ হুমকির মুখে। সেই সময়ে এসে এমন একটি মাঠ এতদিন ধরে অকার্যকর করে রাখা কোনও শুভচিন্তার প্রতিফলন হতে পারেনা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মথুরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকুমার চক্রবর্তী বলেন, প্রায় আড়াই বছর আগে ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে মথুরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য একতলা একটি ভবন নির্মাণ কাজের টেন্ডার হয়। মধুখালীর সিরাজুল ইসলাম নামে একজন ঠিকাদার কাজটি পান। এরপর ঠিকাদারের একটি আইনি জটিলতার কারণে পিলারের মাটির নিচের অংশ ভরাটের পর আর কাজ এগোয়নি। সেই থেকে মাটির স্তুপ পড়ে আছে মাঠে। এজন্য আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে।ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করতে পারছে না।
তিনি বলেন,ঠিকাদারকে পক্ষের লোকজন আমাকে জানিয়েছেন তাদের আইনি জটিলতা প্রায় শেষের দিকে।খুব দ্রুত তারা আবার কাজ শুরু করতে পারবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।
গাজনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া বলেন,এই ঠিকাদার ও স্কুলের সভাপতি বর্তমানে এলাকার বাইরে রয়েছেন।মাঠে খেলাধুলা বন্ধের বিষয়টি আমিও শুনেছি।দুইটি স্কুলের ছেলেমেয়েদের খেলাধুলার জন্য একটিমাত্র মাঠ। সেটিতে খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আমি সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করব।
এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামনুন আহমেদ অনীক বলেন,দুইটি বিদ্যালয়ের খেলাধুলা এতদিন ধরে বন্ধ রয়েছে বিষয়টি আমি সম্প্রতি জেনেছি। এভাবে আমরা চলতে দেব না। যেকোনও মূল্যে খেলার মাঠে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে খেলাধুলার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে।
প্রতিনিধি/ এসএমডব্লিউ