মায়ের সঙ্গে ইভা খাতুন

মাগুরা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়া নাটোরের বাগাতিপাড়ার বাবাহারা ইভা খাতুনের মেডিকেল কলেজে ভর্তির দায়িত্ব নিয়েছেন বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রিয়াংকা দেবী পাল। একই সঙ্গে ‘আমার হৃদয়ে নাটোর’ ও ‘পুসান’ নামে দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

বুধবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে ‘এতিম ইভা মেডিকেলে ভর্তি হতে পারবেন তো?’ শিরোনামে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকাপোস্ট.কমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নজরে আসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার। এরপর বিকেলেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দেবী পাল ইভা খাতুনকে ফোন করেন। তিনি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইভার মেডিকেলে ভর্তির সার্বিক আর্থিক সহযোগিতার কথা জানান। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রিয়াংকা দেবী পাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইভা খাতুনের সঙ্গে আমার মুঠোফোনে কথা হয়েছে। তার মেডিকেলে ভর্তির খরচ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বহন করা হবে।

এদিকে ‘আমার হৃদয়ে নাটোর’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ইভার লেখাপড়ার খরচ চালাতে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। 

সংগঠনটির সংগঠক নাটোর প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন বলেন, মেধাবী ইভার পড়াশুনা যেন অর্থাভাবে থমকে না যায় সেজন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে শিক্ষাবৃত্তির আওতায় এনে মাসিকভাবে সাধ্যমতো তাকে সহযোগিতা করা হবে। 

অপরদিকে পুসান (পাবলিক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব নাটোর, বাংলাদেশ) নামের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকেও ইভার মেডিকেলে ভর্তির জন্য আর্থিক সহায়তা ও মাসিক বৃত্তির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি তানভীর আনোয়ার মুঠোফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

উল্লেখ্য, ইভার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নের পথে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে দরিদ্রতা। ইভা নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার সলইপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র ঝরনা বেগমের মেয়ে। ইভার বয়স যখন ২ বছর ৪ মাস তখন তার বাবা কিডনিজনিত রোগে মারা যান। স্বামীর রেখে যাওয়া ১৫ শতাংশ জমিও চিকিৎসা করাতে গিয়ে বন্ধক রাখতে হয়েছে ঝরনা বেগমকে। এরপর থেকে ছোট্ট ইভা মায়ের অভাব-অনটনের সংসারে বড় হতে থাকে। ঝরনা বেগম এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। শিশুদের পড়িয়ে সংসার চলে তার।

ইভা নানার বাড়ি থেকে কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্যাপার কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেন। প্রথমে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলেও পড়ার সুযোগ হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু বাবার ইচ্ছে পূরণ করতে হাল ছাড়েননি ইভা। নতুন করে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। পুনরায় চলতি বছরে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ৪৪৫১তম হয়ে মাগুরা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান তিনি।

তাপস কুমার/আরএআর