বরিশালের বাবুগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় গৌরনদী উপজেলার বাসিন্দা রাজীব খলিফা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি অপচিকিৎসার প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই রোগীর বাড়িতে লোকজন পাঠিয়ে হুমকি দিয়েছেন। এ ঘটনায়ও গৌরনদী থানায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার সিংগা গ্রামের ভ্যানচালক রাজীব খলিফা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে পার্শ্ববর্তী বাবুগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের আগরপুরে অবস্থিত হালিমা-মান্নান মেমোরিয়াল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তার নয়ন বাবুর কাছে চিকিৎসা নেন। তার হার্নিয়া হয়েছে জানিয়ে চিকিৎসক অপারেশনের পরামর্শ দেন। পরামর্শ অনুযায়ী ১৬ জানুয়ারি রাতে রাজীব খলিফার অপারেশন হয় হালিমা-মান্নান মেমোরিয়াল ক্লিনিকে। অপারেশনের পর থেকে এক মাসের বেশি সময় কেটে গেলেও সুস্থ হননি রাজীব।

রাজীব খলিফা বলেন, আমার সুস্থ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু আমি মোটেও সুস্থ হইনি। বরং যেখানে অপারেশন করেছেন সেখানে মারাত্মক যন্ত্রণা করে। আমি দিনে দিনে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলছি। আরও নানান অসুস্থতা বাড়ছে। এ বিষয়ে ওই হাসপাতালে গেলে ডাক্তার নয়ন বাবু আমাকে জানান, তার কিছুই করার নেই। তিনি চিকিৎসা করেছেন, এখন ভালো না হলে সেটি দেখার দায়িত্ব তার নয়।

তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত গরিব। ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাই। আমার পক্ষে  উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা যাওয়ার সামর্থ্য নেই। ১০ হাজার টাকায় অপারেশন করেছি তাও অন্যের কাছ থেকে কর্জ করে টাকা এনে। আমি হালিমা-মান্নান মেমোরিয়াল ক্লিনিকে অপচিকিৎসার শিকার হয়েছি। এখন আমি মৃত্যু পথযাত্রী। আমি ওদের ভুল চিকিৎসার বিচার চাই। অপচিকিৎসার বিচার চাইতে ইউএনওর কাছে অভিযোগ দিলে বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ওই ক্লিনিকের মালিক পক্ষের লোকজন আমার বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে যান। আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছি।

এ বিষয়ে হালিমা-মান্নান মেমোরিয়াল ক্লিনিকের অভিযুক্ত চিকিৎসক নয়ন বাবুর মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে ক্লিনিকের পরিচালক শহিদুল আলম ফারুক বলেন, বাবুগঞ্জে কিছু ‘বাটপার’ লোক আছেন তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাদের বিরুদ্ধে ওই ছেলেটাকে (রাজীব খলিফা) লেলিয়ে দিয়েছেন। সব অভিযোগ মিথ্যা। ওর কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে একটি চক্র এই কাজ করছে। যারা করছে তাদেরও একটি ক্লিনিক আছে। এসব করে কোনো লাভ হবে না। পরিস্থিতিটা একটু সামলে উঠতে পারলেই সেই চক্র আর যেসব সাংবাদিক নিউজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব।

তিনি বলেন, আমি খোঁজ নিয়েছি, রাজীব খলিফা পুরোপুরি সুস্থ আছেন।

গৌরনদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, চিকিৎসা সঠিকভাবে না পাওয়ার ঘটনায় বাবুগঞ্জ ইউএনও অফিসে অভিযোগ দেওয়ায় ভুক্তভোগী যুবককে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে- এমন একটি অভিযোগ বুধবার রাতে আমরা পেয়েছি। সরোয়ার মোল্লা, আজিজুল মোল্লা ও শামসু খন্দকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দাখিল করা হয়। আমরা ঘটনা তদন্ত করে দেখছি।

বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা রহমানের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর