আবারও বন্য হাতির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার সীমান্তঘেঁষা কয়েকটি গ্রামে। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাত আড়াইটার সময় থেকে উপজেলা সদরের তেলিপাড়া, সিদ্দিকনগর, খুনিয়াভিটাসহ গ্রামগুলোতে ভারতীয় বন্য হাতি আসার খবর নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ থেকে সাধারণ মানুষকে সচেতন ও হাতিকে বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে সচেতনামূলক প্রচারণা।

সন্ধ্যা সাতটার পর নদী মহানন্দার তীরস্থ মন্দিরের পাশে হাফতিয়াগছ জিরোলাইনের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে স্থানীয়দের মশাল জ্বালাতে দেখা গেছে।

এর আগে সকালে বন্য হাতি দুটি সদর ইউনিয়নের সীমান্ত হতে ২শ গজ দূরে ভারতের হাফতিয়াগছ বিএসএফ ক্যাম্প সংলগ্ন একটি বনে অবস্থান করার খবর পায় উপজেলা প্রশাসন। হাতি দুটি যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সাথে সাথে ভারতীয় বন দপ্তরের প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাৎ করেন উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ।

এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি ভারতের হাফতিয়াগছ ফরেস্টের জিরো সীমানায় ভারতীয় বন দপ্তরের প্রতিনিধির সঙ্গে জরুরি সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে হাতি দুটিকে ট্রাংকুলাইজার ব্যবহার করে দ্রুত উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।

প্রশাসনের অনুরোধের প্রেক্ষিতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বন বিভাগের নর্দান সার্কেলের বৈকণ্ঠপুর ডিভিশন  ট্রাংকুলাইজার ব্যবহার করে গাড়িতে করে হাতি দুটিকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। 

এদিকে দুপুরে তেঁতুলিয়া পুরাতন বাজার ও দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের হাফতিয়াগছ সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভারতীয় বনবিভাগ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে (বিএসএফ) ফরেস্ট এলাকায় দিনভর অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এ সময় মহানন্দা নদীর তীরস্থ সীমান্ত এলাকায় শতাধিকের বেশি বাংলাদেশিকে হাতি দেখতে জড়ো হতে দেখা গেছে।

সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী জানান, রাতে সদরের তেলিপাড়া ও দক্ষিণ-পশ্চিম হাফতিয়া ফরেস্ট এলাকায় দুটি ভারতীয় বন্য হাতি প্রবেশ করার কারণে সীমান্তে বসবাসকারীদের সতর্কতা অবলম্বন করে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। আর কেউ যাতে অতি উৎসাহিত হয়ে হাতি দেখতে ওই সীমান্ত এলাকায় গিয়ে অবস্থান না করে সেই বিষয়ে একটি প্রচার মাইকিং করা হচ্ছে। বিষয়টি বিজিবি ও পুলিশকে জানানো হয়েছে।  

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি বলেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের কাশিমগঞ্জে দুটি বন্যহাতি আসার দুইদিন পর আবার বাংলাদেশে হাতি প্রবেশের আশঙ্কা থাকায় আমরা জরুরি ভিত্তিতে ভারতের বনদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে আলোচনা করেছি। হাতি দুটি যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে এজন্য তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে। বন্যহাতিকে দেখে কেউ যেন বিরক্ত না করে এবং মানুষকে নিরাপদে থাকতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক প্রচারণা করা হচ্ছে।

এদিকে গত ২০ ফেব্রুয়ারি রওশনপুর বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্ত পিলার ৭৩৫/২ এস এর মধ্যবর্তী ইসলামবাগ এলাকা দিয়ে ২টি ভারতীয় বন্য হাতি বাংলাদেশে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। পরে হাতি দুটি তিরনইহাট এলাকা হয়ে গোয়ালগছ বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্তে কাশিমগঞ্জ এলাকায় এসে অবস্থান নিয়ে বেপরোয়া হয়ে কিছু বাড়ি ঘরে সামান্য ভাঙচুর করে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের নিরাপত্তার স্বার্থে বিজিবি, থানা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। অনুপ্রবেশ করা হাতি দুটিকে বিরক্ত না করতে তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় বিকেল ৪টায় কাশিমগঞ্জ সীমান্ত এলাকার ৭৩০ পিলারে বাংলাদেশ ও ভারতীয় বনবিভাগের প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধনের জন্য পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পতাকা বৈঠকে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা হাতি দুটি ভারতে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশি বনবিভাগের সদস্যদের সঙ্গে ভারতীয় বনবিভাগ বিভাগের সদস্যদের প্রয়োজনীয় আলোচনা হয়। পরে সন্ধ্যার দিকে ১৮ বিজিবি গোয়ালগছ ক্যাম্পের বিপরীতে ৭৩০ এর নিকটবর্তী বিএসএফ ব্যাটালিয়নের ফাঁসিদেওয়া ক্যাম্প এলাকা দিয়ে নদী পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করে হাতি দুটি। ওই ঘটনায় নুরুজ্জামান (২৫) নামের এক বাক প্রতিবন্ধী মারা যায়।

এসকে দোয়েল/এমএএস