সীমান্তে হত্যা ও বিদেশি আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে পঞ্চগড়ে প্রতীকী লাশের মিছিল করেছেন হানিফ বাংলাদেশি নামে এক প্রতিবাদী যুবক। শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জেলার শেরে বাংলা পার্কের পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কে বাংলাদেশি লাশের প্রতীকী মিছিল নিয়ে হেঁটে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ কর্মসূচিতে অংশ নেন এনইউ আহম্মেদ, সৌরভ বেলাল ও আরিফ নামে তিন যুবক। 

হানিফ বাংলাদেশি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিবেশি দুটি দেশ ভারত ও মিয়ানমার। এ দুটি দেশ সব সময় বাংলাদেশের ওপর আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত সব সময় সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে। কিছুদিন আগে বিএসএফ বাংলাদেশের এক বিজিবি  সদস্যকে গুলি করে হত্যা করেছে। গত ৪ মাসে ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ২১ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের হিসেবে ২০১০ সাল থেকে প্রায় ১ হাজার ২৭৬ জন বাংলাদেশিকে বিএসএফ হত্যা করেছে। আহত হয়েছেন ১ হাজার ১৮৩ জন।

আরেকদিকে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার। দেশটি তাদের ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে অত্যাচার করে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি  মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে মর্টার শেলে দুজন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন। সীমান্ত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালেও আমি প্রতীকী লাশ কাঁধে নিয়ে কুড়িগ্রামে ফেলানীদের বাড়ি পর্যন্ত পদযাত্রা করেছিলাম।  

তিনি আরও বলেন, আমাদের বাংলাদেশের মানুষ সব সময় প্রতিবেশী ও বন্ধু দেশগুলোর সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়। কিন্তু  প্রতিবেশী দুটি দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে সব সময় বৈরী আচরণ করছে। পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করছে। হত্যার পর তারা বলছে, যারা মারা গেছে তারা গরু চোর, চোরাকারবারি। ধরে নিলাম তারা গরু চোর, চোরাকারবারী। এসব গরু চোরাকারবারিদের আটক করে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক। কিন্তু গুলি করে হত্যা করবে কেন? ভারত যদি তাদের দেশের পাচারকারিদের দমন করে তাহলে বাংলাদেশের পাচারকারিরা এমনিতে ঠিক হয়ে যাবে।  

হানিফ বাংলাদেশি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যখন যে দলই এসেছে, সে দলই দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশের মানুষের আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে বিদেশিদের দ্বারস্থ হয়েছে। শাসকদের এই নতজানু হওয়ার কারণে ভারত ও মিয়ানমার সব সময় বাংলাদেশের ওপর আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। অন্য দেশগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের ওপর খবরদারি করার সাহস পাচ্ছে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশের মানুষ কখনও কোনো দেশের আগ্রাসন, দাদাগিরি মেনে নেয়নি। তাই নতুন প্রজন্মও কোনো দেশের আগ্রাসন মেনে নেবে না। বাংলাদেশের মানুষ আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চায়।
   
তিনি জানান, আমাদের এই প্রতীকী লাশের মিছিলটি কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের সাথে ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত আছে এমন সব জেলা ও উপজেলা প্রদক্ষিণ করছি আমরা। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি আমাদের এ কর্মসূচি যশোরের বেনাপোল উপজেলায় গিয়ে শেষ হবে। তাই আমাদের কর্মসূচিতে দেশবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। 

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সৌরভ বলেন, আমরা সবাই সচেতন নাগরিক। সীমান্তে আমাদের ওপর ভারত-মিয়ানমার হত্যা ও আগ্রাসন চালাচ্ছে। সরকার সীমান্তে হত্যা ও আগ্রাসন বন্ধে পদক্ষেপ নেবে বলে বিশ্বাস করি। আমরা সবাইকে আহ্বান করবো তারা যেন আমাদের প্রতিবাদে অংশ নেন। 

এসকে দোয়েল/আরএআর