দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বেতদিঘী ইউনিয়নের দামারমোড়ে সড়ক নির্মাণে ব্যবহৃত প্লান্টের বিষাক্ত ধোঁয়া, ধুলাবালু ও বিটুমিন পোড়ানোর ধোঁয়ায় পাশের জমির ধানগাছ পুড়ে গেছে। এতে কালো ও ফ্যাকাসে হয়ে গেছে ধানের ক্ষেত। এদিকে বিষাক্ত ধোঁয়া, ধুলাবালু ও বিটুমিন পোড়ানোর দুর্গন্ধে চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে পথচারীসহ এলাকাবাসী। তারা বলছেন, মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন তারা।

তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, এত ভাবলে তো সড়কের কার্পেটিং কাজ বন্ধ রাখতে হবে। একটু তো সহ্য করতেই হবে। এদিকে ধানের জমিগুলো নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকের কপালে। সরেজমিনে এমন অবস্থার ছবি তোলার সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে করে খারাপ আচরণ।

ফুলবাড়ি উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দেশ মা হাট থেকে চিন্তামন বাজার পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার রাস্তার দুই ধারে প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। এটির ব্যয় ধরা হয় ৮ লাখ টাকা। জয়পুরহাট জেলার ইফান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটির কাজ করছে। প্রশস্তকরণের নির্দিষ্ট সময় পার হলেও এখনো কাজ শেষ করতে না পারায় আবারও তিন মান সময় বাড়ানো হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়,বেতদিঘি ইউনিয়নের দামাড়মোড়-পুখুরী সড়কের ওপর বিটুমিন মিকশ্চার প্লান্ট মেশিন বসানোসহ নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে। নির্মাণের জন্য স্তূপ করে রাখা হয়েছে পাথর। সারি সারি বিটুমিনের ড্রাম রাখা হয়েছে সেখানে। পাশেই রয়েছে সবুজের সমারোহ ধানক্ষেত। তার পাশেই বিটুমিন পোড়ানো ও মিকশ্চারের কাজ করা হচ্ছে। পরে মিশ্রিত পাথর ট্রলিতে করে নির্মাণের স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে বিটুমিনের কালো ধোঁয়ার ছাই আর পাথরের ধুলাবালু আশপাশের ফসলি জমিসহ বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় উড়ে পড়ছে। আর বিটুমিনের কালো ধোঁয়ার ধানগাছের ওপর প্রলেপ পড়েছে।

দামার মোড় এলাকার ভ্যানচালক আশরাফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিটুমিন পোড়ানোসহ প্লান্ট সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চালু রাখা হয়। তখন প্লান্টের বিষাক্ত ধোঁয়া, পাথরের ধুলাবালু ও বিটুমিন পোড়ানোর গন্ধে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল তো দূরের কথা, বাজারেও ঠিকমতো থাকা যায় না।

তিনি বলেন, দুর্ভোগে পড়লেও প্রতিবাদ করতে ভয় পায় এলাকার মানুষ। তাই এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা মানুষগুলো বেশি টাকা খরচ করে পাঁচ কিলোমিটার দূর দিয়ে আটপুখুরহাট দিয়ে ঘুরে যাতায়াত করছে।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি তার পরিচয় গোপন করে এড়িয়ে যান। তবে সেসব মেশিনের ছবি নিতে গেলে সাংবাদিককে পড়তে হয় তার রোষানলে। হঠাৎ করেই ঠিকাদারের কেয়ারটেকার চড়াও হয়ে সাংবাদিককে বলেন, ছবি তুললেন ক্যান, ছবি তুলতে অনুমতি নিয়েছেন? এখান থেকে চুপচাপ চলে যান।

বিটুমিন পোড়ানোর স্থানের পাশে রয়েছে মোতাহার হোসেন নামের এক ব্যক্তির বেশ কিছু ধানের জমি। ধানের ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই বিটুমিনের কালো ধোঁয়া আর পাথরের ধুলাবালুতে আমার জমির ফসল প্রায় কালচে হয়ে এসেছ। সেগুলোতে আর ধানের শিষও গজায়নি। বিটুমিনের কারণে আমরা কপাল পুড়েছে। আমি ঋণ করে এক বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। আমার এই ক্ষতিপূরণ দেবে কে?

দামার মোড়ের কালাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, বিটুমিনের ধোঁয়ার গন্ধে ও ধুলাবালুর কারণে দম বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এর প্রতিবাদ করলে এলাকায় থাকা যাবে না। এভাবে চলতে থাকলে স্থানীয় বাসিন্দারা শ্বাসকষ্টের রোগী হয়ে যাবে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ মো. আবদুল কুদ্দুস বলেন, সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। ওই ধোঁয়া ও ধুলাবালুতে সাময়িক কিছু সমস্যা হলেও এলাকার স্বার্থে সবকিছুই মেনে নিতে হবে।

ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী এফ এ এম রায়হানুল কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, এত কিছু ভাবলে তো সড়কের কার্পেটিং কাজ বন্ধ রাখতে হবে। আপনি দেখেন হাইওয়ের কাজ চলছে, সেখানে কীভাবে কাজ করা হচ্ছে, এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।

এ বিষয়ে ফুলবাড়ী কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার কাছে জমির সফল নষ্ট হওয়ার কোনো প্রকার লিখিত কিংবা মৌখিক অভিযোগ আসেনি।

এর আগে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রিয়াজ উদ্দিন ‘বিষয়টি আমি দেখছি। এখনই উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলছি’ বললেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

এনএ