ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নুরুল্যাগঞ্জ ইউনিয়নের বাকপুরা খামারবাড়ি গভীর নলকূপ-১ সেচ প্রকল্পের নলকূপটি গত ১০ বছর ধরে নষ্ট পড়ে আছে। এতে ওই খামার বাড়ির অধীনে কৃষকদের দেড়শ বিঘার বেশি জমি পতিত অবস্থায় রয়েছে। ফলে ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়েছেন তারা। 

বিএডিসি ফরিদপুর সূত্রে জানা যায়, গভীর নলকূপসহ এ খামার বাড়িটি চালু হয় ১৯৭৫ সালে। ওই এলাকার শতাধিক কৃষক দেড় শতাধিক জমিতে ইরি ও বোরো ধানের চাষাবাদ করে থাকেন। দশ বছর আগে ২০১৪ সালে এ নলকূপে ত্রুটি দেখা যায়। পানির সঙ্গে মোটা বালি উঠতে শুরু করে। উঠতে থাকে ছোট ছোট পাথরও।

এ কারণে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হওয়ার দরুণ চাষিদের চাষাবাদ ব্যাহত হলে নলকূপটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিএডিসি ফরিদপুরের সহকারী প্রকৌশলীর (নির্মাণ) কার্যালয়ে নতুন করে ভূগর্ভস্থ খননপূর্বক বোরিং করার জন্য ডাউন পেমেন্ট বাবদ রশিদের মাধ্যমে ওই খামার বাড়ির অনুকূলে নগদ ৩০ হাজার টাকা জমা দেয় এলাকাবাসী। কিন্ত ১০ বছর চলে গেলেও ওই নলকূপ ঠিক করা বা নতুন নলকূপ স্থাপনের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিএডিসি।

স্থানীয়রা জানান, গত ১০ বছরে বিএডিসি এ গভীর নলকূপটি নতুন করে খনন করার উদ্যোগ না নেওয়া বা সংস্কার না করলেও গভীর নলকূপটির বাৎসরিক ভাড়া বাবদ ওই প্রকল্পের অধীন কৃষকদেরকে ২৩ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।

স্থানীয়রা আরও জানান, এ অবস্থায় স্থানীয়রা গত ৪ ফেব্রুয়ারি বাকপুরা খামার বাড়ি গভীর নলকূপ-১ এর ম্যানেজার সৈয়দ নূরে আলমের (সহকারী প্রকৌশলী) নিকট একটি লিখিত আবেদন করেন।

ওই আবেদনে বলা হয়, গত ১ ফেব্রুয়ারি উল্লেখিত নলকূপটি চালু করতে গেলে দেখা যায় যে, এটি থেকে পানির সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ মোটা পাথর ও বালু উঠছে। প্রকল্পটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। নলকূপটি চালানো যাচ্ছে না। বর্তমানে চাষিরা ইরি-বোরো চাষাবাদ করতে না পারায় চরম দুর্ভোগের শিকার ও ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে।

এমতাবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে উল্লেখিত গভীর নলকূপটি চালু করতে না পারলে এলাকায় খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে। অসহায় গরিব কৃষকগণ মাঠে মারা যাবে।

এ আবেদনের অনুলিপি দেওয়া হয়, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী (সেচ), ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে।

বাকপুরা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আনোয়ার চুন্নু (৫৫) বলেন, ওই খামারে আমার ৩৬ শতাংশ জমি রয়েছে। এই জমির চাষাবাদের ওপর আমার ভাত জোটে। কিন্তু পানির অভাবে গত ১০ বছর ধরে আমাদের মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। পানির সংকটে জমিতে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।

একই এলাকার বাসিন্দা কৃষক প্রবীণ কৃষক কামাল পাশা (৭৫) বলেন, এ খামারে আমার দুই একর জমি রয়েছে। বয়সের কারণে নিজে চাষ করতে পারি না। দিন মজুর দিয়ে চাষ করতে হয়। পানির অভাবে ফসল না হওয়ায় দিন মজুরদের টাকাও দিতে পারছি না। ঘরে শস্যের দানাও তুলতে পারছি না। কবে যে আজাব থেকে মুক্তি পাব আল্লাহ জানেন।

বিএডিসির (সেচ) ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আশরাফ বলেন, এ সমস্যাটি আমার জানা আছে। আমরা ইতোমধ্যে নলকূপটি পুনরায় স্থাপনের জন্য কি কি প্রয়োজন তার একটি তালিকা করে ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে পঠিয়েছি। সেটি অনুমোদন হলে এবং অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার পর দরপত্র আহ্বান করে কাজটি করে দেওয়া হবে।

জহির হোসেন/আরকে