ছন্দ ছাড়া কথা বলতে পারেন না মোমিন
বাড়ির মানুষের সঙ্গে স্বাভাবিক কথাবার্তাও বলেন ছন্দ মিলিয়ে। বাইরের মানুষের সঙ্গেও কথা বলেন ছন্দে ছন্দে। ছন্দ ছাড়া কোনো কথাই বলতে পারেন না ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী মোমিনুর রহমান (৫৫)। ছোট থেকেই ছন্দ মেলানোই পারদর্শী তিনি।
মোমিনুর রহমান যশোরের মনিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের বাসিন্দা। ‘ছন্দ মোমিন’ নামেই তিনি এলাকায় বেশি পরিচিত। গ্রামের চায়ের দোকানগুলোতে বসতেই আশপাশের মানুষের ভিড় লেগে যায়। ছন্দ মোমিনের ছন্দের তালে তালে কথা শুনে আনন্দ পান গ্রামের শিশু থেকে বয়স্করা।
বিজ্ঞাপন
এ সম্পর্কে প্রশ্ন করতেই ছন্দের তালে তালেই ঢাকা পোস্টকে জবাব দেন মোমিনুর। তিনি বলেন, ‘এ আল্লাহর দান, আল্লাহ দেছে বেরেন, আমি মাঠে-ঘাটে ডেরেন, তাই দিয়ে যায় জল, গায় পাইনে বল, কচ্ছে আর দুই জন দেখতি চাচ্ছে চল, কিন্তু গায় পাইনে বল, মুরুব্বি হয়ে গেইছি, চুল দাড়ি পাকা, ঘুরে বেড়াতি হয় একা, কিন্তু সাজদি পারতিছিনে নেকা, ঐ যে বেড়াচ্ছি একা।’
ছন্দ শুনে মানুষের আনন্দ পাওয়ার বিষয়ে মোমিনুর বলেন, ‘মানুষে আমারে অতান্ত্য জ্বালায়, কিন্তু আমি উগের দেইখে পলাই, ছেলে- পেলে- যুয়ান-যুবক বুইড়া, তহন কেউ থায়ে না খুড়া। যেই বসি এক জাগায় চা-খাতি, সেই মারে চাটি, কওদি একটা ছন্দ, তহন বেঁধে যায় দ্বন্দ্ব।’
বিজ্ঞাপন
ছন্দ মোমিন এ প্রতিবেদককে ছন্দ দিয়ে একটি গানও শোনান। গানটি হলো- ‘যশোর আমার জিলা ভাইডি, মনিরামপুর থানা, একথাটি ভাইডি ছিলনা আপনার জানা, কি কারণে আসলেন আমার এই যে রাজগঞ্জে, ভিডিও ছাড়া নেই কিছু মনে, ও ভাই চাচা ভিডিও ছাড়া নেই কিছু মনে, কেউ আসে মাগুরা থেকে, কেউ আসেবা যশোর, আমি এই জন্য পাইছি এতে পাওয়োর, ঘুরি আমি সাইকেল নিয়ে গ্রাম ও গঞ্জে, কোনোদিনও যাইনি আমি গানেরও মঞ্চে।’
মোমিনুর রহমান ওরফে ছন্দ মোমিন বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে যেমন ছন্দে ছন্দে কথা বলেন তেমনি চায়ের দোকান বা রাস্তায় চলার পথে একইভাবেই ছন্দের তালে তালে কথা বলেন। তার এমন ছন্দকথা শুনে আনন্দ পান পরিবারের সদস্যসহ প্রতিবেশী এবং এলাকাবাসীরা।
মোমিনুর রহমানের স্ত্রী নাছিমা বেগম বলেন, আমার স্বামী ছন্দ দিয়ে কথা বলে। বাড়িতে যতটুকু সময় থাকে আমাদের সঙ্গেও ছন্দ দিয়েই কথা বলে। বিয়ের পর থেকেই এমনটাই দেখে আসছি। আমাদের কাছে তার ছন্দকথা শুনতে অনেক ভালো লাগে।
মনোহরপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ রুহুল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছন্দের তালে তালে কথা বলায় মোমিনের নাম হয়েছে ছন্দ মোমিন। সে যেখানে বসে সেখানেই মানুষের ভিড় লেগে যায় তার এই ছন্দ কথা শোনার জন্য।
মনোহরপুর বাজারে চায়ের দোকানে বসে মোমিনের ছন্দ কথা শুনছিলেন মতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, মোমিন যখন ছন্দ দিয়ে কথা বলে তখন ওর পাশ থেকে উঠতেই ইচ্ছা করে না। মন চায় আরও বসে বসে শুনি, কিভাবে পারে আল্লাহ জানে।
স্থানীয় এক চিকিৎসক রাকিব রাফসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মোমিন চাচা ছন্দ দিয়ে কথা বলে। এটা তার একটা প্রতিভা। এমন তো সবাই পারে না। আমাদের একটা ছন্দ তৈরি করতে গেলে সময় লাগে, কিন্তু সে কথা কথায় ছন্দ বলে। শুনতেও খুন হাস্যকর।
ঝাপা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য তাজু হোসেন বলেন, মোমিনের এটা একটা অসাধারণ প্রতিভা। সে ঘরে বাইরে সব সময় একইভাবে ছন্দ দিয়ে কথা বলে। আমাদের কাছে শুনতেও অনেক ভালো লাগে।
আরকে