নামাজে জানাজায় শেখ বোরহান উদ্দিন সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকরা

করোনাভাইরাস মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে দূরে সরে যান স্বজনরা। ফলে মরদেহের দাফন, গোসল ও জানাজা নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। করোনায় এই দৃশ্য প্রতিদিনের। তাই মানবতার ডাকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির দাফন-কাফনে কাজ করছেন মৌলভীবাজারের একদল স্বেচ্ছাসেবক।

গত মার্চ মাসে দেশে এসেছিলেন কাতারপ্রবাসী আজির মিয়া। কাতার গিয়েই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) সকালে তার লাশবাহী ভ্যান মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় এসে পৌঁছায়।

মৃত ব্যক্তির পরিবার লন্ডনে বসবাস করায় প্রতিবেশী ও স্বজন ছাড়া কেউ বাড়িতে বসবাস করেন না। এমন সময় মারা ব্যক্তির লাশ দাফন করতে নামে শেখ বোরহান উদ্দিন সোসাইটি স্বেচ্ছাসেবক দল। এই সংগঠনের নিজস্ব অর্থায়নে লাশের দাফন-কাফনসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন তারা। এই দলের কেউ ব্যবসায়ী কেউবা ছাত্র, মানবতার জন্য এগিয়ে এসেছেন তারা।

অভিজ্ঞতা জানিয়ে সিরাজুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাভাইরাসের সময় আমরা কী আতঙ্কের মধ্যে ছিলাম? এই করুণ পরিস্থিতিতে স্বামীর লাশের পাশে আসেন না স্ত্রী। ছেলে বাবার লাশ দেখতে আসে না। প্রতিবেশী কেউ পাশে নেই।

তিনি আরও বলেন, এ রকম পরিস্থিতিতে আমরা চার থেকে পাঁচজন রাত দুইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত কাজ করেছি। আমরা চেষ্টা করেছি যারা মারা যান তারা যেন অবহেলিত না হন। এজন্য আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।

দাফন-কাফনসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন তারা

ব্যবসায়ী সোহান রহমান বলেন, দুঃসময়ে আপনজনের পাশে থাকে না আপনজন। কেউই আসতে চায় না জীবনের ভয়ে। আমি একজন মানুষের দাফন করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে, এই কারণেই এই কাজে ইচ্ছুক হয়েছি। আর মন থেকেই ভালো লাগার কারণে সেচ্ছাসেবক হিসেবে এই কাজে নেমেছি।

করোনায় মৃতের স্বজন ফজলু মিয়া বলেন, আমার বোনের স্বামী কাতারে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার লাশ দেশে এসেছে। যেহেতু করোনায় মারা গেছেন তাই ঝুঁকি এড়াতে আমি বোরহান উদ্দিন সোসাইটিকে জানাই। তারা লাশের দাফন করেছেন।

সোসাইটির সদস্য সচিব রাসেল আহমদ বলেন, করোনা মহামারি যখন শুরু হয়েছিল তখন থেকেই আমাদের এই সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বেশেষে যারা করোনা আক্রান্ত হয়ে অথবা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমরা কোনো বিনিময় নেই না।

দাফন-কাফন দলের নেতা আশরাফুল খান রুহেল বলেন, আমাদের সংগঠন আগে থেকেই কাজ করে যাচ্ছি। মহামারির সময় আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে করোনায় যারা মৃত্যুবরণ করবেন তাদের দাফন করব। আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই কাজ করছি।

এম মুহিবুর রহমান মুহিব আরও বলেন, আমাদের টিমের দৃঢ় মনোবল আছে, যতই ক্লান্তি আসুক এই মানবিক কাজটি থামিয়ে রাখব না। আমরা কিছুদিন পর অক্সিজেন সার্ভিস ও করোনা নমুনা সংগ্রহের উদ্যোগ নেব।

এমএসআর