মঞ্চে ফিরল যাত্রাপালা, সুনামগঞ্জে তিন দিনব্যাপী উৎসব শুরু
আধুনিকতার যুগে হারিয়ে গেছে পুরোনো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। হারিয়ে যাওয়ার এ তালিকা বেশ লম্বা। এ তালিকার অন্যতম যাত্রাপালা। আধুনিক নাট্য আন্দোলনের সূচনার মাধ্যমে বাঙালির আদি সংস্কৃতির যাত্রা প্রায় বিলুপ্ত। একইসঙ্গে রয়েছে পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। এখন যাত্রা মঞ্চে আর শোনা যায় না রাজা-বাদশাদের বলিষ্ঠ কণ্ঠের সেই আওয়াজ। ঢাল তলোয়ার নিয়ে দেখা যায় না রাজা-বাদশার সেইসব চরিত্রকে। বাজে না বিচ্ছেদের সেই করুণ কিংবা ভালোবাসার দারুণ সুর।
হারিয়ে যাওয়া এই ঐতিহ্যকে মঞ্চে নতুনভাবে দর্শকের সামনে তুলে ধরতে উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি, সুনামগঞ্জ। আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনব্যাপী যাত্রাপালা উৎসবের।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাছনরাজা মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী যাত্রাপালা উৎসবের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ) সাব্বির আহমেদ।
জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরীর পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পৌর মেয়র নাদের বখত, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আবেদীন, সুনামগঞ্জের বিশিষ্ট যাত্রাশিল্পী রমেন্দ্র কুমার, বিজীত ভূষণ তালুকদার।
বিজ্ঞাপন
পুরোনো ঐতিহ্যবাহী যাত্রাশিল্পের কথা শুনে মিলনায়তনে দর্শকেরও কমতি ছিলো না। নতুন প্রজন্মের অনেকেই যাত্রার কথা শুধু লোকমুখে শুনেছেন তবে কেউ দেখেননি। তাই তরুণ থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ এসেছিলেন যাত্রা দেখতে।
যাত্রা দেখতে আসা তরুণ সংস্কৃতি কর্মী বায়েজিদ আল সামায়ূন বলেন, যাত্রা আমাদের কাছে নতুন হলেও এটি আমাদের পুরোনো ঐতিহ্য। সেই পুরোনো সংস্কৃতিকে নতুনভাবে দেখলাম। যাত্রার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাই। এভাবে আমাদের পুরোনো সংস্কৃতি-ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পৌর মেয়র নাদের বখত বলেন, যাত্রাপালার কথা মনে হলেই একটা শিহরণ অনুভব হয়। সেই ঊনবিংশ শতাব্দীতে শুরু সেখানেই শেষ হয়ে যায়। আজকে এই যাত্রাপালায় উপস্থিতি দেখে মন ভরে গেছে। আমরা এখনও আমাদের শেকড় মনে রেখেছি। আমি সংশ্লিষ্টদের বলবো এটাকে কীভাবে আরও আধুনিক করা যায় সেই চিন্তা করার।
আরও পড়ুন
প্রধান অতিথি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ) সাব্বির আহমেদ বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন যাত্রার কথা শুনেছি, খুব একটা দেখা হয়নি। সরাসরি যাত্রা দেখার সুযোগ ছিলো না। আজকে যাত্রা উৎসবে আসতে পেরে খুবই ভালো লেগেছে। সুনামগঞ্জ হাওরের জেলা, সংস্কৃতির জেলা। প্রতিনিয়ত সংস্কৃতির চর্চা হচ্ছে। আমাদের আজকের আয়োজনের প্রধান কারণ হচ্ছে পুরোনো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনা। আমাদের জেলায় এখনো যাত্রার দল আছে এটা নিঃসন্দেহে ভালো খবর। আমরা এর বিকাশে সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করবো। সরকারও এ ব্যাপারে আন্তরিক।
আয়োজক জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী পাভেল বলেন, যাত্রা শিল্প প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমাদের বিলুপ্ত এই সংস্কৃতিকে মূল সংস্কৃতির স্রোতধারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য তিন দিনব্যাপী যাত্রা উৎসবের আয়োজন। যাত্রা বাদ দিয়ে আমাদের যে হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আছে সেটা চিন্তা করা যায় না।
যাত্রা উৎসবের প্রথম দিন মঞ্চস্থ হয় সচীন সেনগুপ্তের রচনায় ও হাবীব সারোয়ারের নির্দেশনায়, নবযুগ, মোহনগঞ্জের পরিবেশনায় নবাব সিরাজউদ্দৌলা। ২৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দিন পরিবেশিত হবে ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়ের রচনায় ও রমেন্দ্র কুমারের নির্দেশনায় সুনাম অপেরার অশ্রু দিয়ে লেখা। ২৯ ফেব্রুয়ারি শেষ দিনে রিবেন তালুকদারের রচনা ও নির্দেশনায় জয়বাবা লোকনাথ নাট্যসংঘ দিরাইয়ের পরিবেশনায় মেঘনাধ বধ। টিকিট ছাড়াই যাত্রাগুলো দেখা যাবে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাছনরাজা মিলনায়তনে।
সোহানুর রহমান সোহান/পিএইচ