আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে প্রতিদিন জ্বর, ঠান্ডা, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। প্রতিদিন তিন শতাধিক শিশু এসব রোগের চিকিৎসা নিচ্ছে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে। জ্বর, ঠান্ডা, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত এসব শিশুদের বয়স এক সপ্তাহ থেকে থেকে ৪ বছর। হাসপাতালটিতে শিশু রোগীর শয্যা সংখ্যা ১৪টি হলেও প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন শিশু ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। যা হাসপাতালের ধারণক্ষমতার চার গুণেরও বেশি। ফলে এসব রোগীদের শয্যার বাইরে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। হঠাৎ করেই শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব রোগীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক, নার্সসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগ, শিশু ওয়ার্ড, মেঝে ও বারান্দায় এসব রোগে আক্রান্ত শিশুদের ভিড় লক্ষ করা গেছে।

সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে হাসপাতালের বহির্বিভাগে জ্বর, ঠান্ডা, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে ১ হাজারের অধিক শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। বর্তমানে শিশু ভর্তি রয়েছে ৬৫ জন, ডায়েরিয়া আক্রান্ত হয়ে ৩৭ জন ও মেডিসিনি বিভাগে ৯৪ জনসহ ২৫৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১০০ টি। সেখানেও দেড় গুণ রোগী বেশি ভর্তি। অন্যদিকে শিশুদের জন্য বরাদ্দ ১৪টি শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছে ৬৫ জন শিশু। যা ধারণক্ষমতার ৪ গুণেরও বেশি। ১৪ জনের চিকিৎসক ও নার্স দিয়ে চলছে এসব শিশুদের চিকিৎসা। আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত গরম ও ঠান্ডায় শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুর মা ও বাবাদের উচিত শিশুদের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া।

তাসনিয়ার বয়স মাত্র ৯ দিন। তার মা রিমি আক্তার হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বাইরের বারান্দার একটি সিটে থেকে মেয়ের চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাসনিয়া গত তিন দিন ধরে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত। রিমি আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, হঠাৎ করেই মেয়ে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে দেখি তাসনিয়ার মত আরও অনেক শিশু অসুস্থ। হাসপাতালে শয্যা না থাকায় বাইরে বসে চিকিৎসা নিচ্ছি। নার্স, ডাক্তাররা নিয়মিত দেখাশুনা করছেন।

শরীয়তপুর পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড এলাকার জাকির তালুকদারের ছেলে হাবিবের বয়স চার মাস। হাবিবের নানি রুণা বেগম এসেছেন নাতি ও মেয়েকে দেখাশোনা করতে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঠান্ডা ও কাশি নিয়ে ৪ দিন ধরে ভুগছে হাবিব। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। কিন্তু হাসপাতালে শিশু রোগীদের ভিড়ে কোনো শয্যা নেই। এখানে অনেক গরম। ঠিকমতো কোথাও দাঁড়ানোও যাচ্ছে না। হাবিব যন্ত্রণায় সারাক্ষণ কান্না করছে। হাসপাতাল থেকে বাসা কাছে হলেও এখানে নিয়মিত চিকিৎসক পর্যবেক্ষণ করছেন বলে বাসায় যাচ্ছি না।

এক মাস ৪ দিন বয়সী সৃষ্টি ভক্তর জন্ম হয়েছে তার নানু বাড়ি কাশাভোগ গ্রামে। তার মা চন্দনা ভক্ত ঢাকা পোস্টকে বলেন, সৃষ্টি গত ৫ দিন ধরে জ্বর, ঠান্ডা, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত। গত কয়েক দিনের গরম ঠান্ডায় সৃষ্টি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে এসেছি ৩ দিন ধরে। সৃষ্টি এখনও সুস্থ হয়নি। চিকিৎসক, নার্সরা সারাক্ষণ দেখাশোনা করছেন। শিশু ওয়ার্ডের ভেতরে শয্যা পাইনি।

সাবরিনা আক্তারের বয়স সাড়ে ৪ বছর। জ্বর, ঠান্ডা, কাশি নিয়ে গত ২ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি সে। তার বাবা আব্দুল মালেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, হঠাৎ করেই আমার মেয়ে জ্বর, ঠান্ডা, কাশিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর দেখি তার মতো আরও অনেক রোগী। রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় শয্যা পাইনি। এখানে থেকে চিকিৎসা নিতে কষ্টই হচ্ছে।

শিশু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স শাপলা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালে কয়েকদিন থেকে জ্বর, ঠান্ডা, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেশি। অতিরিক্ত রোগী হওয়ার কারণে এসব শিশুদের চিকিৎসা সেবা দিতে আমাদের কষ্ট হলেও ফুটফুটে এসব শিশুদের সেবা মায়ের মমতা নিয়েই করে থাকি আমরা।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডা. মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মূলত আবহাওয়া পরিবর্তন ও মৌসুমি প্রভাবের কারণেই শিশুরা জ্বর, ঠান্ডা, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়েছে। ঠান্ডায় অধিকাংশ শিশুর নাক বন্ধ হয়ে রয়েছে। হাতে গোনা কয়েকজন শিশুর নিউমোনিয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য শিশুদের নাকটা ভালোভাবে পরিষ্কার করে দিলেই তারা সুন্দর ভাবে শ্বাস নিতে পারছে। মা-বাবা যদি আরও সতর্ক হোন, তাহলে এমন সমস্যা হবে না। ভর্তি হওয়া শিশুরা শিগগিরই সুস্থ হয়ে উঠবে।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মিতু আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত এসব রোগে যেন শিশুরা আক্রান্ত না হয়, সেজন্য মা বাবার উচিত শিশুদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, শুকনো পরিবেশে খাবার খাওয়ানো। মলত্যাগ করার পরে সুন্দরভাবে পরিষ্কার করা। গরমে যেন শিশুরা ঘেমে না যায়, সেদিকে লক্ষ রাখা। বিশেষ করে রাতের বেলা ঠান্ডা গরম পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। সর্বোপরি মা বাবার সচেতন হওয়ার বিকল্প কিছু নেই। ১০০ শয্যার হাসপাতালে কয়েকগুণ রোগীকে সেবা দিতে স্টাফদের কষ্ট হলেও আমরা সর্বাধিক সেবা নিশ্চিতে চেষ্টা করছি। যে-সব শিশুরা আক্রান্ত হয়েছে, তারা চিকিৎসা নিলে সুস্থ হয়ে উঠবে।

সাইফ রুদাদ/এএএ