মাগুরা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়া নাটোরের বাগাতিপাড়ার বাবাহারা ইভা খাতুনের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে প্রতিমন্ত্রী মুঠোফোনে ইভার সঙ্গে কথা বলে তার লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি জানান। 

এর আগে বুধবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে ‘এতিম ইভার মেডিকেলে ভর্তি হতে পারবেন তো?’ শিরোনামে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকাপোস্ট.কমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। অন্যান্য গণমাধ্যমেও ইভাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নজরে আসে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের। পরে তিনি ইভা ও তার মায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে ইভার মেডিকেলে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। 

ইভা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিমন্ত্রী আমার সঙ্গে ও মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি আমার লেখাপড়ার জন্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এ জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। 

এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইভার ডাক্তার হওয়ার জন্য যা যা সহযোগিতা দরকার তা আমি ব্যক্তিগতভাবে করতে চাই। আমি বেঁচে থাকলে তার ডাক্তারি পড়ায় কোনো সমস্যা হবে না।

তিনি আরও বলেন, জীবন সংগ্রামী এক মায়ের চেষ্টায় ইভা খাতুন প্রতিযোগিতাপূর্ণ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ভর্তির সুযোগ করে নিতে পেরেছে জেনে আমি খুশি হয়েছি।

এদিকে গতকাল বুধবার (২১ এপ্রিল) বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রিয়াংকা দেবী পাল ইভার মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়াও  ‘আমার হৃদয়ে নাটোর’ ও ‘পুসান’ নামে দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

উল্লেখ্য, ইভার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নের পথে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে দরিদ্রতা। ইভা নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার সলইপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র ঝরনা বেগমের মেয়ে। ইভার বয়স যখন ২ বছর ৪ মাস তখন তার বাবা কিডনিজনিত রোগে মারা যান। স্বামীর রেখে যাওয়া ১৫ শতাংশ জমিও চিকিৎসা করাতে গিয়ে বন্ধক রাখতে হয়েছে ঝরনা বেগমকে। এরপর থেকে ছোট্ট ইভা মায়ের অভাব-অনটনের সংসারে বড় হতে থাকে। ঝরনা বেগম এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। শিশুদের পড়িয়ে সংসার চলে তার।

ইভা নানার বাড়ি থেকে কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্যাপার কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেন। প্রথমে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলেও পড়ার সুযোগ হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু বাবার ইচ্ছে পূরণ করতে হাল ছাড়েননি ইভা। নতুন করে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। পুনরায় চলতি বছরে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ৪৪৫১তম হয়ে মাগুরা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান তিনি।

তাপস কুমার/আরএআর