যাত্রী সংকটে রয়েছেন ভ্যানচালক-রিকশাচালকরা

রমজান মাস শুরু হতে না হতেই কঠোর লকডাউন দেওয়াতে বিপাকে পড়েছেন মাদরীপুরের নিম্নআয়ের মানুষ। রিকশাচালক, দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের কপালে চিন্তায় ভাঁজ পড়েছে। চোখে-মুখে তাদের একটাই প্রশ্ন, কীভাবে হবে সম্ভাব্য খাবার সংকটের সমাধান?

বাইরে মানুষ বের না হওয়ায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্রেতা সংকটে ভুগছেন। ভ্যানচালক, রিকশাচালকরাও রয়েছেন যাত্রী সংকটে। ফলে সম্ভাব্য রোজগার নেই তাদের। জীবন বাঁচাতে সরকারের সহযোগিতার দিকেই চেয়ে আছেন এসব শ্রমজীবী মানুষ।

লকডাউনে থমকে গেছে মাদারীপুর শহর, সেই সঙ্গে থেমে গেছে মাদারীপুর ইটেরপুল বাজারের কাঁচামাল বিক্রেতা শহীদুল ইসলামের জীবনও। দুপুর হতে না হতেই আগে যেখানে বিক্রি করে ফেলতেন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা।

বৃহস্পতিবার সারাদিনে বিক্রি করেছেন মাত্র ৮০০ টাকা। ক্রেতা না থাকায় পচে যাচ্ছে টমেটো, বেগুনসহ অন্য সবজি। লকডাউন উপেক্ষা করে রাতের বেলাতেও বসে আছেন দোকান খুলে; দুপয়সা বিক্রির আশায়।

শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের তো বাঁচতে হইব। সারাদিন বেচাকেনা নেই বললেই চলে, মাত্র ৮শ টাকা বিক্রি করেছি হারা দিনে। লকডাউনের আগে দিনে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বিক্রি হত। সবজি পচে যাচ্ছে তাই রাতের বেলাতেও লুকিয়ে লুকিয়ে বিক্রি করছি।’

ক্রেতা না থাকায় পচে যাচ্ছে সবজি

সরকারঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউনে শহিদুল ইসলামের মতই দিশেহারা রিকশাচালক করিম তালুকদার। লকডাউনের আগে রিকশা চালিয়ে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হত তার। তা এখন এসেছে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।

সারাদিনে তিনি আজ আয় করেছেন মাত্র ৫৫ টাকা। ভাড়ায় রিকশা চালান তিনি। দিনে ২৫০ টাকা রিকশার মালিককে জমা দিতে হয়। রাত ৮টার দিকে ইটেরপুল এলাকায় রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে তাকে।

ঢাকা পোস্টকে তিনি জানান, জমা দেওয়ার ২৫০ টাকা তুলবেন, তারপর যদি বাড়তি কিছু টাকা থাকে; তা দিয়ে পরিবারের জন্য চাল, ডাল কিনে বাড়ি ফিরবেন। টিকে থাকতে কিছুটা হলেও সরকারি সহায়তা দরকার।

করিম তালুকদার আরও বলেন, ‘বাসায় বাজার নেই। চাল ডাল কিনে তারপর বাসায় ফিরব। সকালে মাত্র ৩০ টাকা ভাড়া পেয়েছি। পুলিশে ধরে চাবি রেখে দিছে, ৩ ঘণ্টা পর ফেরত দিছে। পুলিশ মিটার টাও ভেঙে দিছে। সরকার খাওন দিক তাহলে আমরা বের হব না। না খেয়ে মরার চেয়ে করোনায় মরাই ভালো।’

লকডাউনের অভিজ্ঞতা সুখকর নয় অটোচালক বাদশা হাওলাদারেরও। ২ ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। অটোরিকশা চালিয়ে দিনে যা আয় হয় তাতেই চলতো তার সংসার। কঠোর লকডাউনে দিশেহারা তিনি।

দিনে তার ৭শ থেকে ৮শ আয়, এখন নেমে এসেছে ২শ থেকে ৩শ টাকায়। অথচ মাস শেষ হলেই তার গুনতে হবে নিত্যপ্রয়েজনীয় খরচের পাশাপাশি বাসা ভাড়ার ৪ হাজার টাকা।

বাদশা হাওলাদার বলেন, ‘সকালে এক থেকে দেড় ঘণ্টা যাত্রী থাকে, এরপর থাকে না। ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কামাই করে কীভাবে সংসার চালাব? করোনায় মানুষ মারা গেলে আমরা কী করমু? আমাগো বাঁচাইব কেডা? ঘরে বসে থাকলে পরিবার নিয়া না খাইয়াই মইরা যামু।’

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, এসব নিন্মআয়ের মানুষের তালিকা করব। এদের মধ্যে যারা সহযোগিতা পাওয়ার যোগ্য; সরকারি সহযোগিতা বা প্রণোদনা আসলে তাদের দেওয়া হবে।

এমএসআর