চাঁদা না দেওয়ায় পায়রা বন্দরের উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কলাপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মারধর করে দাবিকৃত চাঁদা না দেওয়া পর্যন্ত কাজ করতেও নিষেধ করেছেন তারা। এতে বিগত ৯ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারের এই প্রকল্পের কাজ। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঘটনার বিস্তারিত জানিয়েছেন সহকারী প্রকৌশলী মো. আজেদুল সরকার। তিনি জানান, প্রকল্পে নিযুক্ত চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএসআইসি ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ানিং কোম্পানি লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার লি জোইং এবং দেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াটার বার্ডস লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার জাহিদুল ইসলামের দেওয়া পৃথক লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগে কাজে বাধা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। মূলত চাঁদা না দেওয়ায় হামলা হয়েছে।

জানা গেছে, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালের উন্নয়ন কাজে নিযুক্ত ওয়াটার বার্ডস লিমিটেড ও সিএসআইসি ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ানিং কোম্পানি লিমিটেড। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টার দিকে বন্দরের প্রথম টার্মিনালের উন্নয়ন কাজের স্থানে গিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিক তালুকদারের নেতৃত্বে ৭০-৮০ জনের একটি দল দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে মাসিক ৩০ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে বলেন।

এ নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ওয়াটার বার্ডস লিমিটেডের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামসহ পাঁচজনকে পিটিয়ে আহত করেন। এছাড়া চায়না ও দেশি উভয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অফিসে হামলা চালান। এ ঘটনার পর থেকে বন্দরের উন্নয়ন কাজ বন্ধ রেখেছে দুুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

ওয়াটার বার্ডস লিমিটেডের প্রধান প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিক তালুকদার দলবল নিয়ে এসে আমাদের অফিসে হামলা চালিয়ে আমাদের কর্মীদের আহত করেন। তারা প্রতি মাসে ৩০ লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে কাজ বন্ধ রাখার হুমকি দিয়েছেন। এই ঘটনার পর পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে আমরা ও চায়না কোম্পানি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সব সময় আমাদের পাহারা দেয়। আমরা আতঙ্কে আছি। নিরাপত্তার জন্য আমরা কাজ শুরু করতে পারছি না।

যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলাপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিক তালুকদার। তিনি বলেন, কলাপাড়ার ধনখালী আর নলুয়া ইউনিয়নে আমাদের বাপ-দাদার জমি চলে গেছে। রাষ্ট্রের বৃহৎ উন্নয়নের জন‌্য আমরা জমি ছেড়ে দিয়েছি। সেখানে এখন কাজ হচ্ছে। আমি ওই দিন বন্দরে কাজ চাইতে গিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, প্রধান প্রকৌশলী কলাপাড়ার বিএনপির লোক লিটন গাজী ও আজাদ গাজীকে কাজ দেন। আর আমরা দলের জন‌্য কাজ করেও কাজ পাই না। এটাই বলতে গিয়েছিলাম। সেখানে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে। এখন আমাদের দোষী করার জন‌্য চাঁদা দাবির নাটক সাজিয়েছে। এসব মিথ‌্যা। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারের কাজে ছাত্রলীগ হয়ে আমি কেন হামলা চালাতে যাব? আমি কথা বলতে গিয়েছি, সেটা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করছে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর