দ্বীপ জেলা ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষের বসবাস। প্রাকৃতিক দুযোর্গপ্রবণ এই জনপদে স্বাস্থ্যসেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ৫০ শয্যার হাসপাতাল কমপ্লেক্সের প্রায় প্রতিটি কক্ষই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অথচ প্রতিদিন এই ভাঙাচোরা ভবনে অন্তত ৫০০ জন রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। 

প্রায়ই খসে পড়ে পলেস্তারা। বছরের পর বছর ধরে এমন জরাজীর্ণ ভবনে চিকিৎসা সেবা চললেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে করে মারাত্মক ঝুঁকিতে আছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, দায়িত্বরত কর্মী ও রোগীরা। দুর্ঘটনার শঙ্কা নিয়েই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

জানা গেছে, ১৯৮২ সালে উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়। ২০০৩ সালে পুরাতন শয্যা কাঠামো বদলে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। যদিও তার তিন বছর পরে ২০০৬ সালে ৫০ শয্যার কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৮ সালে পুরাতন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনের পাশে নতুন একটি ভবন করে শয্যার ব্যবস্থা করা হয়।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, জরুরি বিভাগ, ডেলিভারি কক্ষ, মহিলা ওয়ার্ড, গুদাম, ডিউটি অফিসারের কক্ষ, সেবিকাদের কক্ষ ও কর্মকর্তার কক্ষের বিভিন্নস্থান থেকে পলেস্তারা খসে পড়েছে। ফাটল ধরেছে দেয়ালে। এমনকি ২০০৮ সালে নতুন যে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে সেটিরও বিভিন্ন দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। জং ধরা রড বেড়িয়ে এসেছে দেয়াল ভেঙে।

দায়িত্বরত আরেক চিকিৎসক মিজানুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুরানো ভবনটিতে অবস্থান করা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা খুব ঝুঁকি নিয়ে রোগী সেবার জন্য এখানে বসে চিকিৎসা দিয়ে থাকি। দ্রুত সংস্কার বা নতুন ভবন না করে দিলে আসলে এখানে অবস্থান নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া দুরুহ। তিনি বলেন, শুধু পুরাতন ভবন নয় নতুন ভবনটিও ফাটলে ধরেছে।

জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালের মূল ভবনের ছাদের অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো সময়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারি। আমরা আতঙ্কের মধ্যে কাজ করি। অপারেশন থিয়েটারের দরজার ওপরে ধসে পড়েছে পলেস্তারা। ওই কক্ষ থেকে প্রায়ই পলেস্তরা খসে পড়ে।

বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. তারেক বলেন, পুরোনো ভবনটি রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত নয়। কিছুদিন আগেও এক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার সময় ছাদ থেকে ইট-বালু খসে তার মাথায় পড়ে আহত হয়েছেন। তাছাড়া ভবনটির দরজা জানালাসহ সবকিছুই নড়বড়ে হয়ে গেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তপতী চৌধুরী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। ভবনটি যেন দ্রুত সংস্কার করা হয় এজন্য আমরা দাবী জানিয়ে আসছি। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর আমাদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বলে জানিয়েছেন।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরকে