হাবিল কাজী

চোখের সামনেই বাবা হাবিল কাজীর (৪৪) উপর সশস্ত্র হামলা চালায় প্রতিপক্ষের লোকজন। বাবাকে বাঁচাতে অস্ত্রের মুখে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছেলে শওকত হোসেন (১৪)। নিজের শরীর দিয়ে বাবাকে আড়াল করার প্রাণান্তকর চেষ্টাও চালায় স্কুলছাত্র।

এর আগে হামলাকারীদের হাত-পায়ে ধরেও মন গলাতে পারেনি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া শওকত। উল্টো সেও হয়েছে হামলার শিকার। তার চোখের নামনেই ধীরে ধীরে নিস্তেজ পয়ে পড়েন বাবা হাবিল কাজী।

বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) রাতে রাজশাহীর বাগমারার গণিপুর ইউনিয়নের মাধাইমুড়ি গ্রামে মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটে। নিহত হাবিল কাজী মাধাইমুড়ি গ্রামের স্কুলশিক্ষক আজিমুদ্দিনের ছেলে।

আহত হয়েছেন নিহত হাবিলের বাবা আজিমুদ্দিনসহ আরও অন্তত ১০ জন। গুরুতর আহত আজিমুদ্দিনসহ তিনজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এছাড়া নিহতের ছেলে শওকতসহ বাকিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এই ঘটনায় রাতেই নিহত হাবিল কাজীর ছোট ভাই হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেছেন। এই মামলায় ২০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ১০ থেকে ১২ জনকে। এরই মধ্যে এজাহারনামীয় চার আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী বলছে, জমিজমা নিয়ে পূর্বশত্রুতার জেরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ নিয়েই বৃহস্পতিবার বিকেলে একই গ্রামের আলামিনের সঙ্গে প্রতিপক্ষ সিদ্দিক ও তার লোকজনের বাগ‌বিতণ্ডা হয়।

এ সময় ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন হাবিল কাজী। জমিজমা নিয়ে সিদ্দিক ও তার লোকজনের সঙ্গে বিরোধ ছিল হাবিলেরও। ওই সময় তিনি আত্মীয় আলামিনের পক্ষ নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে তর্কে জড়ান। ফলে হাবিল কাজীর উপর চড়াও হন প্রতিপক্ষের লোকজন।

ইফতারের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ছেলে শওকত হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন হাবিল কাজী। সুযোগ বুঝে আগে থেকেই অবস্থান নেওয়া সিদ্দিক, খলিলসহ ৭-৮ জন হাবিলকে ঘিরে ধরেন। 

বাগ‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে তারা লাঠি দিয়ে হাবিলকে বেধড়ক পিটুনি দেন। উপর্যুপরি কোপানো হয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে। এতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন হাবিল। ওই সময় মচমইল উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে শওকত হোসেন চিৎকার শুরু করে।

বাবার শরীরের উপর শুয়ে পড়ে রক্ষার চেষ্টাও করে শওকত। কিন্তু তাকেও লাঠিপেটা ও ধারালো অস্ত্রের কোপ দেয় প্রতিপক্ষ। তাদের উদ্ধারে স্বজনরা এলেও তাদেরও মারাত্মকভাবে আহত করে প্রতিপক্ষ।

পরে দ্রুত আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক হাবিল কাজীকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদের মধ্যে গুরুতর তিনজনকে রাতেই রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।

চিকিৎসাধীন শওকত হোসেন জানায়, তার সামনেই খুন হয়েছেন বাবা। তাকে পিটিয়ে এবং অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। ঝাঁপিয়ে পড়েও বাবাকে বাঁচাতে পারিনি। হামলাকারীদের হাতে-পায়ে ধরেও মন গলাতে পারিনি।

বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, পুলিশ রাতেই লাশ উদ্ধার করে। শুক্রবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য রামেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এছাড়া রাতেই এ নিয়ে মামলা হয়েছে। চার আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএসআর