সুস্বাদু আর রসালো লিচু বলতেই মেহেরপুরের লিচুর নাম আগে আসে মানুষের মুখে। এই জেলার উৎপাদিত লিচুর কদর শুধু এই জেলাতেই নয় দেশের বিভিন্ন বাজারে রয়েছে। চলতি বছরে মুকুল দেখে মেহেরপুরে রেকর্ড পরিমাণ লিচু উৎপাদনের আশা করছেন বাগান মালিক ও কৃষি বিভাগ। 

জেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে লিচু গাছ। যা পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে অনেক টাকা আয় করেন গাছ মালিকরা। মৌসুমের শুরুতেই আগাম আটি জাতের লিচুর মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে প্রতিটি বাগান। অনুকূল আবহাওয়া ও মুকুল দেখেই গাছ মালিকরা আশা করছেন অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছরে রেকর্ড পরিমাণ লিচু উৎপাদন হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, জেলায় ৮০০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। এ সব বাগানে ,আটি লিচু, বোম্বাই, চিলি বোম্বাই, আতা বোম্বাই ও চায়না-থ্রি জাতের লিচু উৎপাদন হয়ে থাকে। চলতি বছরে জেলায় সাড়ে ৮ হাজার টন লিচুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে অধিক মুনাফা আয় করার আশা করছেন বাগান মালিকরা।

মেহেরপুর সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া গ্রামের লিচু বাগান মালিক তোজাম্মেল হক জানান, সাড়ে তিন বিঘা জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। বাগানে আগাম জাতের আটি লিচু রয়েছে দেড় বিঘা। আটি লিচু গাছের ডগায় ডগায় মুকুলে ছেয়ে গেছে। বাকি জমিতে রয়েছে আতা বোম্বাই লিচুর গাছ। সেগুলোতেও মুকুল দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখন পর্যন্ত কোনো রোগ বালাই দেখা দেয়নি। ফলে এবার রেকর্ড পরিমাণ লিচু উৎপানের আশা তার।

সদর উপজেলার বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের বাগান মালিক রেজাউল হক বলেন, গেল বছর আমার বাগানে লিচুর ভালো ফলন হয়েছিল। লিচু পরিপক্কতার আগেই অতিমাত্রায় তাপদাহে লিচুর খোসা ফেটে নষ্ট হয়ে যায়। আগাম ব্যবস্থার ত্রুটি থাকায় বেশি লাভবান হতে পারিনি। তবে এ বছর বাগানে আগাম পরিচর্যার কোনো ঘাটতি রাখিনি। প্রতিটি গাছে মুকুলে ভরে গেছে। এ বছর ভালো ফলন আশা করছি।

মুজিবনগর উপজেলার লিচু বাগান মালিক শের খান বলেন, কৃষি বিভাগের দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী লিচুর মুকুল আনতে সব প্রস্ততি ও পরিচর্যা করেছি। আমার বাগানের প্রতিটি গাছ মুকুলে ভরে গেছে। আবহাওয়া ভাল থাকলে দুই বিঘা বাগান থেকে কয়েক লাখ টাকার লিচু বিক্রি করব।

গাংনী উপজেলার সাহারবাটির বাগান মালিক ফারুক হোসেন বলেন, গেল বছর মুকুলের সময় বাগান বিক্রি করেছিলাম পাইকারদের কাছে। এ বছর বেশি বেশি মুকুল দেখা যাচ্ছে। আশা করছি ভালো ফলন পাওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের বাগানের লিচু অনেক মিষ্টি ও রসালো। মেহেরপুরের লিচুর কদরই আলাদা। বিভিন্ন জেলার পাইকাররা ইতোমধ্যে বাগান কিনতে শুরু করেছেন। ভালো দাম পেলে পাইকারদের কাছে বাগান বিক্রি করব। দাম না পেলে নিজেই লিচুর পরিচর্যা ঠিক রাখব।

বরিশাল জেলার লিচু ব্যবসায়ী মুন্তাজ মন্ডল জানান, বছরের শুরুতেই আমরা আগাম লিচুর বাগান কিনতে শুরু করেছি। গাছের পরিধি ও মুকুল দেখে দাম নির্ধারণ করছি। গেল বছর মেহেরপুরের অনেক বাগান কিনেছিলাম। এ জেলার লিচুর কদর রয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। জেলার লিচুর রং, সুস্বাদু ও দেখতে সুন্দর হওয়ায় অন্যন্য লিচুর চেয়ে চাহিদা যেমন বেশি, তেমনি দামও ভালো পাওয়া যায়।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, মেহেরপুরে ৮০০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে পরিবারের জন্য রয়েছে লিচুর গাছ। সেগুলো হিসাবের বাইরে। আমাদের হিসাব মতে সাড়ে ৮ হাজার মেট্রিক টন লিচুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গেল বছর বাগান মালিকরা অনেক লাভবান হয়েছেন। চলতি বছরেও লিচুর মুকুল দেখে মনে হচ্ছে ভালো ফলন হবে। লিচুর উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় তার জন্য আমরা কৃষকদের নানা পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে আসছি।

আকতারুজ্জামান/আরকে