লটারির ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন করেন ফারুক আলম পান্না। ছবি : ঢাকা পোস্ট

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফলে দেখা যায়, প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা সমান। পরে শনিবার (৯ মার্চ) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে দুই প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে লটারি মাধ্যমে একজনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

রিফাইতপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল মান্নান রানা বিশ্বাস ৬ হাজার ১২৩  ভোট পেয়েছেন ও মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী ফারুক আলম পান্নাও ৬ হাজার ১২৩ ভোট পান। তারা দুইজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দুই প্রার্থী সমান সংখ্যক ভোট পাওয়ায় ফলাফল ঘোষণা নিয়ে শঙ্কা তেরি হয়। এ নির্বাচনে ৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। 

প্রশ্নবিদ্ধ এ লটারির ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন করছেন মোটরসাইকেল প্রতীকের ফারুক আলম পান্না। অবিলম্বে এই ফলাফল বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পুনরায় ভোট গণনা ও বিধি মোতাবেক ফলাফল ঘোষণার দাবি জানান।

চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক আলম পান্না বলেন, বিধি ভেঙে লটারি করা হয়েছে। দুই প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের উপস্থিতিতে লটারি হওয়ার নিয়ম রয়েছে। নিয়ম মেনে সেটি করা হয়নি। দুই প্রার্থী ও এজেন্টরা কেউ উপস্থিত ছিল না। লটারির প্রক্রিয়া তাদের স্বাক্ষর নেওয়ার নিয়ম থাকলেও কেউ স্বাক্ষর করেনি। আমি ভোটে হারিনি বরং আমাকে হারানো হয়েছে। আমি আদালতের দ্বারস্থ হবো। এই লটারি আমি মানি না। আমাদের অনুপস্থিতে কোনো লটারি হতে পারে না। অবিলম্বে এই ফলাফল বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি।

বিধিতে উল্লেখ আছে, যদি নির্বাচনে কেউ এককভাবে জয়ী না হন, তাহলে যাদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা সমান হবে তাদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে একজনকে জয়ী ঘোষণা করা হবে। তবে এতে উভয় প্রার্থী উপস্থিতিতে লটারি করার নিয়ম রয়েছে। 

জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যায় রিটার্নিং কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার মণ্ডল ভোটের ফলাফল ঘোষণা করেন। দুই প্রার্থী সমান ভোট পাওয়ায় কাউকে তিনি বিজয়ী ঘোষণা করেননি। তবে রাত সাড়ে ৯টার দিকে জানানো হয় সমান ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে লটারি অনুষ্ঠিত হবে।

শনিবার রাতে জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু আনছার ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সমান ভোট পাওয়ায় লটারি হবে। দুই প্রার্থী ও এজেন্টদের উপস্থিতিতে লটারি হবে।

তিনি আরও বলেন, তবে এ নিয়ে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়। মোটরসাইকেল প্রতীকের ফারুক আলম পান্না রাত ১০টার দিকে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যান। এ সময় তিনি নির্বাচন কর্মকর্তাদের জানান, পুনরায় যাচাই-বাছাই করে ভোট গণনা করা হোক। অথবা পরবর্তীতে দুই প্রার্থীর উপস্থিতিতে লটারি করা হোক। পরে সেখান থেকে ফারুক আলম পান্না চলে যায়। তবে সেখানে অপর প্রার্থী আবদুল মান্নান উপস্থিত হননি। পরে রাত দেড়টার দিকে দুই প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে লটারি করা হয়। এতে আবদুল মান্নান বিশ্বাসকে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার মণ্ডল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউএনও মো. ওবায়দুল্লাহ, জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু আনছার ও ওসি রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু আনছার, রিটার্নিং কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার মণ্ডল ও দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ওবায়দুল্লাহর ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তারা ধরেননি।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য মতে, রিফাইতপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ বাবলু ২০২৩ সালের ১৪ অক্টোবর মারা যান। তার মৃত্যুতে চেয়ারম্যান পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরে তফশিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

এ ইউনিয়নে মোট ভোটার ছিল ২৫ হাজার ৮৪৬ জন। শনিবার নয়টি ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন ১৭ হাজার ৯২৬ জন। এর মধ্যে বৈধ ভোট হয় ১৭ হাজার ৮১৩টি এবং ভোট বাতিল হয় ১১৩টি।

শনিবার (৯ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী আনারস প্রতীকে জামিরুল ইসলাম বাবু ৪ হাজার ৯১৩ ভোট পেয়েছেন, চশমা প্রতীকের প্রার্থী মেহেদী হাসান ৬৩৬ এবং টেবিল ফ্যান প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল মজিদ ১৮ ভোট পেয়েছেন।

রাজু আহমেদ/এএএ