নরসিংদীতে আদালতের হাজতখানার বারান্দায় কেক কেটে হত্যা মামলার আসামি জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান নাহিদের জন্মদিন উদযাপন করা হয়েছে। উদযাপনের পর নেতারা কেক কাটার এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে ছাড়লে এগুলো মুহূর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়। 

এতে জেলা জুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা যায় আসামি হাজতখানায় মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছেন।

জানা গেছে, সিদ্দিকুর রহমান নাহিদ ছাত্রদলের এক নেতাকে হত্যা মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে আছেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও অস্ত্রসহ প্রায় ৩০টি মামলা রয়েছে।

এর আগে গত ১৩ অক্টোবর ঢাকা থেকে অস্ত্রসহ নাহিদকে গ্রেপ্তার করেন জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খোকন চন্দ্র সরকার। এরপর থেকে তিনি কারাগারে। শহরের জেলখানা মোড়ে পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাদের মিছিলে জেলা ছাত্রদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ছাদেকুর রহমান ও তার কর্মী আশরাফুলকে গুলি করে হত্যা মামলার অন্যতম আসামি তিনি।

নরসিংদী আদালত পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, সম্ভবত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গত ৫ মার্চ সিদ্দিকুর রহমান নাহিদের জন্মদিন ছিল। সেদিন কারাগার থেকে সিদ্দিকুর রহমানকে হত্যা মামলার হাজিরা দিতে আদালতে আনা হয়েছিল। তাকে হাজতখানায় রাখার সময় কিছু পুলিশ সদস্যের সহায়তায় তার কিছু বন্ধু এবং সহযোগীরা সেখানে কেক নিয়ে উপস্থিত হন। পরে হাজতের বারান্দায় কেক কেটে তার জন্মদিন উদযাপনের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, নাহিদের জন্মদিন উদযাপন করার জন্য বন্ধু, কর্মী ও সহযোগীদের কয়েকটি গ্রুপ কেকসহ আদালতের হাজতখানার সামনে উপস্থিত হন। পুলিশ সদস্যদের সহায়তায় হাজতখানার ভেতরের বারান্দায় ঢুকে তারা নাহিদের জন্মদিন উদযাপন করেন। কেক কাটার পর তারা নাহিদের মুখে কেক তুলে দেন, নাহিদও তাদের মুখে কেক তুলে দেন। এ সময় তার বাম হাতে হাতকড়া পরানো ছিল।

কেক কাটার সময় নরসিংদী জেলা যুবদলের সদস্য ঝুম্মন পাল, মাধবদী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শাহাদাৎ রাজীব, মাধবদী থানা যুবদলের সদস্যসচিব অপু, নুরাল্লাপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজগর আলীসহ অনেকে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

নরসিংদীর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, হাজিরা দিতে গিয়ে আদালতের হাজতখানায় আসামির জন্মদিন উদযাপনের ঘটনাটি শুনেছি। সে সময়টাতে আমি ছুটিতে ছিলাম। এ ঘটনায় নরসিংদী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম অ্যান্ড অবস অর্নিবাণ চৌধুরীকে প্রধান রেখে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, এটি অবশ্যই অপরাধ। আদালতের ভেতরে হাজতখানায় আসামির কেক কেটে জন্মদিন উদযাপনের সুযোগ নেই। এছাড়া ভিডিও কলে কথা বলার তো প্রশ্নই ওঠে না। 

তন্ময় সাহা/আরকে