রানা প্লাজা ধসে দুই পা হারানো রেবেকা বেগম

কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন রেবেকা। স্বামীকে খাইয়ে নিজে না খেয়ে পরিবারের ৭ সদস্য মিলে রানা প্লাজার দ্বিতীয় তলায় কাজ করছিলেন। পাশের লাইনে রেবেকার মা তখন ডাকছিলেন খাওয়ার জন্য। এ সময় হঠাৎ করে বিকট শব্দে ভবনটি ভেঙে পড়ে। সেই ফ্লোরেই দুই পা দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে আটকে পড়েন রেবেকা। প্রায় দুই দিন পর সেখান থেকে স্থানীয় কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী এসে তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রেবেকার পরিবারের দুই সদস্য কোনমতে বেঁচে ফিরলেও মাসহ বাকিরা হারিয়ে যায় ইট পাথরের কংক্রিটের ভেতর।

রেবেকার বাড়ি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বারাইহাট চেয়ারম্যান পাড়া গ্রামে। বেবেকার স্বামীর নাম মোস্তাফিজুর রহমান। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে দুই পান হারান রেবেকা।

সরেজমিনে শুক্রবার বিকেলে চেয়ারম্যান পাড়ায় কথা হয় রেবেকা বেগমের সঙ্গে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ প্রতিবেদকের কাছে সেই দিনের লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, এখনও গা শিউরে ওঠে। সকাল ৯টার দিকে বিকট শব্দে রানা প্লাজা ধসে পড়ে। ঘটনার পর জ্ঞান ছিল না। একদিন পর জ্ঞান আসে। দেখি পায়ের ওপর সিমেন্টের বিম চাপা পড়েছে। তখন চিৎকার করতে থাকলে কয়েকজন উদ্ধারকর্মী কাছে আসেন। কিন্তু শরীরে বিম চাপা থাকায় তখন উদ্ধার করতে পারেননি তারা। এ সময় উদ্ধারকর্মীদের স্বামীর মুঠোফোন নম্বর দিই। আমার স্বামী উদ্ধারকর্মীদের সহায়তায় আমাকে উদ্ধার করেন।

সেখান থেকে উদ্ধার করে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে এক বছর রেবেকাকে চিকিৎসা নিতে হয়। বাম পা কোমর পর্যন্ত ও ডান পা গোড়ালি পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে। এরপর দীর্ঘ আট বছর পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান হয়েছে রেবেকার।

রেবেকা খাতুন জানান, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে তিনি ১০ লাখ টাকা পেয়েছেন। সেটি স্থায়ী আমানত হিসেবে ব্যাংকে রেখেছেন। সেই স্থায়ী আমানতের টাকা থেকে প্রতি মাসে কিছু টাকা পায়। তা দিয়ে কোনমতে সংসার চলছে। দেখাশুনার জন্য তার স্বামী বাইরে কাজ করতে পারেন না। তাছাড়া বাচ্চাদের সামলানোসহ ঘর-সংসারের সব কাজে সহোযোগিতা করেন রেবেকার স্বামী।

জানতে চাইলে রেবেকার স্বামী মোস্তাফিজুর বলেন, এখন আর আমাদের কেউ খোঁজ রাখে না। রেবেকার পায়ের একটি হাড় বাড়তি হওয়ায় মাঝে মাঝেই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ডাক্তার খুব তাড়াতাড়ি অপারেশন করতে বলেছেন। কিন্তু টাকার অভাবে অপারেশন করাতে পারছি না।

তিনি আরও জানান, রানা প্লাজা ধসের দুই বছর আগে পছন্দ করে তারা বিয়ে করেন। তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন আর রেবেকা পোশাক কারখানায়। বেশ ভালোই চলছিল তাদের সংসার। এরপর রানা প্লাজা ধসে তাদের সুখের সংসার লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। ওই দুর্ঘটনায় ইট-পাথরের স্তূপে হারিয়ে যান মা চান বানু বেগম। মারা যান দাদি কহিনুর বেগম ও ফুপু রাবেয়া খাতুন।

মোস্তাফিজুর বলেন, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক হিউম্যানিটারিয়ান প্রোগ্রামের আওতায় ৭ লাখ ২১ হাজার টাকা ব্যয়ে বারাই আলাদিপুর ইউনিয়নে ৫ শতাংশ জমির ওপর একটি দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে। এই বাড়িতে রয়েছে দুটি শোয়ার ঘর, একটি কমোডসহ বাথরুম ও একটি কিচেন, সোলার এবং সাপ্লাই পানির ব্যবস্থা। এ ছাড়া ব্র্যাক ২০১৫ সাল থেকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। 

এসপি