কাজে একটু অবসর পেলেই নিচে নেমে আসেন সহকারী পরিচালক। অফিসজুড়ে ঘোরাফেরা আর সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলা তার কাজের যেন অন্যতম একটা প্রধান অংশ। এ ছাড়া কিছুদিন আগেই অফিস পরিদর্শন করে গেছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। যার ফলে সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দালালরা সাধারণত ঢুকতে পারেন না। এ ছাড়া সেবাপ্রার্থীদের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে তিনি বদলি করান আনসার ও পুলিশ সদস্যদেরও। যার ফলে তারাও সচরাচর সাহস পান না অনিয়মের পথে পা বাড়াতে।

তবে অফিসে কে কার কাজ করছেন এটা বোঝা বড় কঠিন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য চা বানিয়ে আপ্যায়ন করছেন অতিথিদের, আর চা বানানোর দায়িত্বে থাকা অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) দিব্যি কম্পিউটারে বসে পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তিদের ছবি তুলছেন ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট (বায়োমেট্রিক) নিচ্ছেন। এ ছাড়া মাঝেমধ্যেই পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তিদের শুনতে হয় সার্ভার না থাকার কথা।

এদিকে অফিসে দালালের আধিপত্য না থাকলেও কিছু কিছু কম্পিউটার কম্পোজ ও অনলাইনের কাজ করা ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ছেন সেবাগ্রহীতারা। তারাই পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তির অনলাইন আবেদন, ব্যাংক বা অনলাইনে টাকা জমা দেওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত আড়াই হাজার টাকায় দায়িত্ব নিচ্ছেন পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের (পুলিশ ভেরিফিকেশন)।

পাসপোর্ট অফিস কম্পাউন্ডে সিটিজেন চার্টারে উল্লেখ আছে পাসপোর্টের নিয়মাবলি। টাকার অঙ্কে উল্লেখ করা হয়েছে, অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে ৪৮ পৃষ্ঠা এবং পাঁচ বছর মেয়াদসহ নিয়মিত পাসপোর্ট করতে ৪ হাজার ২৫ টাকা (বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আবেদনের ক্ষেত্রে ১৫% ভ্যাটসহ) ফি জমা দিতে হবে। এই পাসপোর্ট পেতে ১৫ থেকে ২১ দিন অপেক্ষা করতে হবে। আর জরুরি পাসপোর্ট করতে লাগবে ৬ হাজার ৩২৫ টাকা। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৭ থেকে ১০ দিন। অন্যদিকে ১ থেকে ৩ দিনের মধ্যে অতীব জরুরি পাসপোর্ট পেতে চাইলে দিতে হবে ৮ হাজার ৫০ টাকা। এ ছাড়া ৪৮ পৃষ্ঠার এবং দশ বছর মেয়াদসহ নিয়মিত পাসপোর্ট করতে ৫ হাজার ৭৫০ টাকা লাগবে। এই পাসপোর্ট পেতে অপেক্ষা করতে হবে ১৫ থেকে ২১ দিন। আর ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে জরুরি পাসপোর্ট পেতে চাইলে ফি দিতে হবে ৮ হাজার ৫০ টাকা। এর বাইরে অতীব জরুরি পাসপোর্ট ১ থেকে ৩ দিনের মধ্যে নিতে চাইলে শুধু ফি গুনতে হবে ১০ হাজার ৩৫০ টাকা।

সরকারি চাকরিজীবী যাদের এনওসি, অবসর সনদ (পিআরএল) রয়েছে তারা নিয়মিত ফি জমা দেওয়া সাপেক্ষে জরুরি সুবিধা/জরুরি ফি জমা দেওয়া সাপেক্ষে অতীব জরুরি সুবিধা পাবেন। পাসপোর্ট নবায়নের ক্ষেত্রে সমপরিমাণ ব্যাংক চালান প্রযোজ্য।

কয়েক দিন সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, পাসপোর্ট করতে আসা মানুষের সংখ্যা যেন খুবই কম। গেটসহ কয়েকটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন আনসার ও পুলিশ সদস্য। অফিসজুড়ে অনেকটাই নীরবতা। ভেতরে কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন আবেদন জমা ও ছবি তোলার জন্য। এর মধ্যে বহিরাগত কাউকে দেখা যাচ্ছে না। দীর্ঘসময় অবস্থান করে তেমন কিছু দেখা না গেলেও, দেখা যায় একজন ব্যক্তি মাঝেমধ্যেই এসে পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলছেন। আবার বাইরে গিয়ে হাঁটা চলাফেরা করছেন, প্রধান ফটকের দিকে গিয়েও তাকাচ্ছেন এদিক-সেদিক। বিষয়টি ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদকের নজরে আসতেই নজর রাখা হয় তার ওপর। যাদের সঙ্গে তিনি একটু আগেই কথা বলেছেন, কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেছেন কথা হয় তাদের সঙ্গে। তারা প্রতিবেদককে জানান, ওই ব্যক্তি তাদের কাছে জানতে চেয়েছেন- তারা কখন এসেছেন, কাগজপত্র ঠিক আছে কি না, কেউ টাকা চেয়েছে কি না, হয়রানির শিকার হচ্ছেন কি না, সঙ্গে কেউ এসেছেন কি না এসব তথ্য। সেখান থেকে বাইরে গিয়ে ওই ব্যক্তির বাইরে ঘোরাফেরা সম্পর্কে জানতে চাইলে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা জানান, তিনি এই অফিসের সহকারী পরিচালক।

সেবাগ্রহীতাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন সহকারী পরিচালক মো. জাহিদ ইকবাল   

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আনসার সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিনি বাইরে এসে দেখেন অফিসের ভেতরে কোনো দালাল ঢুকেছে কি না, যদিও কেউ ঢোকেন না। এ ছাড়া কোনো আনসার বা পুলিশ সদস্য কারও কাছ থেকে অনৈতিক কোনো সুবিধা নিচ্ছেন কি না। পাশাপাশি পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে তিনি নিজেই এসে কথা বলেন, সমস্যা জানতে চান।

আনসার সদস্য আরও বলেন, স্যার (সহকারী পরিচালক) প্রতিদিনই অন্তত ৮-১০ বার এভাবে নিচে ও বাইরে এসে ঘোরাফেরা করেন এবং সবার সঙ্গে কথা বলেন। পাশাপাশি রুমে বসে সিসি ক্যামেরাতেও দেখেন। এ ছাড়া পাসপোর্ট করতে আসা কোনো ব্যক্তি যদি কোনো আনসার বা পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন তাহলে তিনি তাকে বদলি করান। যার ফলে কেউ অনিয়ম-দুর্নীতি করে সাহস পান না। এর মাঝেও তো আপনাদের মধ্যে কিছু অনিয়ম হয় এমন প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করতে চান না তিনি।

অন্যদিকে অনুসন্ধানের দ্বিতীয় দিনে ২য় তলায় সহকারী পরিচালকের কার্যালয়ের পাশের কক্ষে যেতেই পরিচয় না দিলেও তারা পরিচয় পেয়ে যান প্রতিবেদকের। এরপর বসতেই চা বানিয়ে নিয়ে আসেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন আনসার সদস্য। তখন প্রতিবেদক জানতে আগ্রহী হন, অফিসে কি কোনো অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) নেই? অনুসন্ধানে জানা যায় নিচতলায় পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তিদের ছবি তোলা ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ার কক্ষে কাজ করেন অফিস সহায়ক সাহেবুর রহমান।

এরপর প্রতিবেদক চলে যান সেই কক্ষে। গিয়ে দেখা যায়, কক্ষটির কম্পিউটার টেবিলে বসে পাসপোর্ট গ্রহীতাদের ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিচ্ছেন অফিসের একমাত্র অফিস সহায়ক সাহেবুর রহমান। সেখানেই কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, তার কাজ মূলত অফিস সহায়কের যে কাজ সেটাই। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে তিনি এই কাজ করছেন। এই কর্মস্থলে এসেছেন প্রায় ৬-৭ মাস হলো। আসার পর থেকেই এটা করছেন তিনি।

অন্যদিকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য হয়েও কেন চা বানিয়ে খাওয়াচ্ছেন বা অফিস সহায়কের কাজ করছেন জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই আনসার সদস্য অফিসে অনেক কিছুই করতে হয় বললেও এর বেশি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অতিরিক্ত ২৫০০ টাকায় পুলিশ ভেরিফিকেশনের দায়িত্ব নেন দোকানদার

শহরের কিছু দোকানদার পুলিশ ভেরিফিকেশনের কথা বলে পাসপোর্ট করতে আসা মানুষদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রত্যেকটা পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা ব্যক্তির কাগজপত্র সঠিক যাচাই-বাছাই করেই ক্লিয়ারেন্স দেয় পুলিশের পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের দায়িত্বে থাকা বিশেষ শাখা। এমনকি যারা দায়িত্ব নেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগও নেই এই শাখাটির। তারা জানেনও না এ সকল কিছু।

সদরের কান্দাপাড়া তারকাটা মিল এলাকার বাসিন্দা সুলতানের মেয়ে আলেয়া খাতুন। আগে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করলেও এখন বাড়িতেই থাকেন। বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা নিয়ে এক প্রতিবেশী জাহাঙ্গীরের সঙ্গে এসেছেন পাসপোর্ট করতে। তাকে নিয়ে প্রথমে গিয়েছিলেন শহরের একটি কম্পিউটারের দোকানে। সেখানেই অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করে তাদের মাধ্যমেই জমা করেন পাসপোর্টের সরকারি ফি। তার সঙ্গে ৫ বছর মেয়াদি ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের সরকারি ফি, অনলাইন আবেদন ও পুলিশ ভেরিফিকেশন বাবদ চুক্তি হয় ৯ হাজার টাকায়।

আলেয়ার সঙ্গে আসা প্রতিবেশী জাহাঙ্গীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ ৯ হাজার টাকা নিয়েছে। তারা বলেছে পুলিশ ফোন দিতেও পারে আবার নাও পারে। ফোন দিলে কথা বলবেন।

ঢাকা পোস্টকে আলেয়া খাতুন বলেন, কম্পিউটারের দোকানদার বলল সবকিছু আমরা করে দিচ্ছি। এমনিতে পুলিশ বিল বা কি যেন করা লাগে সেগুলোতে কোনো খরচ হবে না। তারা বলছে, পুলিশ আপনাকে শুধু ফোন দিতে পারে, আপনি শুধু একটু কথা বলবেন। পুলিশ ভেরিফিকেশন তারাই দেখবে। এর জন্য সবমিলিয়ে ৯ হাজার টাকা দিয়েছি।

আলেয়া ও তার প্রতিবেশীর দেওয়া লোকেশন অনুযায়ী পারভীন মোড় এলাকার কম্পিউটার ভিলেজ নামে দোকানে গিয়ে দোকানটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে আবার গেলেও দোকান মালিককে পাওয়া যায়নি। এরপর মুঠোফোনে কথা হয় দোকান মালিক সায়েমের সঙ্গে।

তবে সায়েম অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি কেন কারও পুলিশ ভেরিফিকেশনের দায়িত্ব নিতে যাব। তারা এগুলো বললে আপনাকে মিথ্যা বলেছে ও ভুল তথ্য দিয়েছে। আলেয়া নামের ওই আবেদনটি আমার এখান থেকেই করা হয়েছে সত্য, তবে আমি তাদের কাছ থেকে ৯ হাজার টাকা নিইনি। আমি অনলাইন আবেদন, কাগজপত্র প্রিন্ট ও অন্যান্য কাজের বিল হিসেবে সরকারি আবেদন ফি’র সঙ্গে এক হাজার টাকা বেশি নিয়েছি। সবমিলিয়ে ৭ হাজার ৩০০ টাকার মতো হবে।

তিনি আরও বলেন, হয়তো কেউ শত্রুতা করে এগুলো বলতে পারে। এ ধরনের কাজ এখানে হয় না।

লোকবল সংকটে পাসপোর্টগ্রহীতাদের ছবি তোলা ও ফিঙ্গারপ্রিন্টের কাজ করছেন অফিস সহায়ক

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহরের মুজিব সড়কের ভাসানী কলেজের বিপরীতে অবস্থিত আল হেরা কম্পিউটার নামে একটি দোকানে পাসপোর্টের যাবতীয় কাজ হয় ও সেখানে চুক্তিতে পাসপোর্ট করে দেওয়ার পাশাপাশি তারাও দায়িত্ব নেন পুলিশ ভেরিফিকেশনের। এরপর যাওয়া হয় সেই দোকানে। গ্রাহক সেজে করতে চাওয়া হয় পাসপোর্ট, নিতে বলা হয় পুলিশ ভেরিফিকেশনের দায়িত্ব।

সেখানে গিয়ে প্রথমে কথা হয় দোকানের কর্মচারী মাহিদুলের সঙ্গে। মাহিদুল বলেন, আবেদন ও ব্যাংক জমাসহ মোট ৬ হাজার টাকা ও নতুন পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য অতিরিক্ত ২৫০০ টাকা লাগবে। এই টাকা দিলে পুলিশ কি আর ফোন দেবে না? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হয়তো ফোন দিতে পারে তবে ফোন দিলেও ভাইয়ের কথা (দোকান মালিক আল আমিন) বললেই হবে। বলে দিবেন সব দায়িত্ব তিনি (আল আমিন) নিয়েছে। বাকি কথা ভাইয়ের (আল আমিন) সঙ্গে বলেন। পুলিশের সঙ্গে বাকি কথা তারাই বলে নিবে বলেও জানায় সে। এ ছাড়া পুরাতন পাসপোর্ট রিনিউ (নবায়ন) এর জন্য অতিরিক্ত ১৫০০ টাকা লাগবে বলেও সে জানায়।

এরপর কথা হয় দোকান মালিক আল আমিনের সঙ্গে। তিনি প্রথমে বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশন নিজেই করা যায়। সঠিকভাবে যদি ফরম পূরণ করে দিই তাহলে এমনিতেই হবে। এরপর তাকে আবারও দায়িত্ব নিতে বলতেই তিনি বলেন, যদি কেউ (পাসপোর্ট হোল্ডার) দায়িত্ব নিতে না চায় তাহলে ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে এক্সট্রা (অতিরিক্ত) ২৫০০ টাকা লাগবে। এটা তো অনেক বেশি জানালে তিনি বলেন, বেশিই তো। তাহলে কী ফোন দেবে না? উত্তরে তিনি বলেন, ফোন তো দেবেই। আমরা তো পারতপক্ষে কাউকে ওই লাইন দিতে চাই না, কিন্তু কেউ যদি কয় দেওয়াই লাগবে (ভেরিফিকেশনের দায়িত্ব) তাহলে তো সেই ব্যবস্থা রাখাই লাগবে। কিছু আলাপের পর যখন বলা হয়, তাহলে কি আপনি তার (পুলিশের) সঙ্গে কথা বলে নেবেন? তখন তিনি বলেন, আমার কথা বলা লাগবে না, অটোমেটিক সিস্টেম হয়ে যাবে। কারও সঙ্গে কথা বলতে হবে না, কাগজই কথা কইবো।

এ ব্যাপারে কথা হয় জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) পরিদর্শক (ডিআইও-১) আব্দুর রহিমের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেকে হয়তো মানুষকে ভুল বুঝিয়ে এসব কিছু বলতে পারে। তবে পুলিশের কাছে যখন পাসপোর্টের ভেরিফিকেশন আসে পুলিশ তখন তার কাগজপত্র ও সবকিছু যাচাই-বাছাই করে হ্যাঁ-না তে রিপোর্ট দেয়।

এক যুগ আগের জেনারেটর, প্রায়ই হয় নষ্ট

এদিকে পাসপোর্ট করতে আসা কয়েক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সার্ভার সমস্যার কারণে কাজ হচ্ছে না, তাই অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এরপর এই সার্ভার সমস্যার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, বিদ্যুৎ না থাকলেই মাঝেমধ্যে এই সার্ভারের সমস্যা দেখা যায়। এর মূল কারণ অফিসটিতে থাকা প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় আগে থাকা জেনারেটর। প্রায়ই এই সমস্যা, সেই সমস্যার কারণে সার্ভিস দিতে পারে না। কোনো না কোনো সমস্যা লেগেই থাকে, প্রতিনিয়তই করতে হয় মেরামত। যার ফলে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সাপ্লাই হয় না। এটাকে মেরামত করিয়েই কোনোরকমে চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

সার্বিক বিষয়ে কথা হয় সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. জাহিদ ইকবালের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার আর অল্প কিছুদিন চাকরি আছে। আমি আমার ক্যারিয়ারে দাগ লাগাতে চাই না। কোনো দালাল এই অফিসে ঢুকতেই পারে না। এমনকি যদি কোনো আনসার বা পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো সেবাপ্রার্থী অভিযোগ তোলেন তদন্ত করে আমি সঙ্গে সঙ্গে তাকে বদলি করানোর জন্য বলি। এই অফিসে কোনো অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, আমি দুই বছর হলো এখানে এসেছি। প্রত্যেকদিন অফিসে কাজের ফাঁকে ফাঁকে অন্তত ৮-১০ বার নিচে গিয়ে সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলি। কারও কোনো সমস্যা আছে কি না জানার চেষ্টা করি। অফিসের ভেতরে কোনো দালাল ঢুকছে কি না, কোনো সদস্য অনিয়ম করছে কি না নজর রাখি। এখন দালালসহ সবাই জেনে গেছে যে এখানে অনিয়ম করার সুযোগ নেই, তাই তারা আর কেউ চেষ্টাও করে না।

জাহিদ ইকবাল বলেন, যখন ঢাকা থেকে কোনো সেবাপ্রার্থীর পাসপোর্ট আবেদনের সমস্যা দেখিয়ে পাঠায় আমি নিজে তাদেরকে তাৎক্ষণিক ফোন দিয়ে অফিসে এসে সমাধান করতে বলি। নাহলে তারা নির্দিষ্ট সময়ে এসে দেখবে পাসপোর্ট হয়নি। সেবার জন্য এসেছি, দায়িত্ব সহকারে সম্মান নিয়ে মানুষকে সেবা দিয়ে যেতে চাই।

অফিস সহায়ককে দিয়ে পাসপোর্টগ্রহীতাদের ছবি তোলা ও আনসার সদস্যকে দিয়ে অফিস সহায়কের কাজ করানোর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, অফিসে জনবল কম। এখানকার চারজন স্টাফ প্রেষণে অন্য জায়গায় আছে। তাই চাপ বেশি থাকলে তারা এই দায়িত্বগুলো পালন করে থাকেন।

সার্ভার সমস্যার ব্যাপারে জাহিদ ইকবাল বলেন, বিদ্যুৎ চলে গেলে অফিসের জেনারেটরের সমস্যার কারণে সার্ভারের সমস্যা হত। তবে এখন আর জেনারেটরের সমস্যা নেই। সদ্যই সেটা একদম ঠিক করা হয়েছে।

এমজেইউ