ছয়দিন কারাভোগের পর গতকাল মঙ্গলবার জামিন শেরপুরের নকলার সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানা। জামিনে মুক্তি পেলেও বর্তমানে আতঙ্কে রয়েছেন তিনি। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না রানা। তার অভিযোগ টাকার বিনিময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) পক্ষ নিয়ে কিছু লোক নানা অপপ্রচার করছে। এদিকে জেলা প্রশাসক শেরপুরের বাইরে থাকায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুক্তাদিরুল আহমেদের (ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক) পরামর্শেই এই সাজা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

শফিউজ্জামান রানা বলেন, শেরপুরের জেলা প্রশাসক সেদিন ঢাকায় ছিলেন। তিনি না থাকায় ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মুক্তাদিরুল সাহেবের সঙ্গে পরামর্শক্রমেই ইউএনও ও এসিল্যান্ড আমাকে সাজা দেয়। তারা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং পুরো জেলার সাংবাদিকদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। আমি কোনো দোষ স্বীকার করিনি। আমার ওপর অন্যায় করা হয়েছে।

রানা আরও বলেন, আমি নকলা উপজেলা নির্বাহী অফিসের নানা অনিয়মের অনুসন্ধানী রিপোর্ট করার জন্য তথ্য চাইলে তারা তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করতে বলেন। একাধিক বিষয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেও তথ্য পাইনি। ডিসি (জেলা প্রশাসক) সাহেবের পরামর্শে ঘটনার দিন ৫ মার্চ তথ্য অধিকার আইনে একটি আবেদন নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসে গেলে, তারা আবেদনের রিসিভ কপি দেয়নি। আবেদনের রিসিভ কপি চাইতে গেলেই আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ইউএনও। তিনি আমাকে ও আমার ছেলেকে চোর বলে অভিহিত করেন। আমি সিসি ক্যামেরার সামনে ছিলাম। সিসি ক্যামেরা দেখলেই এর প্রমাণ পাওয়া যাবে।

এদিকে ঘটনার পর থেকেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজের জন্য তাগিদ দিলেও ঘটনার সাত দিনেও হদিস পাওয়া যায়নি ফুটেজের। ৫ মার্চ ঘটনার পর থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের জন্য একাধিক গণমাধ্যমকর্মী ওই কার্যালয়ে গেলেও তা সরবরাহ করা হয়নি। পরবর্তীতে ১০ মার্চ তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম ঝিনুক সরেজমিনে তদন্তে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজের বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন এবং ঘটনার দিনের প্রমাণক হিসেবে হার্ডডিস্কসহ ডিভিআর সংগ্রহ করেন। ওইদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘটনার বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এসময় তিনি নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া উম্মুল বানিন, সাজা প্রদানকারী সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শিহাবুল আরিফ ও ইউএনওর সিএ শিলা আক্তারসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন। এছাড়া তিনি জেলা পর্যায়ে সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গেও একান্তে কথা বলেন।

এদিকে ঘটনার পর থেকেই শেরপুরসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার সাংবাদিক সংগঠন এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো শুরু করে। সাংবাদিকরা বলেন, একটি দপ্তরে ইউএনও নিজেই বিচারক, তারই অধীনস্থ একজন সাক্ষী, তারা নিজেরা নিজেরা একজন সাংবাদিককে জেল দেওয়াটা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার। সেই সঙ্গে ইউএনও ছয় মাসের জেলের মতো বিচারিক প্রক্রিয়া অবশ্যই তার সিনিয়র কারও সাথে পরামর্শ করেই নিয়েছেন। তিনিও পেশাদারীত্বের পরিচয় দেননি। ইউএনওর বিচার হলে, সেই কর্মকর্তারও বিচার চাই আমরা।
 
এদিকে আজ বুধবার নকলা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরে তথ্য চাইতে গেলেও তারা কোনো তথ্য দেয়নি।    

প্রসঙ্গত, গত ৫ মার্চ শেরপুরের নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া উম্মুল বানিনের কাছে তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চেয়ে সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানা আবেদন করেন। তিনি ওই আবেদনের রিসিভ কপি চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হন ইউএনও। এ সময় তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাংবাদিক রানাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেবুন নাহার সাংবাদিক রানার জামিনের আদেশ দেন। পরে রাতেই রানা শেরপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান।

এমএএস