বাগেরহাটের কচুয়ায় আবহাওয়া জনিত কারণে মারা যাচ্ছে রুই, কাতলা, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের কার্পজাতীয় মাছ। হঠাৎ করে মৎস্য ঘেরের মাছ পানির ওপরে ভেসে উঠতে শুরু করেছে। গেল দুই দিনে কচুয়া উপজেলার চরকাঠি গ্রামের আব্দুল জব্বার শেখের ৭০ মণের বেশি মাছ মারা গেছে। 

এতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন মাছ চাষি। মরে যাওয়া মাছগুলো ঘেরের পাড়েই মাটি চাপা দেওয়া হচ্ছে। মাছের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আশপাশের চাষিরাও।

রোববার (১৭ মার্চ) সকালে আব্দুল জব্বার শেখের ঘেরে গিয়ে দেখা যায়, পানির উপরে বিপুল পরিমাণ মরা মাছ ভেসে আছে। শ্রমিকরা মাছ উঠিয়ে ঘেরের পাড়ে মাটি চাপা দিচ্ছেন। গেল দুই দিনে মাছের মৃত্যু ঠেকাতে নতুন পানি সরবরাহের পাশাপাশি বিভিন্ন ওষুধ (অ্যাকোয়া প্রডাক্ট) ব্যবহার করলেও কোন উপকার হয়নি বলে জানান ঘের চাষির ছেলে আব্দুর রহিম শেখ।

তিনি বলেন, গেল বৃহস্পতিবার থেকে মাছ ভেসে উঠেছে। ভাবছি হয়ত খাবারের জন্য। পরে শুক্রবার সকাল থেকে দেখি প্রচুর পরিমাণ মাছ মরে ভেসে উঠছে। বিভিন্ন খাবারের দোকানির সাথে কথা বলে এনার্জি সী, অক্সিজেন, গ্যাসোনীল, প্রবায়োটিকসহ বিভিন্ন ধরনের এ্যাকোয়া পণ্য ব্যবহার করেছি। তারপরও কোনো কাজ হয়নি। এখনও মারা যাচ্ছে। গেল দুই দিনের ৭০ মণের ওপরে মৃত মাছ উঠিয়ে ফেলেছি।

 

ঘেরের কর্মচারী আব্দুস ছত্তার শেখ বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে জব্বার হুজুরের ঘেরে কাজ করি। কখনও এভাবে মাছ মরতে দেখিনি। দুই দিন ধরে শুধু মরা মাছ উঠাচ্ছি, আর ঘেরের পাড়ে মাটি চাপা দিচ্ছি।

শুধু জব্বার হুজুরের না, এলাকার আরও অনেকের মাছ মারা যাচ্ছে বলে জানা গেছে। হঠাৎ করে মাছ মারা যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এলাকার মাছচাষিরা।

স্থানীয় মিজানুর রহমান বলেন, মূলত আবহাওয়া জনিত সমস্যা ও খালে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় ঘেরের সাদা মাছ মারা যাচ্ছে। এভাবে মাছ মরতে থাকলে চাষিরা বিপদে পড়ে যাবেন। 

মাছ চাষি আব্দুল জব্বার শেখ বলেন, দিনে প্রচুর গরম, রাতে ঠান্ডা হওয়ায় একটা খারাপ আবহাওয়া যাচ্ছে। এর সঙ্গে স্থানীয় খালগুলোতে পানি না থাকায় ঠিকঠাকমত পানিও দেওয়া যাচ্ছে না। এই কারণেই মাছ মারা গেছে। এটাই আমাদের বড় প্রজেক্ট। এখান থেকে বছরে ৬০-৬৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করি। কিন্তু এবার খুব ক্ষতি হয়ে গেল। ৫০ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।

কচুয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার বিশ্বাস বলেন, আবহাওয়া জনিত অর্থ্যাৎ ঠান্ডা-গরম এবং ঘেরের মাটি ও পানি দূষিত হওয়ার কারণে মাছ মারা যাচ্ছে। এই অবস্থায় চাষিদের পানি পরিবর্তন ও মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধির জন্য চুন প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

শেখ আবু তালেব/আরকে