ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকার নির্ধারিত মূল্য ৬৬৪ টাকা ৩৯ পয়সা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন মাংস বিক্রেতারা। সোমবার (১৮ মার্চ) থেকে বিক্রেতারা শহরের সব মাংসের দোকান বন্ধ রেখেছে।

আজ মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) মাংস ব্যবসায়ীরা জেলা প্রশাসকের কাছে এ বিষয়ক স্মারক লিপি প্রদান করবেন। ফলপ্রসু আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান না হলে মাংস বিক্রি বন্ধ রাখবেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সোমবার সকাল থেকে শহরের প্রধান বাজার আনন্দ বাজার, ফারুকি বাজার, মেড্ডা বাজার, মৌড়াইলের বৌ বাজার, কাউতলী বাজারসহ জেলা শহরের অন্তত অর্ধশতাধিক দোকানে গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন মাংস ব্যবসায়ীরা।

এ অবস্থায় বাজারে এসে ক্রেতারা মাংস না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন। মাংসের দাম পুনরায় বিবেচনা না করা পর্যন্ত মাংস বিক্রি বন্ধ থাকবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোমবার সকালে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মাংসের দোকানে লিফলেট বিতরণ করা হয়। লিফলেটে গরুর মাংস ব্যবসায়ীদের ৬৬৪ টাকা ৩৯ পয়সা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করার জন্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়।     

ব্যবসায়ীরা জানান, খামার বা ব্যাপারিদের কাছ থেকে প্রতি কেজি গরুর মাংস চামড়াসহ ক্রয় করতে হচ্ছে ৭২০ টাকা দরে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি মাংস ব্যবসায়ীরা তাই ৭৫০ টাকা দরে বিক্রয় করে। এর থেকে কম দামে মাংস বিক্রি করা সম্ভব নয় তাই নির্দেশনার পর থেকে ব্যবসায়ীরা জেলা শহরের  মাংসের দোকানগুলো বন্ধ রাখেন।

মাংস ব্যবসায়ী জাকির হোসেন ও শামীম বলেন, আমরা জনগণের চাহিদা ও ক্রয় ক্ষমতার কথা চিন্তা করেই মাংস বিক্রি করে থাকি। সরকার আমাদের বাজার দর দিয়েছে ৬৬৪ টাকা ৩৯ পয়সা। এই দরে মাংস বিক্রি করলে আমাদের ব্যবসার লস হবে। তাই আমরা গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছি। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আমাদের মাংস বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

ব্যবসায়ী শাহিন মিয়া বলেন, আমরা লোকসানে ব্যবসা করতে পারব না। সরকার গরুর মাংসের যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেই দামে মাংস বিক্রি করলে আমাদের লোকসান হবে। এভাবে তো আর ব্যবসা সম্ভব না। তাই সোমবার সকাল থেকে আমরা মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছি।
    
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মাংস ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যবসায়ীরা খামারি ও ব্যাপারি থেকে গরু কিনে থাকে। তারা চামড়াসহ গরু কিনে বাজারে জবাই করে থাকেন। এতে ৭২০ টাকার মতো প্রতি কেজিতে দাম পড়ে। এ অবস্থায় সরকার ৬৬৪ টাকা ৩৯ পয়সা নির্ধারণ করেছে। তা আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাজারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। অবশ্যই দাম সমন্বয় করতে হবে। খামারে গরুর দাম কমাতে হবে। দাম পুনরায় নির্ধারণ করতে হবে। অন্যথায় এই মাংসের বাজার বন্ধ রাখা ছাড়া আমাদের উপায় নেই।

শহরে ফারুকী বাজার আসা ক্রেতা রবিউল্লাহ ও মনির মিয়া জানান, তারা বাড়ি থেকে গরুর মাংস কেনার জন্য বাজারে এসেছি। এসে দেখি সব মাংসের দোকান বন্ধ। গরুর মাংস কিনতে না পেরে ফার্মের মুরগি নিয়ে বাসায় যাচ্ছি। রোজা-রমজান মাসে এমনটা আমরা মোটেও প্রত্যাশা করিনি। আশা করি ব্যবসায়ীরা দ্রুত তাদের সমস্যার সমাধান করে দোকানগুলো আবারও চালু করবেন।

এদিকে শহরের ফারুকী বাজারে বাজার দরের লিফলেট বিতরণকালে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মচারী পলাশ মন্ডল বলেন, মহাপরিচালকের কার্যালয়ের নির্দেশনাক্রমে বাজারে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এর বেশি আমার জানা নেই।

আরকে