রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের একটি বাসা থেকে সুমাইয়া আকতার (১২) নামের এক গৃহকর্মী নিখোঁজ হয়েছে। এ বিষয়ে গৃহকর্মীর বাবা আতিকুল ইসলাম (৩৫) শেরেবাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেরেবাংলা নগর অফিসার্স স্টাফ কোয়ার্টারে গৃহকর্তা হেলাল উদ্দিনের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেয় সুমাইয়া। পরে ৩ নভেম্বর সুমাইয়া বাসা থেকে নিখোঁজ হয়। এ নিয়ে হেলাল উদ্দিন শেরেবাংলা নগর থানা একটি জিডি করেন।

আতিকুল ইসলাম মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি হেলাল উদ্দিনের কাছ থেকে শোনার পর গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসেন। পরে তিনিও শেরেবাংলা থানায় জিডি করেন। তার জিডি নম্বর: ৫৯০। তারিখ: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১।

দিনমজুর আতিকুল ইসলামের বাড়ি কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার টলুয়াবাড়ি ইউনিয়নে। তার বাবার নাম নাজিম উদ্দিন। তার স্ত্রীর আছেন ও তিন কন্যাসন্তানের জনক। নিখোঁজ সুমাইয়া সবার মধ্যে বড়। আর হেলাল উদ্দিনের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলায়। তার বাবার নাম মৃত শামসুল হক।

জিডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের নভেম্বরে শেরেবাংলা নগরের অফিসার্স স্টাফ কোয়ার্টারে হেলাল উদ্দিনের বাসায় গৃহকর্মীর কাজের জন্য সুমাইয়াকে পাঠান তারা বাবা আতিকুল। এক মাস পর মেয়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য আতিকুল ফোন করেন। এ সময় গৃহকর্তা হেলাল উদ্দিন জানান, সুমাইয়া কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে পালিয়ে গেছে। এ কথা শুনে আতিকুল ঢাকায় এসে হেলাল উদ্দিনের বাসার উদ্দেশে গেলে তিনি আতিকুলের সঙ্গে দেখা করেননি এবং বাসায় যেতে দেননি। এ বিষয়ে তিনি থানা পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছেন।

এ বিষয়ে আতিকুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার এক চাচাতো বোনের বন্ধু হলেন গৃহকর্তা হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী মাহবুবা আকতার। সেই চাচাতো বোনের মাধ্যমে হেলাল উদ্দিনের বাসায় সুমাইয়াকে গৃহকর্মীর কাজ করার জন্য পাঠাই। আমার মেয়েকে বাড়ি থেকে নিয়ে যান হেলাল উদ্দিনের ভাই জনি। এক মাস পর মেয়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য হেলালকে ফোন দিই। তখন তিনি আমাকে জানান যে আমার মেয়ে বাসা থেকে পালিয়ে গেছে। পরে আমি ঢাকায় এসে শেরেবাংলা থানায় জিডি করি।

আতিকুল অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়ে সুমাইয়ার নিখোঁজের পর হেলাল উদ্দিনকে অনেকবার ফোন করি। কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। আমাকে গালাগালি করেছেন। আমাকে তার বাসায় যেতে দেন না। আমি এসব থানা পুলিশকে জানিয়েছি। হেলালের ভাই জনিও আমাকে গালাগালি করেন। আমি গ্রামের বাড়ি গেলে আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেন তিনি। তিনি আমাকে বলেন আমি নাকি মেয়ে নিয়ে ব্যবসা করি, ধান্দা করে খাই। পরে আমি ভূরুঙ্গামারী থানায় আরেকটি জিডি করি।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে মামুন জনি বলেন, আতিকুল আমাকে ফোন করলে আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি একপর্যায়ে আমাকে গালি দেন। আমিও পরে তাকে গালাগালি করি। তবে তাকে মেরে ফেলার হুমকি বা ধমক দিইনি। আর তার মেয়ে আমার ভাইয়ের বাসা থেকে পালিয়ে গেছে, এতে আমার ভাই হেলালের দায়বদ্ধতা আছে বলে আমি মনে করি না।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে। ঢাকা পোস্টকে তিনি ফোনে বলেন, সুমাইয়া নিখোঁজ হওয়ার পর আমি সঙ্গে সঙ্গে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশকে অবহিত করি এবং এ বিষয়ে একটি জিডি করি। সুমাইয়াকে আমার কন্যাসন্তানসহ বাসায় রেখে বাইরে দিয়ে তালা মেরে আমি ও আমার স্ত্রী কর্মস্থলে যাই। বাসায় এসে দেখি সুমাইয়া নেই। ধারণা করছি সে বাথরুমের ভ্যান্টিলেটর দিয়ে পালিয়ে গেছে। যাওয়ার সময় আমার আলমারির ড্রয়ার থেকে সে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে যায়। তবু আমি সুমাইয়াকে খুঁজে বের করার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। এ নিয়ে থানা পুলিশও কাজ করছে।

আতিকুলের অভিযোগ বিষয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, তিনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমি তাকে গালাগালি করিনি বা ধমক দিইনি। তার মেয়ে হারানো গেছে। তিনি এসব বলতেই পারেন। তবে তিনি আমাকে এ বিষয়ে কোনো সহযোগিতা করছেন না।

জিডির তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল বারেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গৃহকর্মী সুমাইয়ার নিখোঁজের বিষয়ে তার বাবা আতিকুল থানায় একটি জিডি করেছেন। আমরা সারা দেশের থানায় ওয়্যারলেস বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছি। সুমাইয়াকে উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, গৃহকর্তা হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। যেহেতু সুমাইয়া তার বাসা থেকে নিখোঁজ হয়েছে, আতিকুলের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এনএ