ভোলায় বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন হঠাৎ গণমনস্তাত্ত্বিক রোগে আক্রান্ত হয়ে ৩১ জন শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। চিকিৎসাধীন ছাত্র-ছাত্রীরা দ্রুত সুস্থ হবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম চরপাতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকরা জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন জিহাদ নামে একজন ছাত্র হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। ছাত্রদের কাছ থেকে বিষয়টি জানার পর দেখা যায় মুহূর্তের মধ্যেই অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে যায়। প্রথমে ২৬ জন শিক্ষার্থীকে ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে আরও ৫ জন অসুস্থ হয়েপেড়ে। এখন মোট ৩১ জন শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।

পশ্চিম চরপাতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী জিহাদ জানায়, গণিত স্যার আমাদের ক্লাস নিচ্ছেন। হঠাৎ করে বুঝতে পারলাম আমার মাথা ঝিম ঝিম করছে। এমনভাবে মাথা ব্যাথা উঠছে মনে হয়েছে চুলগুলো উঠিয়ে ফেলি। আমার এমন অবস্থা দেখে স্যাররা আমাকে লাইব্রেরিতে নিয়ে যায়। পরে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। জ্ঞান ফিরে দেখি আমি হাসপাতালে।

সিয়াম নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেছে, আমার সঙ্গে একটা ছাত্র হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। তাকে ধরতে গিয়ে একে একে আমরা ২৫/৩০ জনের মতো অসুস্থ হয়ে পড়েছি।

আবু কালাম নামের এক অভিভাবক বলেন, স্কুল থেকে এক স্যার বাড়িতে ফোন দিয়ে বলেছে আমার ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমি খবর পেয়ে স্কুলে গিয়ে দেখি কেউ মাথা থাপ্পড়াচ্ছে আর কেউ অজ্ঞান অবস্থায় আছে। যে ধরে সেই অসুস্থ হয়ে যায়। এখন এটা কি রোগ সেটা তো জানি না।

পশ্চিম চরপাতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আবু সাঈদ বলেন, আমি গণিত ক্লাস নিচ্ছিলাম এসময় হঠাৎ জিহাদ নামে এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে বিষয়টি আমি প্রধান শিক্ষককে জানাই। প্রধান শিক্ষক এসে দেখেন মুহূর্তের মধ্যে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পরবর্তীতে দ্রুত তাদেরকে ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, গণিত ক্লাসে হঠাৎ এক ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমরা বিষয়টি স্বাভাবিক মনে করে তার বাবা মাকে খবর দিয়েছি এবং ওই ছাত্রকে প্রাথমিক সেবা দেই। এর মধ্যেই দেখি যারাই এ ছাত্রকে ধরে সেই একটা চিৎকার দিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। পরবর্তীতে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।

ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তায়েবুর রহমান বলেন, আমাদের হাসপাতালে আজকে একটি স্কুল থেকে বিভিন্ন বয়সী প্রথমে ২৬ জন পরবর্তীতে আরও ৫ জনসহ মোট ৩১ জন শিক্ষার্থী এসে ভর্তি হয়। শ্বাসকষ্টসহ তাদের বিভিন্ন ধরনের সিমটম ছিল। হাসপাতালে ভর্তি হলে আমরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং কাউন্সিলিং করি। আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি ছাত্র-ছাত্রীরা মাস্ক সাইকোজেনিক ইলন্সে নামক রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আমরা চিকিৎসা দেওয়ার পরে এখন তারা অনেকটা সুস্থ এবং আশঙ্কামুক্ত। এ বিষয়ে আতঙ্কের কিছু নেই তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।

এমএএস