গ্রীষ্ম মৌসুমের অন্যতম চাহিদার একটি ফল তরমুজ। এরমধ্যে মাহে রমজান শুরু হওয়ায় তরমুজের চাহিদা অনেক বেড়েছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তার দাম। এতে মৌসুমের শুরুতেই জমে উঠেছে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর এলাকার তরমুজের আড়ত। 

মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরের কয়েকটি আড়তে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে কোটি টাকার তরমুজ। প্রতিদিন ভোর হতে রাত পর্যন্ত এখানে বসে তরমুজ বিক্রির হাট। হাটের পাশেই ধলেশ্বরী নদী অপর পাশে মুন্সীগঞ্জ শহরে প্রবেশের মূল সড়ক হওয়ায় সহজেই নদী ও সড়ক পথে এ স্থানে তরমুজ আনা যায়। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে এখানে জমে উঠে তরমুজের হাট। ক্রেতা বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সারাদিন মুখরিত থাকে পুরো হাট এলাকা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তরমুজ আসে এ হাটে। একটি ট্রাক আড়তে আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে পরে আড়তের শ্রমিক ও ক্রেতা বিক্রেতারা। ট্রাক থেকে নামিয়ে ঝুপড়ি ভরে আড়তে নিয়ে আসেন শ্রমিকরা। নামানোর সময় আকার ভেদে আড়তের সামনে ১০০ থেকে ১৫০টি করে তরমুজ একেক স্থানে স্তূপ করা হয়। পরে সেগুলোকে আকার ভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি করা হয়। 

মুক্তারপুরের আড়তে সবচেয়ে বড় সাইজের তরমুজ ৫০০টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মধ্যম আকারের তরমুজের দাম ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে। এ হাট থেকে মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন হাট-বাজার ছাড়াও পাশের জেলায় তরমুজ কিনে নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। 

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাক ও ট্রলার থেকে শ্রমিকরা নামাতে শুরু করেন তরমুজ ও বাঙ্গি। বিভিন্ন সময়ে তরমুজ চাষি ও ব্যবসায়ীরা ট্রলারে ভরে তরমুজ বাঙ্গি এনে নদীর ঘাটে ভিড়িয়ে রাখেন। পরে তারা এ সমস্ত তরমুজ ও বাঙ্গি ভোর ৬টা হতে রাত ১২টা পর্যন্ত এখানকার আড়তগুলোতে তুলে বিক্রি করতে শুরু করেন। এক ট্রলার তরমুজ বিক্রি করতে অনেকের কয়েক দিনও লেগে যায়। এসব বাঙ্গি-তরমুজ কেনার জন্য মুন্সীগঞ্জ ছাড়াও ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, গাজীপুর থেকেও পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা এখানে আসেন।

আড়ত মালিক সমিতি, ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৬ থেকে ৭ বছর আগে দু-একজন আড়তদার এখানে আড়ত পেতে বসেন। সে সময় দু-চারজন ব্যবসায়ী ও কৃষক তাদের উৎপাদিত বাঙ্গি-তরমুজ নিয়ে আসতেন। তখন ক্রেতা ও বিক্রেতা ছিল খুব কম। তবে গত তিন বছরে পাল্টে গেছে এ চিত্র। ব্যাপকভাবে বেড়েছে বেচাকেনা। বেড়েছে আড়ত ও ক্রেতা-বিক্রেতা। প্রতিদিন বরিশাল, ফরিদপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা থেকে এই হাটে আসে একলাখ পিস তরমুজ যা ভরা মৌসুমে দুই  লাখেরও বেশি তরমুজের সমাগম হয় এই হাটে। মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলাসহ, কুমিল্লা, চাঁদপুর থেকে আসে বাঙ্গি।

এই আড়তে তরমুজ বিক্রি করতে আসা পটুয়াখালী জেলার রাঙাবালি এলাকার কৃষক গোবিন্দ চন্দ্র দাস বলেন, এ বছর তরমুজের চারা রোপণ মৌসুমে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় ২৫ ভাগের মতো চারা গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া তরমুজ আনতে পরিবহন খরচ অনেক বেড়েছে। শ্রমিক সার সবকিছুর দাম বেশি থাকায় আমাদের এ বছর প্রতিটি তরমুজ উৎপাদন করতে ১০০ টাকার মতো খরচ হয়েছে। দাম বেশির ব্যাপারে তিনি বলেন, সবে মাত্র তরমুজ উঠতে শুরু করেছে। সামনে দাম কমে যাবে।

টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বালিগাঁও বাজারের তরমুজ বিক্রেতা বিল্লাল বলেন, আমি প্রতি তিন দিন পর পর এই বাজারে আসি তরমুজ কিনতে। এ বাজারে প্রচুর পরিমাণে তরমুজ উঠে এবং সারাদিন তরমুজ পাওয়া যায়। সব ধরনের সাইজের তরমুজ এখানে সব সময় পাওয়া যাওয়ায় দূর দূরান্ত থেকে পাইকারা এখানে তরমুজ কিনতে আসেন।

মায়ের দোয়া আড়তের মালিক মো. জনি গাজি বলেন, আমাদের এখানে ১০/১২টি আড়তে এ মৌসুমে তরমুজ বিক্রি হয়। এখানে নদী পথে সড়ক পথে উভয় পথে তরমুজ আসে। প্রতিদিন সকাল হতে রাত পর্যন্ত তরমুজের বেচাকেনা চলে। আমি নিজে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করি। 

ব.ম শামীম/এএএ