সরকার নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি না করার সিদ্ধান্তে অটল থেকে টানা তৃতীয় দিনের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সকল বাজারে গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। বুধবারও (২০ মার্চ) এই কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন তারা।

সরেজমিনে শহরের আনন্দবাজার, মেড্ডা বাজার, ফারুকী বাজার, বর্ডার বাজার, কাউতলী বাজার ও বউ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সব মাংসের দোকান বন্ধ রয়েছে। তবে মাংস বিক্রির স্থানে ব্যবসায়ীরা বসে আড্ডা দিচ্ছেন। মাংস কিনতে এসে না পেয়ে ক্রেতারা হতাশ হয়ে বাড়িতে ফিরছেন। 

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে গরুর মাংস বিক্রির দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন মাংস ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতারা। তবে গরুর মাংস আবার কবে থেকে বিক্রি শুরু হবে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। কেনা পড়ে ৭২০ টাকা। কিন্তু সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে ৬৬৪ টাকা। এই দামে বিক্রি করলে লোকসান হবে প্রতি কেজিতে ন্যূনতম ৫৫ টাকা। ৭৫০ টাকা প্রতি কেজি মাংসের মূল্যে রাখার দাবি পূরণ করা না হলে মাংস বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

মেড্ডা বাজারের মাংস বিক্রেতা অহিদ মিয়া বলেন, সোমবার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সকল বাজারে গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ রয়েছে। কারণ সরকারের নির্ধারিত দামে গরুর মাংস বিক্রি করা সম্ভব না৷ সেদিন জেলা প্রশাসকের কাছে আমাদের দাবি বলে এসেছি। তাছাড়া গতকাল জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মরকলিপিও দেওয়া হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, তবে কেউ যদি সরকারি দামে মাংস বিক্রি করতে পারেন অবশ্যই করবেন। আমরা সরকারি দামে মাংস বিক্রি করতে পারবো না। কারণ, আমাদের এর চেয়ে বেশি দামে গরু কিনে আনতে হয়। গরু কিনে দোকান খরচ, কর্মচারী খরচ দিয়ে এই দামে আমরা মাংস বিক্রি করতে পারব না। খামারিদের কাছ থেকে আমরা গরুর দাম দিয়ে কিনে এনে ব্যবসার ক্ষতি করতে পারব না।

একই কথা জানান আরেক ব্যবসায়ী জাকির মিয়া। তিনি বলেন, আমরা ৬৬৪ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা কেজি প্রতি মাংস বিক্রির দাবি জানিয়েছি। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে দাম নির্ধারণ করায় আমরা দোকান বন্ধ রেখেছি। যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ ছাড়া আমরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারব না।

এদিকে রমজান মাসে বাজারে এসে গরুর মাংস কিনতে না পেরে ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মেড্ডা বাজারে মাংস কিনতে আসা ক্রেতা মো. সায়েম জানান, গত তিন দিন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাজারে মাংস বিক্রি বন্ধ রয়েছে। এতে আমরা জনগণ খুব বেশি ভোগান্তির মধ্যে পড়েছি। রমজান মাস হওয়ায় হুজুরদের দাওয়াত করতে হয়; মাংসেরও প্রয়োজন হয়। এমন পরিস্থিতিতে আমরা এখন নিরুপায় হয়ে কয়েকজন বন্ধু মিলে রাজধানী ঢাকার খলিলের কাছ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে মাংস ক্রয় করে নিয়ে এসেছি। আমরা এই সমস্যা দ্রুত সমাধানের দাবি জানাই।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, মাংস ব্যবসায়ী মালিক সমিতির স্মারকলিপি পেয়েছি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া মূল্যে গরুর মাংস বিক্রি করলে তাদের লোকসান হবে। সারা দেশে সরকার নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি হচ্ছে। আশপাশে খোঁজ নিয়ে তাদেরও একই দামে গরুর মাংস বিক্রির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

মাজহারুল করিম অভি/আরএআর