পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলসহ আশপাশের জমিতে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজের চাষ করেছেন উপকূলের কৃষকরা। সড়ক ব্যবস্থার উন্নতি ও বাজারজাতকরণে ভালো সুবিধা থাকায় এখানকার সুস্বাদু ও মিষ্টি তরমুজ চলে যায় সারা দেশে। বৈরী আবহাওয়ায় কিছুটা ক্ষতি হলেও আশানুরূপ বিক্রি হবে বলে মনে করছেন অনেকে। আর তারই ধারাবাহিকতায় চলতি মৌসুমে প্রায় শত কোটি টাকার তরমুজ উৎপাদন হবে বলে আশাবাদী উপজেলা কৃষি বিভাগ। 

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে জানা গেছে, রবি মৌসুমে উপজেলার চরাঞ্চলের বিভিন্ন জমিতে উপযুক্ত আবহাওয়া ও বালু মিশ্রিত মাটি হওয়ায় লালুয়া, কুয়াকাটা, মিঠাগঞ্জ, বালিয়াতলী, চম্পাপুর ও নীলগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১২২৩ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে এ বছর।

তরমুজ চাষে সাফল্য আশায় দিন দিন বাড়ছে এর পরিধি। বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেতের তরমুজই বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। পুরো রমজান মাস জুড়ে ক্ষেতে তরমুজ থাকবে বলে ধারণা কৃষকদের। রবি মৌসুমে বিগত দিনে এ এলাকার অধিকাংশ জমি খালি পড়ে থাকলেও চলতি বছর এখানে তরমুজ চাষ করে আশার আলো দেখছেন কৃষকেরা।

এখানকার মাটি তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে স্থানীয়দের কাছ থেকে ৫ মাসের জন্য প্রতি একর জমি ১০-১৫ হাজার টাকা হারে খাজনায় বর্গা নিয়ে তরমুজের বীজ বপন করেন উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তারা। চীন, আমেরিকা ও বাংলাদেশি ৮ প্রজাতির তরমুজ চাষ করেন এখানকার কৃষকেরা। ১ হাজার ২২৩ হেক্টর জমিতে তিন হাজারের বেশি কৃষক কাজ করছেন বলে ধারণা উপজেলা কৃষি বিভাগের।  

কুয়াকাটার আলীপুরের কৃষক মনির হোসেন জানান, এ বছর ২৫ একর জমিতে তরমুজের চাষ করেছেন। তিনি পিস হিসেবে সম্পূর্ণ ক্ষেত বিক্রি করে দিয়েছেন। প্রায় ৩০ লাখ টাকার মতো খরচ করে সম্পূর্ণ ক্ষেত বিক্রি করেছেন ৩৩ লাখ টাকায়। সঠিক পরিচর্যা করলে তরমুজ চাষ করে সফল হওয়া সম্ভব। তবে তরমুজ গাছ ছত্রাকসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। তাই সঠিক সময়ে কীটনাশক প্রয়োগ করা প্রয়োজন। তবে উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে সহায়তা না পাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন অনেক কৃষক। 

কুয়াকাটার খাজুরা গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ রাসেল আকন এবার প্রায় ১৮ একর জমিতে তরমুজের চাষ করেছেন। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৮ একর জায়গায় তাদের তরমুজ চাষে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। এখন অবধি প্রায় ২৩ লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ৩ থেকে ৫ কেজি ওজনের তরমুজ প্রতি ১০০ পিস ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করি। সর্বোচ্চ ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বড় সাইজের তরমুজগুলি বিক্রি করি।

তরমুজের পাইকার মো. সজীব বলেন, ক্ষেত থেকে তরমুজ কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে নিয়ে যাই আমরা। মোকামে নিয়ে পিস হিসেবেই বিক্রি করি তরমুজ। কী কারণে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করা হয় সে তথ্য জানা নেই তার।

তিনি আরও বলেন, মৌসুমের শুরুতে তরমুজের দাম বেশি ছিল। এ সময় তরমুজ কিনে অল্প কিছু লাভ করতে পেরেছি। বর্তমানে সারাদেশের তরমুজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। যার কারণে তরমুজের দামও একটু কমেছে এবং সামনে আরও দাম কমবে।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপযুক্ত আবহাওয়া ও বালু মিশ্রিত মাটি হওয়ায় উপজেলার লালুয়া, কুয়াকাটা, মিঠাগঞ্জ, চম্পাপুর ও নীলগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১ হাজার ২২৩ হেক্টর জমিতে তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় শত কোটি টাকা। কেজিতে নাকি পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্ষেত থেকে কৃষকরা পিস হিসেবেই তরমুজ বিক্রি করছেন। তবে খুচরো বাজারে গিয়ে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কারণে কেজি দরে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। 

এসএম আলমাস/এএএ