বাবার সঙ্গে হাবিবুল্লাহ খান

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা মেধা তালিকায় দ্বিতীয় হয়েছেন নেত্রকোণার ছেলে হাবিবুল্লাহ খান। তার বাড়ি নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার গোয়াতলা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মো. আবদুল মান্নান খান ও হাবিবা সরকার দম্পতির একমাত্র সন্তান। আবদুল মান্নান খাঁনের চাকরির সুবাদে পরিবারের সবাই থাকেন রাজধানী ঢাকায়।

গতকাল মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত ফলাফলে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় হয়েছেন হাবিবুল্লাহ খাঁন। তিনি রাজধানীর নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। 

যোগাযোগ করা হলে হাবিবুল্লাহ খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসলে ভালো রেজাল্ট করার আলাদা কোনো মন্ত্র আমার জানা নেই। সফলতার চাবিকাঠি হলো পরিশ্রম, একাগ্রতা, সাধনা। এগুলো থাকলে ভালো রেজাল্ট আসবেই। পাশাপাশি আমার ওপর সৃষ্টিকর্তার রহমত ছিল, এটাও সত্যি। 

তিনি বলেন, জানার জন্য পড়তে হবে, কিন্তু মুখস্ত বিদ্যা না। আমরা এখন শুধু মুখস্ত করার জন্য পড়ি, যেটা ঠিক না। আমাদের চর্চা করতে হবে, আরও সৃজনশীল হতে হবে। যেমন একটা অংক একভাবে সমাধান করার পর অন্য উপায়ে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। আমাদের মেধার প্রয়োগ বাড়াতে হবে। আরেকটা ভুল আমরা করি সেটা হলো পরীক্ষার আগের রাতে চাপ নিয়ে পড়াশোনা করা। যেটা আমি করি না। আমার মনে হয় এতে করে ব্রেনে আরও চাপ তৈরি হয়। আমি চেষ্টা করি পরীক্ষার আগে ব্রেন যেন ফ্রেশ থাকে। এতদিন যা পড়েছি সেটাই পরীক্ষার খাতায় লেখার চেষ্টা করি। এতে করে চাপ মুক্ত হয়ে পরীক্ষা দেওয়া যায়। আমরা পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে যাই। যেটা একদম ঠিক না, প্রতিযেগিতা করে ভালো রেজাল্ট করা যায় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রেজাল্ট ভালো হলেও পরবর্তী জীবনে সেটা ইফেক্টিভ হয় না। 

হাবিবুল্লাহ জানান, কলেজে ভর্তির পর থেকেই একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন তিনি। ফলাফলও পেয়েছেন দারুণভাবে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় দ্বিতীয় হয়েছেন। 

হাবিবুল্লাহর বাবা আবদুল মান্নান খান আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। মা হাবিবা সরকার গৃহিণী। 

আবদুল মান্নান খান বলেন, হাবিবুল্লাহর মায়ের ইচ্ছা ছিল ছেলে যেন বুয়েটে চান্স পায়। পড়াশোনা নিয়ে কখনো ছেলেকে চাপ প্রয়োগ করতে দেখিনি। এখন তার মায়ের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। যেটা আমাদের খুব আনন্দ দেয়।

এদিকে হাবিবুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে আইবিএ ভর্তি পরীক্ষায় ৫ম হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও তিনি নেত্রকোণা সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি) ভর্তি পরীক্ষায় ৫ম ও মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজিতে (এমআইএসটি) ৩২তম হয়েছেন।

হাবিবুল্লাহর বাবা জানান, শহীদ বীর উত্তম লেফটেন্যান্ট আনোয়ার গার্লস কলেজে নার্সারিতে ভর্তি হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে হাবিবুল্লাহ।  তারপর ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে ক্লাস সেভেনে মাত্র কয়েক দিন পড়ার সুযোগ পায়। সেখান থেকে আবার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে ক্লাস সেভেনে ভর্তি হয়ে ভালো রেজাল্ট নিয়ে এসএসসি পাস করে। এরপর নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ঢাকা বোর্ডে ২১তম হয়। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত সব পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে বৃত্তি লাভ করেছে হাবিবুল্লাহ।

আবদুল মান্নান খান বলেন, ছোটবেলা থেকেই হাবিবুল্লাহ ভালো ছাত্র। তাই আমি এবং আমার স্ত্রী কেউ তাকে পড়ালেখায় কোনো চাপ প্রয়োগ করিনি। আমরা চাই, আমাদের ছেলে যেন একজন ভালো মনের মানুষ হয়। আর যে পেশাতেই থাকুক না কেন, সে যেন দেশ ও জনগণের সেবা করতে পারে, মুক্তিযুদ্ধের ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে যেন কাজ করে।

আটপাড়া উপজেলার শুনই ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য আবুল হাশেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি মান্নানদের পরিবারের সবাইকে চিনি। তারা সবাই ভালো মানুষ এবং এলাকার সবার সাথেই ভালো সম্পর্ক তাদের। মান্নান পড়াশোনা করতে ঢাকা চলে গেল, চাকরি হলো, এখন ঢাকাতেই থাকে। শুনলাম তার ছেলে হাবিবুল্লাহ নাকি বুয়েটে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। এটা শুনে ভালো লাগছে। কারণ হাবিবুল্লাহর সাথে পরিচয় না থকলেও তার বাবা-চাচা সবাইকে চিনি। এলাকার একটা ছেলে ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছে এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।

চয়ন দেবনাথ মুন্না/আরএআর