বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষায় এবার পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থী সুদীপ্ত পোদ্দার মেধা তালিকায় তৃতীয় হয়েছেন। এতে পরিবার ও কলেজের শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি। তার এমন সাফল্যে কলেজের শিক্ষকরাও উচ্ছ্বসিত। খুশি পরিবারের সবাই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুদীপ্ত পোদ্দারের বাবার পৈতৃক বাড়ি পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার ভবানীপুরের মাশুমদিয়া গ্রামে। তার বাবা প্রবীর কুমার পোদ্দার একজন ব্যবসায়ী। মা মিতু পোদ্দার গৃহিণী। তারা দুই বোন ও এক ভাই।  সুদীপ্তর বাবা পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার মহিলা কলেজ মহল্লায় নিজস্ব বাড়ি বানিয়েছেন। সুদীপ্তর বড় বোন সুর্মিতা পোদ্দার ও ছোট বোন স্বর্ণা পোদ্দার স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। সুদীপ্ত ছোটবেলায় গ্রামের মাহবুব ইনস্টিটিউট নামে একটি কিন্ডারগার্টেন থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর ২০১৩ সালে পাবনা জিলা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন। পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান সুদীপ্ত। এসএসসি ও এইচএসসি দুই পরীক্ষাতেই গোল্ডেন জিপিএ-৫  অর্জন করেন। 

কথা হয় সুদীপ্ত পোদ্দারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। যদিও বাবা -মায়ের  ডাক্তার বানানোর। দুই বোনের অনুপ্রেরণায়  ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পড়াশোনার স্বপ্ন দেখতাম। সেভাবে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনার বিষয়ে ভাবতাম। বোনদের থেকেই পড়ালেখার সব বিষয়ে সাপোর্ট পেয়েছি। এইচএসসি পড়া অবস্থায় কীভাবে বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পাব সে বিষয়ে সব সময় বড় ভাইদের পড়ামর্শ নিয়েছি। সেই অনুযায়ী সেখানে ভর্তির জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। পরিবার ও স্যারদের দিক নির্দেশনা সব সময় মেনে চলতাম। দুই বোনের ইচ্ছাতেই আমি এ অবস্থানে আজকে। 

সুদীপ্ত পোদ্দার বলেন, মুখস্থ পড়াশোনা না করে বুঝে পড়াশোনা করলে সাফল্য পাওয়া সহজ হবে। সেজন্য সবাইকে সেভাবে বুঝে পড়াশোনা করতে হবে। পরিশেষে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। 
 
সুদীপ্তর মেজো বোন স্বর্ণা পোদ্দার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছোটবেলায় আমরা গ্রামে মানুষ হয়েছি। সুদীপ্ত যখন গ্রামের কিন্ডারগার্টেনে পড়াশোনা করত তখন থেকেই খুব মেধাবী ছিল। প্রতিটি ক্লাসে সে প্রথম হতো। আমার বড় বোন সুর্মিতা পোদ্দার তখন পাবনায় থেকে পড়াশোনা করতেন। সুদীপ্তর মেধা দেখে বড় বোনের পরামর্শে পাবনায় পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। বড় বোনই জিলা স্কুলে ভর্তির ফরম উত্তোলন করে তাকে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। প্রথম ভর্তি পরীক্ষাতেই  ভর্তির সুযোগ পায়। এরপর প্রতিটি ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করাসহ প্রথম স্থান অর্জন করে। সে কোনো দিন কারও কাছে প্রাইভেট পড়েনি। নিজের প্রচেষ্টাতেই সে আজকে এমন সাফল্য পেয়েছে। তার এমন সাফল্যে খুব ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে আমাদেরই সাফল্য। সুদীপ্ত বুয়েটে চান্স পেলেও মনে হচ্ছে আমরা পরিবারসহ চান্স পেয়েছি।

সুদীপ্তর বাবা প্রবীর কুমার পোদ্দার বলেন, সুদীপ্ত ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় খুবই আগ্রহী। পড়ালেখার বিষয়ে কোনোদিন তাকে কিছু বলতে হয়নি। নিজে থেকেই যতটুকু পারছে পড়াশোনা করে গেছে। আমার দুই মেয়ে তাকে বেশ সহযোগিতা করেছে। তাদের ইচ্ছাতেই সে পাবনা জিলা স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দেয়। প্রথমবারেই সে জিলা স্কুলে ভর্তির সুযোগ পায়। পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায় সুদীপ্ত। এসএসসি ও এইচএসসি দুই পরীক্ষাতেই গোল্ডেন জিপিএ-৫  অর্জন করে। এবার মেডিকেল কলেজসহ যত জায়গায় ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে, সব জায়গায়ই ভর্তির সুযোগ পেয়েছে সুদীপ্ত। আমরা পরিবারের সবাই বেশ গর্বিত। ছেলে বড় হয়ে দেশের জন্য নিবেদিত হয়ে সেবা করবে। তার থেকে আমি ও আমার দেশের অনেক চাওয়া পাওয়া রয়েছে। ছেলের জন্য সবার আশীর্বাদ কামনা করেন তিনি।

সুদীপ্তর মা মিতু পোদ্দার বলেন, ছেলের পড়াশোনা নিয়ে কখনো আমাদের পরিবারের ভাবতে হয়নি। সে নিজেই নিজের সব বোঝে ও জানে। পড়াশোনাই তার নেশা।  অন্য কিছুর প্রতি তার কোনো মনোনিবেশ নেই বললেই চলে। পোশাকের প্রতিও তার তেমন চাহিদা ছিল না। শুধু পড়াশোনা বুঝতো। সে কঠোর পরিশ্রম করেছে তার ফলও পেয়েছে। আমরা অনেক খুশি।

পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাহবুব সরফরাজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর মেডিকেল কলেজে ৫০ জন শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগের পর এবার বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় আমাদের শিক্ষার্থী সুদীপ্ত তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। এটা কলেজের একক কোনো কৃতিত্ব নয়। তাদের ঠিকমতো অধ্যাবসায়ই এমন সাফল্য এনে দিয়েছে। তারপরও আমাদের শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষাসহ ভালোভাবে টেককেয়ার করতেন। পরিবারের সদস্য ও শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই তারা এমন ভালো করেছে। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে এটাই প্রত্যাশা করি। 

রাকিব হাসনাত/আরএআর