বুধবার (২০ মার্চ) বেলা ১১টা। রোদের মধ্যেই একদল যুবক দাঁড়িয়ে রয়েছেন একটি পুকুরের পাশে। সবার হাতে সুপেয় পানির দাবি নিশ্চিতে লেখা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড। স্থানীয় জনপদে বিশুদ্ধ পানির জন্য বছরজুড়ে এভাবেই আন্দোলন করে আসছেন এই যুবারা।

কখনো প্ল্যাকার্ড হাতে সড়কে, কখনোবা স্মারকলিপি নিয়ে জেলা প্রশাসকের বারান্দায় অথবা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন। সবখানেই এক ও অভিন্ন দাবি তাদের। রাষ্ট্রকেই দিতে হবে সুপেয় পানির নিশ্চয়তা। সুনির্দিষ্ট সুপারিশও রয়েছে তাদের। তিনটি পুকুর খনন করে দিলে মিটবে তাদের পানির কষ্ট। আন্দোলনে অংশ নেওয়া এদের সবার বাড়ি বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়নে।

পরদিন বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) সকালে পেড়ীখালী ইউনিয়নের আড়ুয়াডাঙ্গা গ্রামের ঠাকুর পুকুর পুনঃখনন, সিঙ্গারবুনিয়া গ্রামের কাছারি পুকুর এবং রোমজাইপুর গ্রামে ফোরকানিয়া হাফেজিয়া মাদরাসার পুকুর খননের দাবিতে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা।

এক্টিভিস্তা রামপালের স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাদের এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট। সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে খাবারের জন্য অপরিশোধিত পুকুরের পানি এক টাকা লিটার দরে ক্রয় করছেন। আর গৃহস্থালী ও অন্যান্য কাজের জন্য লবণ পানিই ব্যবহার করতে হচ্ছে তাদের। তাই এই পুকুর তিনটি খনন করে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করলে জনপদের পাঁচ হাজার পরিবারের চাহিদা পূরণ হবে বলে দাবি তাদের।

স্থানীয় আকলিমা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুই-তিন কিলোমিটার হেঁটে পানি আনতে যেতে হয় আমাদের। পানির দাবি জানাতে জানাতে জীবনের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। চোখ থেকে লবণপানি ঝরলেও কখনো মিষ্টিপানি পাইনি।

একই এলাকার আবুল কালাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সুপেয় পানির সমস্যা নিয়ে ভুগছি। অধিকাংশ দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়ে পেটের পীড়ায় ভুগছে। এই গ্রামে চারটি মসজিদ, একটি হাফেজিয়া মাদরাসা, একটি প্রাইমারি স্কুল, একটি বাজার নিয়ে অনেক লোক বসবাস করার পরেও আমরা মিষ্টিপানি থেকে বঞ্চিত।

এদিকে স্বেচ্ছাসেবকদের আন্দোলনে অংশ নিয়েছে স্থানীয়রাও। আন্দোলনে অংশ নেওয়া লতা আক্তার নামের এক নারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক ড্রাম পানি কিনতে ব্যয় হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। রান্না ও খাবারের পানি কিনে খেতে হলে দিনে দেড়শ থেকে দুইশ টাকা প্রয়োজন। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা আমাদের। আয়ের টাকার বড় অংশ দিয়ে যদি পানি কেনাই লাগে তাহলে সংসার চলবে কীভাবে?

পেড়িখালী এলাকার ষাটোর্ধ্ব লাল মোহন। বয়সের ভার ও নানা রোগে চলাফেরা করতে বেশ কষ্ট হয় তার। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, বংশ পরম্পরায় কৃষিকাজ আমাদের পেশা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে লবণ পানিতে ফসল ঠিকমতো হয় না, আবার সাদা মাছও মারা যাচ্ছে, ঠিকমতো পানিও খেতে পারি না আমরা। সব মিলিয়ে লবণে আমাদের জীবন অতিষ্ঠ।

স্বেচ্ছাসেবক মাহফুজ মাঝি বলেন, আমাদের এলাকায় বেশির ভাগ মানুষ দরিদ্র। অনেকের পক্ষে পানি কিনে খাওয়া সম্ভব হয় না। যাদের পক্ষে টাকা দিয়ে পানি ক্রয় করা সম্ভব না তারা টিউবওয়েলের আর্সেনিকযুক্ত পানি দিয়েই দৈনন্দিন কাজ চালান। ফলে বিভিন্ন রোগেও আক্রান্ত হতে হয় তাদের। তাই সুপেয় পানির অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা আন্দোলনে নেমেছি। যতদিন পুকুর খনন করে দাবি মানা না হবে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের দাবির কথা জানিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে পানির সংকট নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করা হবে।

শেখ আবু তালেব/এমজেইউ