কুষ্টিয়া শহরের একটি বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন ২৭ জন বৃদ্ধা মা। অর্থের অভাবে বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ এই অসহায় মায়েদের খাবার, চিকিৎসাসেবা, ওষুধ, পোশাক-পরিচ্ছদসহ প্রয়োজনীয় নানা সুযোগ-সুবিধার যথাযথ ব্যবস্থা করতে পারে না। রমজানেও অনেকটা সাদামাটাভাবে ভাত দিয়ে ইফতার করেন বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দারা। 

গত শুক্রবার (২২ মার্চ) বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মায়েদের ইফতার আয়োজন ও অর্থের অভাবে তাদের কষ্ট নিয়ে ‘রোজায় খাবার সংকটে ভুগছেন বৃদ্ধাশ্রমের ২৭ বৃদ্ধা মা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয় ঢাকা পোস্টে। সংবাদটি প্রকাশের পরপরই বিভিন্ন মানুষের নজরে আসে। এরপর থেকে অনেকেই সহযোগিতা করেছেন এবং সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এতে মহাখুশি বৃদ্ধাশ্রমের মায়েরা। 

এরই প্রেক্ষিতে শনিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে টাঙ্গাইলের হাতেখড়ি স্কুলের চেয়ারম্যান নওশাদ রানা সানভী ১০ হাজার টাকার ছোলা, মুড়ি, সয়াবিন তেল,  খেজুর, বিভিন্ন সবজি, মুরগি, আলু, ডাল, আদা, চাল, মশলাসহ নানা খাদ্যসামগ্রী কিনে দিয়েছেন। একইদিন ‘একটু হাসির জন্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের’ প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক মায়েদের বিভিন্ন ধরনের ফলমূল দিয়ে ইফতার করিয়েছেন। কয়েকজন মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশে সহযোগিতা করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন ও বিভিন্ন ব্যক্তি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এসব সহযোগিতা পেয়ে ও বিভিন্ন ফলমূল দিয়ে ইফতার করতে পেরে বৃদ্ধাশ্রমের সেই মায়েরা মহাখুশি হয়েছেন।

টাঙ্গাইলের হাতেখড়ি স্কুলের চেয়ারম্যান ও গণমাধ্যমকর্মী নওশাদ রানা সানভী বলেন, আজ সকালে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে বৃদ্ধাশ্রমের মায়েদের কষ্টের একটি নিউজ দেখি। তাৎক্ষণিক বিষয়টি খুব ভাবিয়ে তোলে আমাকে। মনে হয় কতভাবেই তো টাকা খরচ করি। আত্মীয়-স্বজনদের ইফতার করালেও তো অনেক খরচ হয়, তাছাড়া আত্মীয়-স্বজন সবাই সামর্থ্যবান। তাদের না খাওয়ালেও চলবে। এতগুলো মা বৃদ্ধাশ্রমে অনাহারে দিনযাপন করছে। রমজান মাসেও তাদের জোটেনি ভালোমন্দ খাবার। তাৎক্ষণিক ঢাকা পোস্টের  টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি অভিজিৎ ঘোষের মাধ্যমে কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলি। পরে তার মাধ্যমে কিছু দিনের খাবার ও ইফতারি আইটেম আমার সাধ্য অনুযায়ী তাদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরে আমি আত্মতৃপ্তি পেয়েছি। ঢাকা পোস্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা।  

‘একটু হাসির জন্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের’ প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, অর্থের অভাবে বৃদ্ধাশ্রমের মায়েদের কষ্ট নিয়ে ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি দেখে আমরা খুবই কষ্ট পাই। পরে খোঁজখবর নিয়ে আমরা তাদের আপেল, আঙ্গুর, তরমুজ, পেঁয়াজু, মুড়ি, ছোলা, শসা, পেয়ারা, কলা, বুন্দিয়া, শরবত ইত্যাদি দিয়ে ইফতার করিয়েছি। তারা খুব খুশি। ইফতার করতে পেরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন মায়েরা।

ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা সাজেদা খাতুন, আয়েশা খাতুন, আমেনা বেগমের মতো ২৭ জন বৃদ্ধা মা কুষ্টিয়া শহরের পূর্ব মজমপুর এলাকার উদয় মা ও শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকেন। 

তারা বলেন, অর্থের অভাবে আমরা খুব কষ্ট করছিলাম। প্রয়োজনীয় ইফতার সামগ্রী কিনতে পারতাম না। আমাদের থাকা, খাওয়াসহ অনেক কষ্ট। ঢাকা পোস্টে আমাদের কষ্ট নিয়ে নিউজ প্রকাশের পর অনেকেই সহযোগিতা করছেন। আজ একটা সংগঠন বিভিন্ন ফলমূল দিয়ে ইফতার করিয়েছে। আরেকজন সবজি, মুরগি, চাল, ডাল, মশলাপাতিসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী কিনে দিয়েছেন। অনেকেই সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এতে আমরা মহাখুশি। ঢাকা পোস্ট ও যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের সবার জন্য শুভ কামনা রইল। 

প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইফতেখার হোসেন মিঠু ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় দুই যুগ আগে আমার মায়ের মৃত্যু হয়। মায়ের মৃত্যুর পরে মায়ের জয়গাটা পূরণ করার জন্য কয়েকজন বৃদ্ধা মাকে নিয়ে উদয় মা ও শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করি। আমরা অনেক কষ্ট করে এই প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছি। আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। রমজানে বৃদ্ধাশ্রমের মায়েরা রোজা রাখেন। অর্থের অভাবে তাদের ইফতার ও সেহরির প্রয়োজনীয় খাবার ঠিকমতো কিনতে পারছিলাম না। অর্থের অভাবে মায়েদের অনেক কষ্ট হয়। এসব কষ্টের সংবাদ ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত হওয়ার পর অনেকেই সহযোগিতা করছেন। কেউ বিকাশে টাকা পাঠিয়েছেন। একজন ১০ হাজার টাকার খাদ্যসামগ্রী কিনে দিয়েছেন। বিভিন্ন ফলমূল দিয়ে একজন আজ ইফতার করিয়েছেন। অনেকেরই সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সহযোগিতা পেয়ে আমরা খুব খুশি। মায়েরাও মহাখুশি। খুবই উপকার হয়েছে। এজন্য ঢাকা পোস্টসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাই বিষয়টি তুলে ধরার জন্য।

রাজু আহমেদ/আরএআর