‘সেবার ব্রতে চাকরি’ এই স্লোগানে শতভাগ মেধা, যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে রাজবাড়ীতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন ২৬ জন তরুণ-তরুণী। এই চাকরি পেতে জনপ্রতি তাদের খরচ হয়েছে মাত্র ১২০ টাকা।

শনিবার (২৩ মার্চ) রাতে রাজবাড়ী পুলিশ লাইনস ড্রিলসেডে টিআরসি নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও রাজবাড়ী পুলিশ সুপার জি.এম আবুল কালাম আজাদ।

এতে ২২ জন ছেলে এবং চারজন মেয়ে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া পাঁচজনকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়েছে। এ সময় চূড়ান্তভাবে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় জেলা পুলিশ। কোনো প্রকার হয়রানি, সুপারিশ এবং ঘুষ ছাড়া পুলিশের সদস্য হতে পেরে খুশিতে আত্মহারা হতদরিদ্র, মধ্যবিত্ত ও কৃষক পরিবারের এসব তরুণ-তরুণী।

এ সময় এক আনন্দঘন মুহূর্ত দেখা গেছে পুলিশ লাইন ড্রিলসেডে। নিজ যোগ্যতা ও মেধায় চাকরির ফলাফল পাওয়া মাত্রই ২৬ জন তরুণ-তরুণী আনন্দে বিমোহিত হয়ে পড়েন। অনেকের নাম ঘোষণার পরপরই দুই চোখ আনন্দ অশ্রুতে ভিজে যায়। অনেকেই চাকরি পেয়ে আনন্দ উল্লাস করেন।

চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পাওয়া হাসিবুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ আমি এতটাই খুশি যে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। আজ চূড়ান্তভাবে ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। আমি মেধাতালিকায় ৫ম হয়েছি। পুলিশের এই চাকরি পেতে আমার কোনো অসৎ উপায় অবলম্বন করতে হয়নি। মাত্র ১২০ টাকা আমার আবেদন করতে লেগেছিল। আমার বাবার স্বপ্ন ছিল আমি পুলিশে চাকরি করবো, দেশের সেবা করবো। আজ আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

এহসানুল হক নামের একজন বলেন, আমি সারাদিন আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করেছিলাম, আল্লাহ আজ আমার কথা শুনেছেন। আমি বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পেয়েছি। আমার কাকা ও মা আমাকে সব সময় সাপোর্ট করেছেন পুলিশের চাকরিতে আসার জন্য। তাদের অনুপ্রেরণাতেই আজ আমি বাংলাদেশ পুলিশের একজন গর্বিত সদস্য হতে পেরেছি। আমার পরিবার আর্থিকভাবে সচ্ছল না। পরিবারকে সচ্ছল করার জন্য ও দেশের সেবা করার জন্যই আমি ডিফেন্সের চাকরি বেছে নিয়েছি।

আঁখি আক্তার নামের তরুণী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিজের যোগ্যতায় আমি আজ এই জায়গায় আসতে পেরেছি। কোনো ঘুষ কিংবা টাকা পয়সা লাগেনি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি আজ খুবই আনন্দিত।

এ বিষয়ে রাজবাড়ী পুলিশ সুপার জি.এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, নিজের যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে আজ প্রাথমিকভাবে ২৬ জন তরুণ-তরুণী ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। যারা আজ নির্বাচিত হয়েছেন তারা সবাই নিজেদের যোগ্যতা ও মেধায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এতে তাদের কোনো যোগাযোগ, লবিং ও ঘুষ বিনিময় করতে হয়নি। তাদের মাত্র আবেদন করতে যে খরচ হয়েছে ১২০ টাকা, সেটিই তাদের খরচ। আশা করছি আজকে যারা পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ পুলিশের নতুন সদস্য হলেন তারা সবাই দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করবে। তাদের জন্য রইলো অনেক শুভ কামনা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিয়োগ বোর্ডের সদস্য গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ লুৎফুল কবির চন্দন, ফরিদপুরের ভাঙ্গা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তালাত মাহমুদ শাহানশাহ, রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মুকিত সরকার, ডিআইও-১ বিপ্লব দত্ত চৌধুরী প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, রাজবাড়ী জেলার কনস্টেবল ২৬ জনের শূন্য পদের বিপরীতে প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং শেষে ১১৭০ জন প্রার্থী শারীরিক মাপ ও শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। শারীরিক মাপ, শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা শেষে ৩৫৬ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৮০ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক (ভাইভা) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তার মধ্যে চূড়ান্তভাবে ২৬ জনকে (২২ জন ছেলে ও ৪ জন মেয়ে) মনোনীত করে রাজবাড়ী জেলা টিআরসি-২০২৪ নিয়োগ বোর্ড ৷ এ সময় অপেক্ষমাণ রাখা হয় আরও ৫ জনকে।

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এমজেইউ