বগুড়ার ধুনটে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় আলামত নষ্টের অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা কৃপা সিন্ধু বালাকে বাদ দিয়ে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে বগুড়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। রোববার (২৪ মার্চ) মামলার একমাত্র আসামি কলেজ শিক্ষক মুরাদুজ্জামানকে অভিযুক্ত করে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

তবে মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা ধুনট থানার তৎকালীন ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে ভিডিও ফুটেজসহ ধর্ষণের আলামত নষ্টের অভিযোগ তুলে তাকে আসামি করার দাবি জানিয়েছিলেন বাদী।

২০২২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে এ ঘটনার তদন্ত শুরু করে পিবিআই। তারা বাদীর তথ্যের ভিত্তিতে ধর্ষণ মামলায় জব্দ হওয়া তিনটি মোবাইল ফোনসেট ৪টি ল্যাবে ফরেনসিক টেস্টে পাঠান। কিন্তু পরীক্ষায় ভিডিও ডিলিট করার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন বগুড়া পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী এহসানুল কবির। অভিযোগপত্রে ওসি কৃপা সিন্ধু বালার নাম না বাদ গেলেও তার বিরুদ্ধে পুলিশের বিভাগীয় তদন্ত চলছে।

রোববার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বগুড়া পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী এহসানুল কবির।

পিবিআই জানায়, ২০২২ সালের ১২ মে ওই স্কুলছাত্রীর মা ধুনট থানায় মামলা করেন। মামলায় একই উপজেলার শৈলমারী গ্রামের কলেজ শিক্ষক মুরাদুজ্জামানকে আসামি করা হয়। মামলায় উল্লেখ করা হয়, বাদীর বাড়ির নিচতলার উত্তরপাশের ফ্ল্যাটে মুরাদ ভাড়া থাকতেন। মামলার বাদী এবং তার স্বামী স্কুলশিক্ষক। এ কারণে তারা কর্মস্থলে গেলে তাদের মেয়েকে বাসায় ডিকে নিয়ে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করতো মুরাদ। গত ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল একইভাবে তার মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করতে গেলে তার চিৎকার শুনে অন্য মেয়ে সেখানে গেলে মুরাদ পালিয়ে যায়। মামলার বাদী অভিযোগ করেন- তার মেয়েকে একাধিকবার ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে মুরাদ। পুলিশ মামলাটি গ্রহণের পর মুরাদকে আটক করে এবং তাকে ওই মামলায় কারাগারে পাঠায়। পরবর্তীতে বাদী অভিযোগ করেন যে মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ওসি কৃপা সিন্ধু বালা আসামির মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ডিলিটসহ আলামত নষ্ট করেছেন। এ কারণে আদালতের নির্দেশে মামলাটি পিবিআই তদন্ত শুরু করে।

তদন্তকালে আসামি মুরাদুজ্জামানকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেন। ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর আদালতের কাছে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। তদন্তে মুরাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সবুজ আলী আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

পাশাপাশি মামলার বাদীর অভিযোগ ছিল প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে ওসি কৃপা সিন্ধু বালা ধর্ষণের আলামত ধ্বংস করেন। তার সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের দায়িত্ব পান পিবিআইয়ের এসপি কাজী এহসানুল কবির। কিন্তু সেই তদন্তে ভিডিও ডিলিটের বিষয়টি প্রমাণের জন্য ফরেনসিক পরীক্ষায় পাঠানো হয় জব্দ হওয়া মোবাইলগুলো। সিআইডি, র‌্যার, ঢাকা ফরেনসিক ল্যাব, কম্পিউটার কাউন্সিলরসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের ফরেনসিক পরীক্ষায় কোনো অশ্লীল ভিডিও বা স্থিরচিত্র ডিলিটের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে পিবিআইয়ের এসপি কাজী এহসানুল কবির বলেন, ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে আমাদের তদন্তের ফরেনসিক পরীক্ষায় কোনো ভিডিও ডিলিটের মতো আলামত ধ্বংসের প্রমাণ মিলেনি। আমিও কখনও বলিনি ধর্ষণের আলামত নষ্টে কৃপা সিন্ধুর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তবে ধর্ষণের মামলাকে প্রভাবিত করার মতো কাজে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। এটা আমাদের বিভাগীয় তদন্ত। এই তদন্ত চলমান আছে।

তবে মামলার বাদী বরাবরই দাবী করে আসছেন, ধর্ষণের প্রমাণ ভিডিওগুলো ওসি কৃপা সিন্ধু বালাই নষ্ট করেন। নষ্ট করার জন্য কৃপা সিন্ধু জব্দকৃত মোবাইল ফোন বেআইনিভাবে নিজের হেফাজতে নিয়ে ওই সময় বগুড়া সদর থানা, ছিলিমপুর ফাঁড়ি, আদমদিঘী থানায় পাঠিয়েছিলেন।

ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর মা বলেন, মামলার শুরু থেকে ওসি কৃপা সিন্ধু বালা আমাদের সঙ্গে অন্যায় করে আসছেন। সঠিক চার্জশিট দেওয়ার জন্য তিনি প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার ঘুষ দাবি করেছিলেন। বিভিন্ন সময়ে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা ঘুষ নেন। এর মধ্যে ২০ হাজার টাকা ওসি কৃপা সিন্ধু নিজেই নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আসামি মুরাদের সঙ্গে আপস করে ধর্ষণের আলামত নষ্ট করেন তিনি। মামলার অভিযোগপত্রে পুলিশ কর্মকর্তা কৃপা সিন্ধু বালাকে আসামি না করার অর্থ তার অপরাধের বিচার থেকে ছাড় দেওয়া। 

আসাফ-উদ-দৌলা নিওন/আরএআর