পটুয়াখালীতে চালকের দ্বায়িত্বহীনতার কারণে অ্যাম্বুলেন্সেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকে রেখেছে এমন কথা ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা চালায়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা ঢাকা কুয়াকাটা মহাসড়কে এসে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। রোববার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর হেতালিয়া বাধঘাট এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। 

ঘণ্টাব্যাপী রাস্তায় বিক্ষোভ চলার কারণে সড়কের প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘটনাস্থলে থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।   

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালী থেকে অ্যাম্বুলেন্স চালক ফাঁকা রাস্তায় হুইসেল বাজিয়ে যাচ্ছিলেন। হেতালিয়া বাধঘাট এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জন মাখন লাল অ্যাম্বুলেন্সে কোনো রোগী না থাকায় তাকে জবাবদিহির আওতায় আনেন। তার  অ্যাম্বুলেন্সের বৈধ কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগ নেন। পরে অ্যাম্বুলেন্সচালক মুমূর্ষু রোগী আনতে যাওয়ার কথা বললে তার ড্রাইভিং লাইসেন্স রেখে তাকে ছাড়া হয় এবং রোগী নিয়ে ফেরার পথে লাইসেন্স ফেরত নেওয়ার কথা জানান। 

কিছুক্ষণ পরে ড্রাইভার রোগী নিয়ে ফেরার পথে ট্রাফিক বক্সের সামনে দাঁড়ায় এবং ট্রাফিক পুলিশকে খুঁজতে থাকেন। অ্যাম্বুলেন্সে মুমূর্ষ রোগী থাকা সত্ত্বেও এভাবেই তিনি ২৫-৩০ মিনিট অপেক্ষা করেন। এ সময় চিকিৎসার উদ্দেশ্যে আসা বেবি বেগম (৫৫) নামের এক মুমূর্ষ রোগী অ্যাম্বুলেন্সেই মৃত্যুবরণ করেন। মৃত বেবি বেগম পটুয়াখালী সদর উপজেলার মরিচবুইয়া ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামের শাহ শহিদুল ইসলামের স্ত্রী।  

পরে স্থানীয়রা জানতে চাইলে ড্রাইভার বলেন, ট্রাফিক সার্জন তাকে দাঁড় করিয়ে রাখায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় দায়িত্বরত জাকির ট্রাফিক সদস্যের ওপর হামলা করে। আহত ট্রাফিক সদস্যকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। 

অ্যাম্বুলেন্স চালক বিজন হাওলাদার বলেন, আমি রোগী আনতে যাওয়ার সময় হুইসেল বাজিয়ে যাচ্ছিলাম তখন মাখনলাল স্যারে আমার লাইসেন্স রাইখা দেয় আর কয় যে যাওয়ার কালে লাইসেন্স লইয়া যাইতে। আমি লাইসেন্স নেওয়ার জন্য দাঁড়ায়ে ছিলাম। আর তখনই রোগী মারা যায়। 

বেবি বেগমের ছেলে মেহেদী বলেন, আমি কলাগাছিয়া থেকে পটুয়াখালী পর্যন্ত আইন্নাও আমার মারে হাসপাতালে নিতে পারিনি। ড্রাইভারকে বার বার অনুরোধ করার পরও তিনি কইছে আমি এহন গেলে পরে লাইসেন্স পামু না। আমি এর বিচার চাই।

হামলার শিকার হওয়া আহত ট্রাফিক সদস্য জাকির বলেন, আজ আমার ও মাখনলাল স্যারের হেতালিয়া বাধঘাট এলাকায় ডিউটি ছিল। আমি মাগরিবের আগ মুহূর্তে বাসায় আসি এবং ইফতার ও মাগরিবের নামাজ শেষ করে আবারও ডিউটিতে যাই। আমি যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাবলিক ‘আইছে’ বলে আমার দিকে দৌড়ে আসে এবং মারধর করে। এসময় তারা আমার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও ভাঙচুর করে। 

পটুয়াখালী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম বলেন, ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে উৎসুক জনতা রাস্তায় এসে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা একজন ট্রাফিক সদস্যের ওপর হামলা চালায় এবং ট্রাফিক বক্স ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি। বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক আছে।

আরকে