‘অনেক আশ্বাসের পরেও যখন আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তখন আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি। মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম স্বাস্থ্যখাতের মূল চালিকাশক্তি ডাক্তাররা আজ রাস্তায় নেমে গেছে। কারণ একটা দেশ যে ডাক্তারদের ওপরে চলে সেই ডাক্তারদের পেটে আজ ক্ষুধা। এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে একজন ডাক্তারকে শুধু তার আবেগ দিয়ে চালাতে পারবেন না। একজন ইন্টার্ন ডাক্তারকে ১৭-১৮ ঘণ্টাও ডিউটি করতে হয়। যদি তার পেটে ক্ষুধা থাকে তাহলে সে কীভাবে চিকিৎসা দেবে। রোগীদের বেডে রেখে আমরা রাস্তায় নেমেছি এটি আমাদের ভালো লাগছে না। কিন্তু আমরা আজ নামতে বাধ্য হয়েছি। আশা করি প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন।’

ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ইসরাত সাহাব তৃষা। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়ানো, বকেয়া ভাতা পরিশোধসহ চার দাবিতে সারাদেশের মতো ময়মনসিংহ মেডিকেলেও কর্মবিরতি পালন করছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। 

সোমবার (২৫ মার্চ) দুপুরে হাসপাতাল গেটের সামনে চার দফা দাবিতে মানববন্ধনে দাঁড়ান তারা।

মানববন্ধনে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা চার দফা দাবি তুলে ধরেন। যার মধ্যে আছে ট্রেইনি চিকিৎসকদের মাসিক ভাতা ৫০ হাজার এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মাসিক ভাতা ৩০ হাজার টাকা করতে হবে। এফসিপিএস, রেসিডেন্ট, ননরেসিডেন্ট চিকিৎসকদের বকেয়া ভাতা পরিশোধ করতে হবে।

দাবির মধ্যে আরও রয়েছে, বিএসএসএমইউর অধীনে ১২টি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের রেসিডেন্ট এবং ননরেসিডেন্ট চিকিৎসকদের ভাতা আবার চালু করতে হবে এবং চিকিৎসক সুরক্ষা আইন সংসদে পাস ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডা. নুসরাত সুলতানা বলেন, আমাদের কিছু দাবি দাওয়া আগে থেকেই ছিল। সেগুলো পূরণের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। আমরা বাধ্য হয়েই দাঁড়িয়েছি। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গেই আমরা কথা বলেছিলাম কিন্তু যখন আমরা দেখলাম যে আমাদের ন্যূনতম যে দাবিগুলো আছে সেগুলোও পূরণ হচ্ছে না তখন আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি। ডাক্তার সমাজ কখনোই চাইবে না যে তাদের চিকিৎসা সেবা না দিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন করতে। কিন্তু আমরা আজ আমাদের পেটের দায়ে বাধ্য হয়েছি। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে আমাদের দেওয়া স্যালারি কিছুই না।

ইন্টার্ন চিকিৎসক আবু রায়হান বলেন, আমরা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আন্দোলন করছি। আমাদেরও দাবি একই, ওই দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছি। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলনে করে যাচ্ছি। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাদের কথা দিয়েছিলেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েটদের ভাতাকে ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার ও ইন্টার্নদের ভাতা ১৫ থেকে ২০ হাজার করা হবে এবং বকেয়া ভাতাকে অচিরেই পরিশোধ করা হবে। নির্বাচনের পর ভাতা দ্বিতীয় দফা বাড়ানো হবে। কিন্তু আমাদের ভাতা বাড়ানো তো দূরের কথা, আমাদের বকেয়া ভাতাই পরিশোধ করা হয়নি। শুধু তাই নয়, ১৫টি প্রতিষ্ঠানের ভাতা পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়ার কারণে আবারও রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।

পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডা. তানভীর মাহতাব বলেন, আমাদের দাবিগুলো যদি পূরণ না হয় তাহলে আমরা আস্তে আস্তে কঠিনতম আন্দোলনের দিকে যাব এবং সারা বাংলাদেশে প্রতিটি হাসপাতালে কর্মবিরতিতে থাকব। আমরা আশা করি এই কঠিন আন্দোলনে যাওয়ার পূর্বেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেন আমাদের দাবি মেনে নেন।

এদিকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক কামরুল হাসান জানান, এ ইউনিটে ইন্টার্ন, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি মিলিয়ে ৯ জন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করেন। তাদের মধ্যে দুজন সরকারি চিকিৎসক। কর্মবিরতি চলায় দুজন বাদে বাকিরা আসেননি। কামরুল হাসান বলেন, তাদের দাবি খুবই যৌক্তিক। তবে কর্মবিরতির কারণে আমরা খুব ঝামেলায় আছি। খুব জরুরি অস্ত্রোপচার ছাড়া কোনো কাজ করা যাচ্ছে না।

উবায়দুল হক/এএএ