চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার খাড়াগোদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হারুন আর রশিদের বাড়িতে মল নিক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে একই বিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এছাড়াও গোবর ও অসংখ্য পটকা ছোড়ার অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক।

গতকাল রোববার (২৪ মার্চ) রাতে সদর উপজেলার খাড়াগোদা গ্রামে শিক্ষক হারুন আর রশিদের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। তিনি খাড়াগোদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক। এ ঘটনায় সোমবার (২৫ মার্চ) থেকে অভিযুক্ত ৯ শিক্ষার্থীকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্লাস থেকে সাসপেন্ড করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ভুক্তভোগী শিক্ষক হারুন আর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল রোববার স্কুল চলাকালে শ্রেণিকক্ষের (ভোকেশনাল ট্রেড) মধ্যে পটকা ফুটানোর শব্দ শুনতে পাই। এ সময় বিদ্যালয়ে উপস্থিত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল মতিন আমাকেসহ তিন শিক্ষককে বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য মৌখিক নির্দেশনা দেন। এরপর আমরা শিক্ষার্থীদের ব্যাগ তল্লাশি করে পটকা পাওয়ায় ৯ শিক্ষার্থীকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির নিকট হাজির করি। এরা দশম ও নবম শ্রেণির একজন করে এবং বাকি ৭ জন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তারা সকলে নিজেদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলে সভাপতি তাদের সাধারণ ক্ষমা করে দেন। এছাড়া প্রায়ই বিদ্যালয় ছুটি হলে মেয়ে শিক্ষার্থীদের গায়ে পটকা ছুড়ে তারা।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার পর রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে ওই ৯ শিক্ষার্থী আমার বাড়িতে কচুপাতায় নিয়ে আসা মানুষের মল ও গোবর নিক্ষেপ করে। এছাড়া অসংখ্য পটকা একসঙ্গে ধরিয়ে আমার বাড়িতে ছুড়লে আমার পরিবার অতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এরপরই আমি স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্প ও আমার বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি জানাই। পরে ওই শিক্ষার্থীরা আবারও তাদের দোষ স্বীকার করেছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাহারুল ইসলাম ওই ৯ শিক্ষার্থীকে কিশোর গ্যাং উল্লেখ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই কিশোর গ্যাং বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল ট্রেড কক্ষে বিকট শব্দে পটকা ফোটায়। এতে বিদ্যালয়ের  ছাত্রীরা অতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পরে নির্দেশনা অনুযায়ী হারুন আর রশিদসহ তিন শিক্ষক অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করে হাজির করেন। তারা ভুল স্বীকার করলে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। এরপরই রাতে শিক্ষক হারুনের বাড়িতে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটায় ওই ৯ শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষক একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সোমবার ৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাঁচ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসলে সভাপতির মৌখিক নির্দেশনা অনুযায়ী তাদেরকে ক্লাসে সাসপেন্ড করা করেছি। পরবর্তী অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত ৯ শিক্ষার্থী ক্লাস করতে পারবে না। আগামীকাল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল মতিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল রোববার আমি বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকাকালে পটকা ফোটানোর ঘটনা ঘটে। আমি তিন শিক্ষককে বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য মৌখিক নির্দেশনা দিলে তারা অভিযুক্ত ৯ শিক্ষার্থীকে আমার সামনে নিয়ে আসেন। তারা ভুল স্বীকার করলে আমি তাদের সাধারণ ক্ষমা করে দিই। এরপরই ওই শিক্ষার্থীদের চার্জ করা শিক্ষক হারুন আর রশিদের বাড়িতে রাতে মল, গোবর, পটকা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটিয়েছে। এটা আসলে ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এ বিষয়ে আমরা আগামীকাল বিদ্যালয়ে একটি সভা করব। এরপর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আফজালুল হক/আরএআর