প্রাকৃতিক নিয়মেই ফুল ফুটে গুটি বাঁধতে শুরু করেছে লিচু। বিগত বছরগুলোর চেয়ে এ বছর তুলনামূলক ভালো মুকুল হয়েছে লিচু গাছে। তবে কৃষক ও চাষির স্বপ্নের লিচুর মুকুল থেকে গুটি ফুটেছে গাছে গাছে। তবে মুকুল ভালো থাকলেও গেল বৃহস্পতিবারের (২০ মার্চ) বৃষ্টিতে লিচুর ফলন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহীতে প্রতিবছর বাড়ছে লিচু চাষ। এ বছর জেলায় লিচুর চাষ বেড়েছে পাঁচ হেক্টর জমিতে। যা গত বছর ছিল ৫২৫ হেক্টর। এ বছর লিচুর চাষ হয়েছে ৫৩০ হেক্টর জমিতে। আর ২০২০ সালে মৌসুমে লিচুর চাষ হয়েছিল ৫০০ হেক্টর ও ২০২১ সালে মৌসুমে ৫১৯ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছিল। গেল তিন বছরে জেলায় লিচু চাষের জমি বেড়েছে ১১ হেক্টর। 

সরেজমিনে জেলায় পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের কয়েকটি লিচু বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, ভালো ফলনের আশায় চাষিরা লিচুর পরিচর্যা করছেন। পোকামাকড় দমনে বাগানের লিচু গাছগুলোতে কীটনাশক স্প্রে করতে দেখা গেছে। এছাড়া বেশিরভাগ লিচু গাছের মুকুলের ফুল ফুটে গিয়ে গুটিতে পরিণত হয়েছে। মুকুলের মম গন্ধে বাগানজুড়ে এক অন্যরকম পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। 

জানা গেছে, অঞ্চলের ৯টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লিচুর আবাদ হয় পবা, বাগমারা, তানোর, মোহনপুর, পুঠিয়া ও সদরে মতিহার থানা এলাকায়। বাকি অন্যান্য উপজেলায় স্বল্প আকারে লিচুর বাগান রয়েছে। তুলনামূলক আমের চেয়ে দাম ভালো পাওয়ায় লিচু চাষে ঝুঁকছেন অনেকে। 

নগরীর বিনোদনপুরের ফল ব্যবসায়ী আবদুস সালাম বলেন, মৌসুমে বাগান ঘুরে ঘুরে আম-লিচু সংগ্রহ করে বিক্রি করেন তিনি। কোনো কোনো সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রাহকের কাছে ফল পাঠিয়ে থাকেন। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার রাজশাহীতে লিচুর বাগান বেশি চোখে পড়ছে তার। তার দাবি রাজশাহীতে বছর বছর লিচু চাষ বাড়ছে। 

তিনি বলেন, আমের চেয়ে তুলনামূলক লিচুর দাম বেশি। তাই লিচু বিক্রি নিয়ে প্রতি বছর বাগান ও লিচু কেনার এক ধরনের প্রস্তুতি রাখতে হয়। এই বছর আছে। তার পরিচর্যা শেষে ভালো দামে বিক্রির আশা আছে। বর্তমানে মুকুল থেকে গুটি হয়েছে, এখনো বলা যাচ্ছে না সর্বশেষ লিচুর পরিস্থিতি কি হয়। 

ফল ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, তারা সরাসরি ফল কেনেন এবং বাগানও কিনে থাকেন। এ বছর তিনি কয়েকটি বাগান মিলে দুই বিঘার সমান জায়গায় ৬৭টি লিচুর গাছ কিনেছেন। বর্তমানে তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে আছে। আকাশ মেঘলা থাকছে, মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। এমন আবহাওয়ার কারণে তার বাগানে লিচুর ভালো মুকুল আছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে লিচুর ভালো ফলন পাওয়া যাবে বলে দিন আশা করেন। 

এ বিষয়ে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বাগানগুলোতে লিচুর ভালো মুকুল এবং গুটি আছে। কিছু দিন আগের লিচুর জন্য কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। সেই সময় লিচুর মুকুলের যে ফুলগুলো ছিল সেগুলো ফুটেছিল। তাই বৃষ্টির ফলে আমের মুকুলের ক্ষতি না হলেও লিচুর মুকুলের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বছর হিসেবে এ মৌসুমে ভালো মুকুল ছিল লিচুর। তবে লিচুর গুটি থেকে দানা না বাঁধা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না ফলন কেমন হবে।

শাহিনুল আশিক/আরকে